রশীদ হারুন, প্রবর্তন | প্রকাশিতঃ ২০:৩৭, ২৭ অক্টোবর ২০১৯
মৌলিক অধিকারের মধ্যে বিনোদন অন্যতম। খুলনাবাসী দীর্ঘদিন বিনোদন থেকে দূরে ছিলেন। সে প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে। আন্দোলন সংগ্রামের সুফল পাচ্ছেন খুলনার মানুষ। তাদের দাবী ছিল শিল্পকলা একাডেমি চাই। শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। দৃষ্টি নন্দন করে নির্মাণ করা হয়েছে এই ভবন। আগামী নভেম্বর মাসে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবেন। এই মর্মে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চিঠি প্রদান করেছেন।
সূত্র জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ৮০ শতক জমির ওপর খুলনা বিভাগীয় ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। প্রথমে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২২ কোটি ৭০ লাখ টাকা । পরে তা ২৯ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার টাকা বর্ধিত করা হয়। অর্থায়নে রয়েছে জি ও বি। বাস্তবায়নকারী সংস্থা হচ্ছে শিল্পকলা একাডেমী ও গণপূর্ত বিভাগ-১। চারতলা বিশিষ্ট দৃষ্টি নন্দন এই ভবনটির কাজ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেনজিন কনস্ট্রাকশন, দি আজাদ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইলোরা জয়েন্ট ভেঞ্চার (বিসিটিএই ইলোরা জেভি)। নকশা পরিবর্তন ও অ্যাকুইস্টিক প্রশাসনিক অনুমোদন পেতে কিছুদিন বিলম্ব হয়। ফলে নির্মাণ কাজও পিছিয়ে যায়।
একটি সূত্র জানিয়েছেন, নির্মাণ কাজ শেষে বরাদ্দকৃত টাকার মধ্য হতে ৩ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। কারণ এত টাকার প্রয়োজন নেই। ২০১৭ সালের জুন মাসে কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। মঞ্চ নির্মাণ কাজ করছেন রুটস নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে। এখন চলছে মূল মঞ্চে পর্দা লাগানো, আলোকসজ্জা সজ্জিতকরণ, এসি লাগানো ও সেগুন কাঠের পাটাতন নির্মাণ কাজ। এই কাজ শেষ হলে শুরু হবে চেয়ার লাগানোর কাজ। বৈদ্যুতিক কাজ চলছে। ৪৯৬ বিশিষ্ট আসন হবে । থাকবে মিলনায়তন, প্রশাসনিক ভবন, মহড়া ( শিল্পীদের প্রশিক্ষণ) কক্ষ, সেমিনার কক্ষ, অতিথি কক্ষ, অফিস কক্ষ, লাইব্রেরী, শিক্ষক কক্ষ, আর্ট গ্যালারী, ক্যাফেটরিয়া ও ডাইনিং রুম। শিল্পকলা একাডেমির প্রবেশ পথ একেবারে রুদ্ধ। একটি সরকারি আবাসিক ভবন থাকায় এর কিছুটা সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে। ভবনটি সিরামিক ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ভিতরে সুন্দর একটি পুকুর রয়েছে। রয়েছে ফুল বাগান। দেয়ালে রয়েছে সুন্দরবনের দৃশ্য ও মায়াবী চিত্রল হরিণ ও নানা রকম বাদ্য যন্ত্র। ইতোমধ্যে ৯৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী কাজ কিছু দিনের মধ্যে শেষ হবে। খুলনা শিল্পকলা একাডেমির চার দিকের প্রাচীর একবারে নীচু। বহিরাগতরা নির্বিগ্নে ভিতরে প্রবেশ করে থাকে। এতে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। লোহার প্রাচীরের ওপরে কাটাতার বা নেট দিয়ে আরো নিরাপত্তা জোরদার করা প্রয়োজন। শিল্পকলা একাডেমিতে প্রবেশ রাস্তা চওড়া কম। নেই গাড়ি পাকিং’র ব্যবস্থা। এই ভবনের নান্দনিক রূপ রাস্তা থেকে দেখা যাচ্ছেনা। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে শিল্পকলা একাডেমি ভবনের প্রধান ফটক সংলগ্ন রয়েছে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বাড়ি। এই বাড়ির কারণে অনেকটা অদৃশ্যমান হয়ে গেছে। এখন একটি ভাড়া বাড়িতে শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম চলছে।
নির্মাণ কাজের প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আগামী সপ্তাহর মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়ে যাবে।
মঞ্চ নির্মাণ করার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সম্পূর্ণ সেগুন কাঠ দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এই মঞ্চ। আগামী ১৫ নভেম্বর এর কাজ শেষ হবে।
সাংস্কৃতিক কর্মী ও আব্বাস উদ্দিন একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বাচ্চু বলেন, শিল্পকলা ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় খুলনাবাসীর প্রত্যাশা পূরণ হল। সাংস্কৃতি কর্মীরা আরো সাংস্কৃতি চর্চার সুযোগ পাবেন। সুস্থ ধারার সাংস্কৃতি বিকাশের পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
খুলনা জেলা কালচারাল কর্মকর্তা সুজিত কুমার সাহা বলেন, অল্প দিনের মধ্যে অ্যাকুইস্টিকের কাজসহ সকল কাজ সম্পন্ন হবে। সামান্য কিছু কাজ রয়েছে। তা দ্রুত গতিতে চলছে। এখানে সাংস্কৃতিক চর্চা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা যাবে। তবে আগামী মাসে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে।