নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রবর্তন | প্রকাশিতঃ ০২:৪৬, ২৫ অক্টোবর ২০১৯
দেশের প্রায় ২ কোটি শিশু স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতি বছর শিশুরা কোনো না কোনোভাবে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েডের মতো মারাত্মক জীবাণুবাহিত রোগে ভুগছে।
শুধু পরিষ্কার টয়লেট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।সম্প্রতি ইউনিসেফ পরিচালিত এক গবেষণা থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ৫৬ মিলিয়ন মানুষ অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন রোগে ভুগে।
এর মধ্যে দরিদ্র ২১ মিলিয়ন মানুষ এখনও স্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহার করেন না। আর প্রায় ২০ মিলিয়ন শিশু তাদের স্কুলে স্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহার করতে পারে না। তাছাড়া সারা দেশে শুধু এ কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে প্রায় ২ কোটি শিশু।
শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত স্কুলে শিশুরা হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে একেবারে উদাসীন থাকে। ঘরে বাবা-মাদের সচেতনতার কারণে তারা হাত ধুতে পারে। তাছাড়া গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যকর টয়লেট না থাকায় জীবাণুর সংক্রমণ হয়।
আর বড়দের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকায় তারা এ ধরনের ঝুঁকিতে কিছুটা কম থাকলেও শিশুরা থাকছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। যে কারণে শিশুদের রোগ সম্প্রতি বেড়ে গেছে। শহরে রয়েছে পানিজনিত সমস্যা।
গ্রামাঞ্চলের এ সমস্যা ছাড়াও রাজধানীতে পানিতেও রয়েছে ব্যাপক ঝুঁকি। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের এক গবেষণায় রাজধানীর বিভিন্ন অংশে সরবরাহ করা জারের পানির ৯৭ ভাগ পানিতে মানুষ ও প্রাণীর মলের জীবাণু (কলিফর্ম) পাওয়া গেছে।
টোটাল কলিফর্মের বেলায় ১০০ মিলিলিটার পানিতে সর্বোচ্চ ১৬০০ ও সর্বনিু ১৭ এমপিএন (মোস্ট প্রোবাবল নম্বর) এবং ফেকাল কলিফর্মের বেলায় সর্বোচ্চ ২৪০ ও সর্বনিু ১১ এমপিএন পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পানিতে এক ধরনের শৈবাল থাকে- যা কলেরা সৃষ্টির জন্য মোক্ষম উপাদান। আবার গরমে রান্না করা খাবারগুলো বেশিক্ষণ ভালো থাকে না। এগুলো না বুঝে খেয়েও ফুড পয়জনিং হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয়, রাস্তায় চলাফেরা করার সময় আখের রস, বিভিন্ন রকম ফলের জুস পান- যা চূড়ান্ত মাত্রার ক্ষতিকর। কেন না, এগুলোর পুরো প্রক্রিয়াটাই অপরিষ্কার। সর্বোপরি রাজধানীর ওয়াসার দূষিত পানি যা কোনোভাবেই পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না।
এই দূষিত পানি ও অস্বাস্থ্যকর টয়লেট সব মিলিয়েই ব্যাপক ঝুঁকিতে পড়ছে শিশুরা। কেন না, তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কোনোভাবেই এ ধরনের জীবাণুর আক্রমণকে প্রতিহত করতে পারছে না।
এ বিষয়ে রাজধানীর ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিনের পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম শামছুজ্জামান বলেন, আমাদের শরীরে অনেক রোগ ও সংক্রমণ হাতের মাধ্যমে ছড়ায়। সারা দিনে বিভিন্নভাবে হাত নোংরা হয়, হাতের মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ জন্মাতে সাহায্য করে। টয়লেট ব্যবহারের পর হাত না ধোয়াই পরিচিত অনেক রোগের কারণ। মানুষের ও পশুর বিষ্টায় নোরোভাইরাস, ই-কোলাই, সালমোনেলা নামক ভাইরাস থাকে। এই ভাইরাসগুলোই ডায়রিয়া হওয়ার অন্যতম কারণ।
এই অণুজীববিজ্ঞানী আরও বলেন, এ ছাড়া হাতের মাধ্যমে ছড়ানো ভাইরাসগুলোই শ্বাসনালির সংক্রমণের মতো মারাত্মক রোগের কারণ। অপরিষ্কার ও দূষিত হাত নিজের শরীরে জীবাণু ছড়িয়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সংস্পর্শে আসা অন্য সবার মাঝেও জীবাণু ছড়িয়ে দেয়। এজন্য শিশুদের পাশাপাশি প্রাপ্ত বয়স্কদেরও হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে জানাতে হবে ও হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে।