নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রবর্তন | প্রকাশিতঃ ১০:৪৩, ৩১ অক্টোবর ২০১৯
শিক্ষাজীবনে, এমনকি কর্মজীবনেও অনেকে মেসে বা ফ্ল্যাটে থাকেন পরিবার ছাড়া। তাদের জন্য দিনের সহজ, সাশ্রয়ী খাবার তালিকায় থাকে ডিম-পেঁয়াজ বা ডিম ভাজা। কিন্তু এই ডিম আর পেঁয়াজের দাম যে হারে বেড়েছে, তাতে খাবার তালিকায় অনেকেই এখন আর এগুলো রাখতে পারছেন না।
একই পরিস্থিতি স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোতে। গরুর মাংস, মুরগি, মাছ- সবকিছুর দামই তো উঠতির দিকে, স্বস্তি নেই শাক-সবজিতেও। শেষ ভরসা ডিম ভাজাও হয়তো এখন পাতে তুলতে কষ্ট হচ্ছে অনেক পরিবারে।
আপাতদৃষ্টিতে মানুষের আয় বেড়েছে। কিন্তু সবার আয় কি বেড়েছে? আয় যদি বাড়েও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যে হারে বেড়ে চলেছে, তার চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে পরিবারের ব্যয়। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য পেঁয়াজের দাম সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রাখা উচিত।
এক মাস হতে চলল পেঁয়াজের দাম তিনগুণ হয়েছে। এখন বাধ্য হয়েই মধ্যবিত্ত ও নিুবিত্তরা পেঁয়াজ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। তেমনি ডিম খেতেও অনেক হিসাব করতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষকে।
লক্ষণীয়, নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে এভাবে বেড়েই যায়; কিন্তু মানুষের তাতে যেন কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই! বাসভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে চিলিতে, জ্বালানি তেলের ভর্তুকি প্রত্যাহার করায় ইকুয়েডরে এবং হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে ব্যবহৃত ভিওআইপি’র চার্জ বৃদ্ধি করায় লেবাননে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে সাধারণ মানুষ।
সেখানে আমরা প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঘানি টেনে যাচ্ছি। মাস পেরিয়ে গেল, ডিমের দাম ডজনে ৯০ টাকা থেকে বেড়ে ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর রান্নার অন্যতম উপকরণ পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩৫-৪০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে এখন। মানুষের যেন গা-সহা হয়ে গেছে এসবে!
কিন্তু এমনটাই কি হওয়ার কথা ছিল? তাহলে কি ভেবে নেয়া যায় সমাজের সবারই ক্রয়ক্ষমতা অনেক? বাস্তবে তো তেমনটা দেখা যায় না। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার অবৈধ ক্যাসিনোর জুয়া খেলায় জড়িতরা যে অস্বাভাবিক টাকার পাহাড় গড়েছিল, সমাজের সব স্তরের মানুষ তো সেই টাকা পায়নি।
এখনও কষ্টে সংসার চালাতে হয় হাজার হাজার পরিবারকে। সাধারণ মানুষকে এই নাজেহাল অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে সরকারের জরুরি পদক্ষেপ নেয়া উচিত। ডিম ও পেঁয়াজ উৎপাদনে সরকারি তদারকি বাড়ানো উচিত। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ডিম-পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে ফায়দা লুটছে বলে যে গুঞ্জন রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা উচিত।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপন্ন হয় চীনে। দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত। নিজেদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বলে ভারত সম্প্রতি বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। তাই বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ।
সেক্ষেত্রে চীন থেকে কি পেঁয়াজ আমদানি করা যেত না? কেন মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আনা হচ্ছে সেটাও একটা প্রশ্ন। কারণ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার আমাদের বৈরী দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশ ইরান বা তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা কি সম্ভব নয়?
জানা যায়, মিসর থেকেও পেঁয়াজ আনা হচ্ছে। কিন্তু এসব উদ্যোগ নেয়ার পরও কেন পেঁয়াজের দাম কমছে না? আগামী বছর যেন পেঁয়াজের এমন আকাল না দেখা যায়, সে লক্ষ্যে এখনই পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের সার্বিক সহায়তা ও উৎসাহ দেয়া উচিত।