হারুন-অর রশিদ: পরিকল্পনা ছিল বাণিজ্যিকভাবে একটি মনোমুগ্ধকর আধুনিক পিকনিক স্পট গড়ে তোলার। সে অনুযায়ী কাজও চলছিল। লাগানো হয়েছিল সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে খুলনার পাইকগাছা পৌরসভার মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীরের এই প্রকল্প হয়ে পড়ে অসমাপ্ত।
তবে গাছগুলো ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে যেন ঘনজঙ্গল হয়ে উঠেছে। আর সেখানে আশ্রয় নিয়েছে বক, ঘুঘু ও শালিকের দল। তাদের দেখাদেখি আরও অনেক প্রজাতির পাখিও ঠাঁই নিয়েছে সেখানে। এখন সকাল আর সন্ধ্যায় এই এলাকা পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। স্থানীয় ভাষায় এটি হয়ে উঠেছে পাখিদের ‘বাদাল’ অর্থাৎ, আশ্রয়স্থল।
সরেজমিন এলাকা ঘুরে ও পৌর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার শিবসা সেতুর দক্ষিণ পাড়ে সংযোগ সড়কের পাশে ২০০ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে এ পিকনিক স্পট বানাতে চেয়েছিলেন মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর। শিবসা নদীতীরের এই এলাকার আশপাশে এখনও তেমন জনবসতি গড়ে ওঠেনি। প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে শত শত লোনা পানির চিংড়ি ঘের। এর মধ্যেই ঘটেছে এই সবুজ বনায়ন। লোনা পানি অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় সুন্দরবনের কেওড়া, বাইন, সুন্দরী, ধোতলসহ নানা প্রজাতির গাছে ভরে উঠেছে ২০০ বিঘা জমি। রয়েছে কয়েকটি বড় পুকুর। বাঁধানো ঘাট। পাখিরা সেখানে নিজেদের ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়ায়।

গাছে আশ্রয় নিচ্ছে বক পাখি। ছবি: প্রতিবেদক।
মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, উদ্দেশ্য ছিল আধুনিক একটি পিকনিক স্পট করব। মানুষ প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘুরবে, সময় কাটাবে। কিন্তু বিশেষ কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। কয়েক বছরের মধ্যে গাছগুলো বেড়ে ওঠায় এটি পাখিদের স্থায়ী আবাস হয়ে উঠেছে। বেড়েছে পাখিপ্রেমীদের ভিড়। নিজের চোখে পাখিদের আনাগোনা ও কলকাকলি দেখে আমিও সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেছি। ঠিক করেছি, পাখিদের জন্যই নতুন কিছু করব।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যার আগে চারদিক থেকে নানা প্রজাতির পাখি আসতে থাকে। পাখিদের কলরবে মুখরিত হয়ে ওঠে এলাকা। তখন এই পথে চলাচলকারী মানুষজন গাড়ি থামিয়ে এই দৃশ্য উপভোগ করেন। অনেক দূর থেকে এখন অনেক পাখিপ্রেমীও আসেন। ছবি তোলেন। বাদালটি ইতোমধ্যেই ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, কেউ যেন পাখিদের কোনো ক্ষতি না করে।
স্থানীয় লস্কর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তুহিন কাগজী বলেন, লোনা পানির আগ্রাসনে গাছগাছালি মরে যাওয়ায় পাখিদের আবাসস্থল সংকুচিত হয়েছে। পাখি থাকলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। এ জন্য পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থলগুলো রক্ষা করাও মানুষের দায়িত্ব।