অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রবর্তন | প্রকাশিতঃ ১৯:০৪, ০২ নভেম্বর ২০১৯

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদকে পুকুরে ফেলে দিয়েছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আজ শনিবার দুপুরে পলিটেকনিক ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। সাঁতরে কিনারে এলে আশপাশের কয়েকজন অধ্যক্ষকে পুকুর থেকে উদ্ধার করে।

প্রয়োজনীয় সংখ্যক ক্লাসে উপস্থিত না থাকা এবং মধ্য পর্ব পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ায় দুজন শিক্ষার্থীকে ফাইনাল পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সুযোগ না দেওয়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ওই ঘটনা ঘটায় বলে বলে জানা গেছে।

অধ্যক্ষের অভিযোগ, তাঁকে হত্যা করতেই পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনার পর থেকে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অধ্যক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আজ বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং কম্পিউটার বিভাগের শেষ পর্বের ছাত্র সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েকজন অধ্যক্ষের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে দেখা করে। এ সময় তারা দুজন শিক্ষার্থী যারা নিয়মিত ক্লাস করেনি এবং মধ্য পর্ব পরীক্ষায় অংশ নেয়নি, তাদের ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানায়।

অধ্যক্ষ তাদের কথা শুনে বলেন, কারিগরি শিক্ষায় ৭৫ ভাগ ক্লাস না করলে এবং মধ্য পর্ব পরীক্ষায় অংশ না নিলে ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেই। অধ্যক্ষ তাদের কথায় রাজি না হয়ে বিষয়টি নিয়ে তাদের বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। অধ্যক্ষের কথা শুনে তারা অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসের দলীয় টেন্টে গিয়ে জড়ো হয়।

দুপুর দেড়টার দিকে অধ্যক্ষ জোহরের নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে নিজ কার্যালয়ে ফিরছিলেন। এ সময় কামাল হোসেন সৌরভের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী অধ্যক্ষকে রাস্তা থেকে তুলে পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। অধ্যক্ষ সাঁতার কেটে কিনারে এলে আশপাশের কয়েকজন তাঁকে উদ্ধার করে।

ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কামাল হোসেন সৌরভ কম্পিউটার বিভাগের শেষ পর্বের ছাত্র এবং পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান রিগেনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। এর আগে দুটি পরীক্ষায় রেফার্ড পেয়েছে সে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘কামাল হোসেন সৌরভের নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্র আমার সঙ্গে দেখা করে দুজন ছাত্রের ফরম ফিলাপের সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানায়। আমি এ বিষয়ে বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বললে তারা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।’

অধ্যক্ষ বলেন, ‘কিছু ছাত্র নিয়মিত ক্লাস করে না এবং মধ্য পর্ব পরীক্ষায়ও অংশ নেয় না। অথচ তাদের অভিভাবকরা জানে তাদের সন্তানরা নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। আমার সাথে দেখা করতে আসা ছাত্রদের আমি বলেছিলাম, যাদের ক্লাস এবং মধ্য পর্ব পরীক্ষা নিয়ে সমস্যা আছে, তারা তাদের অভিভাবকদের নিয়ে এলে তাদের ফরম ফিলাপের সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু তারা আমার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে আমাকে মেরে ফেলার জন্যই পুকুরে ফেলে দিয়েছিল।’

‘পুকুরে বাঁশ পোতা ছিল। আমি ধারালো সেই বাঁশে পড়ে গেলে কিংবা সাঁতার না জানলে আজ হয়তো মরেই যেতাম।’ বলছিলেন অধ্যক্ষ  ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ।

রাজশাহী পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ রহমান এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ঘটনার সময় শহরের বাইরে ছিলেন দাবি করে রাজশাহী পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রিগেন বলেন, ‘মোবাইল ফোনে ঘটনা শোনার পর পরই আমি দলীয় নেতাকর্মীদের অধ্যক্ষের কাছে পাঠিয়েছিলাম। তারা গিয়ে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আমরা অধ্যক্ষকে বলেছি। আর সিসিটিভির ফুটেজ দেখে এবং তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অভিযুক্ত কামাল হোসেন সৌরভ তার ঘনিষ্ট হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত, এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিগেন বলেন, ‘আমি যেহেতু পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সেখানকার ছাত্রলীগের এ থেকে জেড পর্যন্ত সব নেতাকর্মীই আমার ঘনিষ্ট।’

জানতে চাইলে চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. গোলাম মোস্তফা জানান, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top