সুন্দরবন এখন সবার জন্য নিরাপদ : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

এস এম সামছুর রহমান, বাগেরহাট প্রতিনিধি, প্রবর্তন | প্রকাশিতঃ ২০:৪৯, ০১ নভেম্বর ২০১৯

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি বলেছেন, বনদস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সুন্দরবন এখন সবার জন্য নিরাপদ। যে কোন মূল্যে পর্যটন সম্ভাবনাময় সুন্দরবনকে আমরা নিরাপদ রাখবো। কেউ দস্যুবৃত্তি করতে চাইলে তার পরিনাম হবে ভয়াবহ। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। তাদের নির্দেশদাতাদেরও বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুক্রবার সকালে বাগেরহাট স্টেডিয়ামে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষনার প্রথম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আত্মসম্পর্ণনকৃত বনদস্যুদের খোঁজ খবর নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়ায়ক্রমে তাদের নামে থাকা মামলাগুলোর আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একের পর এক শেষ করা হবে। শুধুমাত্র খুন ও ধর্ষণ মামলা বাদে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে দস্যুরা এখন বাড়িতে শান্তিতে ঘুমাতে পারে। পরিবারের সাথে এক সাথে থাকতেও পারে। এতে তাদের পরিবারও খুশি।

অনুষ্ঠানে খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামছুল হক টুকু এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক ড. মইনুর রহমান, কোষ্টগার্ডের মহাপরিচালক আশরাফুল ইসলাম, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজ ড. খন্দকার মহিদ উদ্দীন, র‌্যাব-৬ এর কমান্ডিং অফিসার সৈয়দ মোহাম্মদ নুরুস সালেহীন ইউছুফ, বাগেরহাটে জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ, পুলিশ সুপার পংকত চন্দ্র রায়, সাবেক বনদস্যু ডন বাহিনীর প্রধান মেহেদী হাসান ডনসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষনার প্রথম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা আত্মসমর্পণকৃত বনদস্যুদের উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়।

প্রধান অতিথি সুন্দরবনে দস্যুতার উপর নির্মানাধীন চলচিত্র “অপারেশন সুন্দরবন” এর লোগো উম্মোচন করেন। এসময় চলচিত্রটির অভিনয় শিল্পি ও কালাকুশলীরা উপস্থিত ছিলেন।

এক সময়ে সুন্দরবন দাঁপিয়ে বেড়ানো বনদস্যু বাহিনীগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম র‌্যাবের আহবানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণে এগিয়ে আসে মাস্টার বাহিনী প্রধান মোস্তফা শেখ ওরফে কাদের মাস্টারসহ ৯ বনদস্যু। ২০১৫ সালের ৩১ মে বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের ফুয়েল জেটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে ৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দিয়ে তার আত্মসমর্পণ করেন।

এরপর পর্যায়ত্রেমে বনদস্যু মানজার বাহিনী, মজিদ বাহিনী, বড় ভাই বাহিনী, ভাই-ভাই বাহিনী, সুমন বাহিনী, দাদা ভাই বাহিনী, হান্নান বাহিনী, আমির বাহিনী, মুন্না বাহিনী, ছোট শামছু বাহিনী, মানজু বাহিনী, সূর্য বাহিনীসহ ২৬টি বাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পণ করে। সর্বশেষ গত বছরের ১ নভেম্বর বাগেরহাট স্টেডিয়ামে সত্তার বাহিনী, শরিফ বাহিনী, সিদ্দিক বাহিনী, আল-আমিন বাহিনী, আনারুল বাহিনী ও তৈয়ব বাহিনীর বনদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেন।

আত্মসমর্পণকৃত ৩২টি বাহিনী প্রধানসহ সর্বমোট ৩২৮ বনদস্যু সদস্য আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। তারা র‌্যাবের হাতে তুলে দেয় ৪৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩৩ হাজর ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গত বছরের ১ নভেম্বর সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণার পর ম্যানগ্রোভ এই বনে বইছে শান্তির সুবাতাস। বনদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড এই বনের জীববৈচিত্র্য। বন্ধ হয়েছে জেলে-বনজীবীদের মুক্তিপনের দাবীতে অপহরণ ও দেশী-বিদেশি চোরাকারবারীদের চাহিদা মতো হরিণ, বাঘ-কুমির শিকার ও পাচার। পৃথিবীর বৃহত্তম লবণাক্ত জলাভূমির হিং¯্র রয়েল বেঙ্গল টাইগার- কুমির ও কিংকোবরাও হাফছেড়ে বাচেঁ বনদস্যুদেও হাত থেকে।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top