মাশরাফিকে অভিযোগকারী সেই নারীকে মারধর, চিকিৎসকদের শোকজ প্রত্যাহার

নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইল সদর হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজাকে অভিযোগকারী সেই নারীকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে আট চিকিৎসক ও দুই মেডিকেল প্যাথোলজিস্টকে করা শোকজপত্র প্রত্যাহার করা হয়েছে।

সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আসাদ-উজ-জামান মুন্সী  বলেন, আটজন চিকিৎসককে শোকজ করার পরে ওই দিন বিকেলে স্থানীয় সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা হাসপাতালে আসেন। পরবর্তীতে সেই শোকজপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন।

হাসপাতালে এক নারীকে (রোগীর দাদী) মারধরের তিনি বিষয়ে বলেন, ওই নারী এক শিশু রোগীর দাদি হন। তাদের ডিসচার্জ করে দিলেও খাবারের বিষয় নিয়ে এক আউটসোর্সিং কর্মীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, শিশু রোগীর দাদি তাকে (আউটসোর্সিং কর্মীকে) মারপিট করেন। একপর্যায়ে আউটসোর্সিংয়ের কর্মীসহ ৪-৫ জন মিলে পাল্টা তাকেও মারপিট করেন।

আরও পড়ুন :যুবকরাও সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছে

তিনি বলেন, আউটসোর্সিং কর্মীকে যদিও ওই নারী আগে মেরেছে, তবুও হাসপাতালে আউটসোর্সিং কর্মী কেন মারপিট করল? এজন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পারভিন নামে ওই আউটসোসিং কর্মীকে প্রত্যাহার করার জন্য বলা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার বাসগ্রামের মিনারুল মোল্লার ১৫ মাসের মেয়ে রোকাইয়া ডায়রিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। শনিবার সকালে নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা সদর হাসপাতালে ঝটিকা অভিযান চালান। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে শুরু করে অফিস কক্ষ ঘুরে দেখেন। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গেলে রোকাইয়ার দাদি তাহমিনা খানম মাশরাফীকে হাসপাতালের নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির কথা তুলে ধরেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সোমবার দুপুরে হাসপাতালের এক আয়া ওয়ার্ডে আসলে তাকে বলি ভাত দাও। তখন ওই আয়া চিৎকার করে বলে তোর নাম নেই, তোরে ভাত দেওয়া যাবে না। তখন আমি বলি যেসব রোগী দুপুরের আগেই বাড়ি চলে গেছে তাদের একজনের খাবার দিলে কী হবে। তখন ওই আয়া বলেন, যেমন কুকুর তেমন মুগুর। এ কথার প্রতিবাদ করলে সে আমার চুলের মুঠি ধরে পায়ের স্যান্ডেল দিয়ে মারছে।’

তিনি বলেন, মাশরাফি হাসপাতালে আসলে আমি তাকে বলেছিলাম হাসপাতালে ময়লা থাকে, ডাক্তাররা ঠিকমতো আসে না, সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। ওষুধ, খাবার দেয় না। এইসব কথা বলার জন্য আমারে তারা জুতাপেটা করে।

উল্লেখ্য, হঠাৎ করে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নড়াইল সদর হাসপাতালে ঝটিকা সফরে যান এমপি মাশরাফি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন না হাসপাতালের অধিকাংশ চিকিৎসকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী। রোগীরা ঠিকমতো খাবার না পাওয়া, ওষুধ না দেওয়া, চিকিৎসক ও মেডিকেল প্যাথোলজিস্টদের সময়মতো হাজির না হওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম দেখতে পান মাশরাফি।

তিনি শিশু ওয়ার্ডে গেলে রোগীরা তার কাছে অভিযোগে জানান, শুক্রবার রাতে ১৭ জনের জায়গায় তিনজনের মিল দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসক-নার্সরা ঠিকমতো রোগী দেখেন না। টয়লেট অপরিষ্কার থাকে। রোগীদের খাবারের নানা অনিয়ম শুনে মাশরাফি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হাসপাতালের এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বিকেলের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দেন সংসদ সদস্য মাশরাফি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top