নতুন ৯ জঙ্গির ছবি নিয়ে নানা প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রবর্তন | প্রকাশিতঃ ১০:৪৫, ০৪ নভেম্বর ২০১৯

আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নতুন প্রধান আবু ইব্রাহিম আল-হাশেমি আল-কুরাইশির আনুগত্য প্রকাশ করে নতুন ৯ উগ্রপন্থির ছবি পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে নিজেদের ‘বাংলার খিলাফতের’ সদস্য বলে দাবি করেছেন তারা। গত শনিবার মধ্যরাতে কথিত আইএসপন্থিদের যোগাযোগের বিভিন্ন চ্যানেল ও হোয়াটসঅ্যাপে ওই ৯ জঙ্গির চারটি ছবি পোস্ট করা হয়। ছবিতে কারও চোখ ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছে না। সবার হাত ওপরে তোলা। সবার পরনে জিন্স প্যান্ট। কারও গায়ে শার্ট, কারও গায়ে পাঞ্জাবি। পেছনে কালো পতাকা। একটি বন বা বাগানের মধ্যে অবস্থান করে ছবি তুলেছেন তারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের ডিসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কথিত আইএস পরিচয় দিয়ে নতুনভাবে নয়জনের কয়েকটি ছবি নজরে এসেছে। বিষয়টির তদন্ত শুরু হয়েছে।’

দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, কোনো উগ্রপন্থি সংগঠনের নেতৃত্বে নতুন কেউ এলে সংগঠনের সদস্যরা তার বাইয়াত নিয়ে থাকেন। এটা একধরনের রেওয়াজ। আইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদির মৃত্যুর পর সংগঠনটির নতুন প্রধান হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়েছে আবু ইব্রাহিম আল-হাশেমি আল-কুরাইশির। আইএসের গণমাধ্যম শাখা আল-ফুরকানে এক অডিওবার্তায় এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এর পরই অনেক দেশের আইএসপন্থি জঙ্গিরা নতুন আমিরের বাইয়াত নেন। সবার আগে তিউনিশিয়ার একটি উগ্রপন্থি সংগঠন নতুন আইএস প্রধানের বাইয়াত নিয়েছেন। এরপর বাইয়াত নেয় বাংলাদেশি খিলাফত পরিচয়ধারী একটি গ্রুপ। তবে বাংলাদেশি খিলাফতের পরিচয়ধারী ৯ জঙ্গির হাতে কোনো অস্ত্র দেখা যায়নি।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, নতুনভাবে প্রকাশিত ছবিটি কোথায় তোলা হয়েছে সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। এই ছবিটি বাংলাদেশ নাকি অন্য কোথাও তোলা হলো, সে ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছেন গোয়েন্দারা।

পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি কথিত আইএস পরিচয় দিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছিল। সেখানে চারজনকে দেখা যায়। পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে নারায়ণগঞ্জের একটি বাসায় বসে কথিত আইএসের নাম দিয়ে ওই ভিডিও করা হয়। এর সঙ্গে জড়িত চারজনের মধ্যে দু’জনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলো- আহ্‌ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন রুমি ও আজমীর। জড়িত অন্য দু’জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। ওই দু’জনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, নতুন নতুন কৌশল নিয়ে জঙ্গিরা তৎপর হওয়ার চেষ্টা করছে। পলাতক ও জামিনে থাকা জঙ্গিদের নিয়ে এখন দুশ্চিন্তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আত্মগোপনে থেকেই তাদের মধ্যে কেউ কেউ পুনরায় সক্রিয় হওয়ার ফন্দি আঁটছে। এসব পলাতক জঙ্গির গ্রেফতারই বড় চ্যালেঞ্জ। আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে দেশের বাইরে গিয়ে যারা এখনও জীবিত রয়েছেন, তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন গোয়েন্দারা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির কারণে দেশে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে মাঝেমধ্যে তাদের সক্রিয় হতে দেখা যায়। চলতি বছর রাজধানীর একাধিক এলাকায় পুলিশের ট্রাফিক বক্সে বোমা রেখে যায় উগ্রপন্থিরা। এরই মধ্যে ওই গ্রুপের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আইএসপন্থি নব্য জেএমবি অনলাইনে নতুন সদস্য রিক্রুট করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে পুলিশি অ্যাকশনের পাশাপাশি উগ্রবাদবিরোধী নানা ধরনের কর্মসূচি সক্রিয়ভাবে চালু রাখাও জরুরি। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারে। এতে জঙ্গিবাদের অভিশাপ থেকে মুক্তি মিলবে।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top