নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রবর্তন | প্রকাশিতঃ ১৮:২৭, ০৬ নভেম্বর ২০১৯
নরসিংদীর মাধবদীতে নুরালাপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য ফখরুল ইসলাম। এলাকাবাসীর কাছে তিনি পরিচিত সুদী (সুদখোর) হকুল মেম্বার হিসেবে। সুদের ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রায়ই তার নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এলাকায় বিভিন্ন জনের উপর হামলা, মামলাসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন ও বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়াও তিনি নানা অপকর্মের সাথে জড়িত বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। তার এবং তার বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। কেউ মুখ খুললেই তার দ্বারা নানান অত্যাচারের শিকার হতে হয়।
সরেজমিনে ঘুরে সত্যতা পাওয়া গেছে হকুল বাহিনীর অত্যাচারের। সাংবাদিকের কাছে একে একে মুখ খোলেন এলাকাবাসী।
গত ৩০ অক্টোবর বুধবার রাতে সদর উপজেলার নুরালাপুর ইউনিয়নের কান্দাপাড়া এলাকায় কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জন্য হকুল মেম্বারের লোকজনকেই এলাকাবাসী দায়ী করছে। এ ঘটনার এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও আতঙ্ক কাটেনি ভুক্তভোগী পরিবারের।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী জানান, ঘটনার রাতে কান্দাপাড়া এলাকার মানিক মিয়া ও জুলহাস মিয়ার বাড়িসহ উজ্জলের মুদির দোকান ও ছাত্র কল্যাণ সমিতির আসবাবপত্র ভাঙচুর চালিয়ে লুটপাট চালায় হকুল বাহিনী। হামলাকারী ও লুটেরাদের দলে ছিলো হকুলের ছোট ভাই সাগর ও তার দল, একই গ্রামের আহসানউল্লার তিন ছেলে সোহেল, রুবেল, পাবেল, মুস্তাফিজুর রহমানের ছেলে রনি ও জনি, হাবু মিয়ার ছেলে দৌলত বাদশাহ, মতি মিয়ার ছেলে আসিফ, আবুলের ছেলে কাউসারসহ অজ্ঞাত নামা আরো ১০ থেকে ১৫ জন যুবক। এ ঘটনায় সুদী হকুল মেম্বার নিজেই নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে ভুক্তভোগীর স্বজনরা জানায়, গত ৩০ অক্টোবর হকুল মেম্বারের উকিল জামাই রুবেল এর সাথে একই এলাকার মানিকের ভাতিজা শাহিন ও তার ভাই মামুনের রং দেয়ার কাজ নিয়ে নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। পরে ঐদিন সন্ধ্যায় মেম্বারের দলবল নিয়ে এসে মৃত তাইজুলের ছেলে মানিকসহ তার তিন ভাইয়ের বাড়িতে হামলা চালায়। এতে মানিকের ভাতিজা মামুনকে পিটিয়ে আহত করে হকুল বাহিনীর লোকজন। তাদের তান্ডবের পর থেকে বাড়িতে কেউ থাকতে পারছে না এমনকি ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা স্কুলেও যেতে পারছে না। এ খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আসলে হকুল মেম্বারের ভাই সাগর দলবল নিয়ে ভুক্তভোগীদের বাড়িতে পুনরায় ভাঙচুর করে। পরে সোমবার (৪ নভেম্বর) রাতে উজ্জলের মুদি দোকানটি আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হকুল মেম্বার বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। মানিক ও তার বংশের সবাই ডাকাত দলের সদস্য। আমি এ ঘটনার মীমাংসা করতে গেলে মানিক ও মামুন রাম দা নিয়ে আসে। তা দেখে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে আমি ভয়ে পুলিশ ও চেয়ারম্যানকে খবর দেই। তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
নুরালাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফয়সাল ভূঁইয়া জানান, হকুল সুদের ব্যবসা করে ঠিক আছে, তবে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নাই। তার ভয়ে কান্দাপাড়া এলাকায় কেউ আতঙ্কে আছে বলে তা জানা নাই। তিনি গত ৩০ অক্টোবরের ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, কান্দাপাড়া এলাকায় মানিক মিয়ার সাথে দ্বন্দ্ব বাধে ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার ফখরুলের লোকজনের। এঘটনার মীমাংসায় বসলে উভয় পক্ষের মাঝে হাতা-হাতি হয়, এসময় ফখরুল মেম্বারকে রামদা নিয়ে হত্যার উদ্দেশে তেড়ে আসে তাদের প্রতিপক্ষ। তাদের কাছে প্রায় ১১টা রাম দা ছিলো বলে অভিযোগ করে ফখরুল মেম্বার।
পরে ঐদিন রাতে সমঝোতা করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান নিজেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু দুই পক্ষের উত্তেজনার কারণে বিষয়টি মীমাংসায় জটিলতা দেখা দেয়। এসময় ফখরুলের লোকজন পাশে একটি সমিতি ও একটি টিনের ঘরে আঘাত করে। পরে তাৎক্ষণিক আইনের সহযোগিতা নেয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিবেশ শান্ত করে বলে জানান চেয়ারম্যান।
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান জানান, এ ঘটনায় থানায় দুটি অভিযোগ করা হয়েছে। উভয় অভিযোগের সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।