নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রবর্তন | প্রকাশিতঃ ১৯:২২, ৩০ অক্টোবর ২০১৯
নেত্রকোনার আবদুল্লাহ খান (২৫) এ পর্যন্ত ৬ জন শিশুকে অপহরণ করেছেন। কিন্তু কোনো ঘটনাতেই তিনি ধরা পড়েননি। সন্তান হারানোর ভয়ে কেউ মামলাও করেনি আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে।
নেত্রকোনা সদর থানাধীন কুরপাড় এলাকার বাসিন্দা মৃত রিয়াজউদ্দিন খানের ছেলে আবদুল্লাহ খান। মঙ্গলবার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল্লাহ পুলিশকে জানান, ভারতীয় টিভি সিরিজ ক্রাইম পেট্রল দেখেই এ কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। তিনি কখনো কাউকে জোর করে তুলে নেননি। রাজধানীর সদরঘাট, কমলাপুর রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন জায়গায় একাকি ঘুরে বেড়ানো শিশুরাই ছিল তার মূল টার্গেট।
তিনি জানান, ভুল বুঝিয়ে শিশুদেরকে বিভিন্ন পার্কে পার্কে ঘুরানো আর মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করাই ছিল তার কাজ।
তবে আবদুল্লাহর মুক্তিপণের চাহিদার পরিমাণটাও খুব কম। সর্বোচ্চ ২০-২৫ হাজার টাকা। কখনো পারিবারিক অবস্থানুযায়ী ৪-৫ হাজার টাকার বিনিময়েও শিশুদেরকে ছেড়ে দিতেন তিনি। কাউকে মারধরও করেননি কখনো।
সর্বশেষ শরীয়তপুরের সখিপুর থানাধীন চরসেনসাস ইউনিয়নের এক শিশুকে অপহরণের পর দুই দিনের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে গ্রেফতার হন অপহরণকারী আবদুল্লাহ।
মঙ্গলবার অপহৃত ওই শিশুসহ তাকে রাজধানীর সদরঘাট থেকে গ্রেফতার করে সখিপুর থানার এসআই মফিজুর রহমান ও তার সহযোগীরা।
অপহৃত আলিফ (১১) চরসেনসাস ইউনিয়নের পেদা কান্দির বাসিন্দা জামাল উদ্দিন পেদার ছেলে। সে স্থানীয় নরসিংহপুর নূরানী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র।
আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন পেদা বলেন, গত ২৭ অক্টোবর মাদ্রাসায় দিয়ে আসার পর আলিফ নিখোঁজ হয়। আলিফের সঙ্গে তার মায়ের একটি মোবাইল ফোন ছিল। ওই দিন বিকালে অপহরণকারী তার মায়ের মোবাইল ফোন দিয়ে ফোন করে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে আমরা বিকাশের মাধ্যমে সেখানে ৪ হাজার টাকা পাঠাই এবং থানায় অভিযোগ দায়ের করি।
তিনি বলেন, আলিফ মাদ্রাসার পাশের ঘাট থেকে লঞ্চে উঠে রাজধানীর সদরঘাটে চলে গিয়েছিল। আর সদরঘাট থেকেই সে অপহৃত হয়। পরে আমার ছেলেকে উদ্ধার করতে সখিপুর থানা পুলিশ যে পরিমাণ কষ্ট করেছে সে কথা বলে কখনোই শেষ করতে পারব না।
সখিপুর থানার এসআই মফিজুর রহমান বলেন, অভিযোগটি পাওয়ার পর পর আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে অভিযানে বের হই। এ সময় অপহরণকারীর মোবাইল ট্র্যাকিং করে প্রথমে তাকে চাঁদপুর দেখতে পাই, পরে দেখি নারায়ণগঞ্জ, সদরঘাট, মিরপুর, উত্তরা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে সে। আর ট্র্যাকিংয়ের ওই তথ্য অনুযায়ী প্রত্যেক জায়গায় ছুটতে থাকি আমরাও। কখনো লঞ্চে, কখনো বাসে, কখনো স্পিডবোটে আর কখনো সিএনজিতে। কিন্তু অপহরণকারী ছেলেটিকে নিয়ে এত দ্রুতই স্থান পরিবর্তন করছিল যে, আমাদের পক্ষে মুভ করা কষ্ট হয়ে উঠেছিল। সর্বশেষ সদরঘাট এলাকার ওয়েজ ঘাটে তার অবস্থান দেখতে পাই। আর সে অনুযায়ী প্রায় ১ ঘণ্টার প্রচেষ্টা শেষে তাকে ধরতে সক্ষম হই।
অপহরণকারী আবদুল্লাহ খান বলেন, সদরঘাটে আলিফকে দেখার পর বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে তাকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকাতে ঘুরাতে থাকি। অন্যদিকে তার পরিবারের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চেয়েছিলাম। আমি আজ পর্যন্ত কাউকে হত্যা করি নাই। ৪-৫ হাজার টাকা হলেই অনেককে ছেড়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আলিফের বাড়ি থেকে ৪ হাজার টাকা দেয়ার পর আমি তাকে লঞ্চে দিয়ে যাওয়ার জন্য সদরঘাট আসছিলাম। আর তখনই আমি ধরা পড়ে যাই। অনেক আগে আমি গার্ডের চাকরি করতাম, তখনই টিভিতে ক্রাইম পেট্রল দেখে এ কাজ শুরু করি।
ভেদরগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্লোল কুমার দত্ত বলেন, অপহরণের সংবাদটি শোনার পর পরই আমাদের লোকজন অভিযান শুরু করে। পরে অনেক কষ্ট করে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। অপহরণকারীর বিরুদ্ধে শিশুটির বাবা সখিপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।