খুলনাঞ্চলে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে ‘ভিলেজ সুপার মার্কেট’

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রবর্তন | প্রকাশিতঃ ২১:৫২, ২৯ অক্টোবর ২০১৯

এক সময় কৃষকের উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় ফোড়িয়াদের হাত ঘুরে পাইকারদের কাছে পৌঁছাতো। পাইকারদের হাত ঘুরে পৌঁছাত আড়তে। এতে করে স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের নায্য দাম থেকে বঞ্চিত হতো। ফলে বঞ্চিত অনেক কৃষক কৃষি পণ্য উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতো। এ বিষয়টি মাথায় রেখে কৃষকদের ভাগ্যোন্নয়নে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের উপযোগী করে গড়ে তুলতে ও সরাসরি ন্যায্য মূল্যে তৃণমূলের কৃষি পণ্য ক্রয়ের লক্ষে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার টিপনা গ্রামে নির্মাণ করা হয়েছে ‘ভিলেজ সুপার মার্কেট’। ইতিমধ্যেই এ মার্কেটটি স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ব্যপক সাড়া ফেলেছে।

এখন এলাকার কৃষকরা চাইলেই তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি আড়ৎদারের কাছে বিক্রি করতে পারছেন। এতে একদিকে লাভবান হচ্ছেন কৃষক, অন্যদিকে কৃষিখাতে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ভিলেজ সুপার মার্কেটে উৎপাদিত পণ্য সরাসরি ক্রয়-বিক্রয়ের পাশাপাশি উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা থাকায় কৃষকরাই লাভবান হচ্ছেন বেশি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় কৃষকদের সুবিধার্তে ২০১৫ সালে এ মার্কেটটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ইন্টারন্যাশনাল এনজিও ‘সলিডাড়িডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’। ২ একর ১০ শতক জমির উপর নেদারল্যান্ডের অর্থায়নে ১০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মার্কেটটি ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে চালু হয়। মার্কেটে সুযোগ সুবিধার মধ্যে রয়েছে ডিপো, ১০ হাজার লিটার উৎপাদন ক্ষমতার চিলার আইচ ফ্যাক্টরী, মসজিদ, ইলেকট্রিক্যাল ম্যাকানিক্যাল রুম, হর্টি ক্যালচার প্রোসেসিং জোন, হর্টি প্যাকেজিং জোন, একোয়া প্রোসেসিং জোন, একোয়া প্যাকেজিং জোন, একোয়া আড়ৎ, হর্টি আড়ৎ, ব্যাংক, চাইল্ড কেয়ার সেন্টার, ফার্মার ট্রেনিং সেন্টার, অফিস সিকিউরিটি রুম, টয়লেট জোন ও বাউন্ডারী ওয়াল ইত্যাদি। কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের উপযোগী করে গড়ে তোলা ও সরাসরি ন্যায্য মূল্যে তৃণমূলের কৃষি পণ্য ক্রয়ে এ প্রকল্পের আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

ডুমুরিয়ার শোভনা এলাকার কৃষক আবু তালেব, হাবিবুর রহমান, মৃণাল কান্তিসহ এলাকার বাসিন্দারা জানান, মার্কেটটি চালু হওয়ায় কৃষকদের সরাসরি পণ্য বিক্রির অবাধ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করেন এ প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে এবং জীবন-যাত্রার মান উন্নত হবে।

স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জামাল হোসেন বলেন, ভিলেজ সুপার মার্কেটটি স্থানীয় অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। মার্কেট কেন্দ্র করে অন্যন্য ব্যবসা বানিজ্যেরও সম্প্রসারণ ঘটবে বলে মনে করেন তিনি।

মার্কেটের ব্যবস্থাপক কৃষিবীদ মামুন রশিদ জানান, মার্কেটটি কেবল জেলা ভিত্তিক নয়। খুলনা জেলার পাশাপাশি সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নড়াইল ও যশোর এলাকার তৃণমূল কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে সরাসরি কৃষি পণ্য (ফল-মূল, শাক-সবজি, দুধ, মাছ ইত্যাদি) ক্রয় করে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর পৌছে যাবে। বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে। এছাড়া এখানে কৃষকরা নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের উপযোগী হয়ে গড়ে উঠবে। কৃষকরা যাতে কোনভাবেই প্রতারিত ও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়ে বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধি ও স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বরের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ড মনিটরিং করবেন। আর এ মার্কেটে মধ্যস্বত্ব ভোগীদের কোন স্থান নেই। ফলে প্রকৃতপক্ষে কৃষকরাই লাভবান হবে।

উন্নত বিশ্বের কৃষি বাজারের ধারণা নিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো গড়ে ওঠা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও সুবিধা সম্বলিত কৃষিপণ্যের এ বাজারের মাধ্যমে কৃষকের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা দূর হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। এই বাজারে পণ্যের গুণগত মান সুরক্ষা, বাছাই, সংরক্ষণ, উন্নত প্যাকেজিং ও বাজারজাতকরণের ব্যবস্থাগুলো রাখা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। এই বাজার অনেক ব্যবধানই ঘুঁচিয়ে তুলবে বলে আশা করেন সুপার মার্কেটের ব্যবসায়িরা।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top