নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রবর্তন | প্রকাশিতঃ ২০:১২, ২৫ অক্টোবর ২০১৯
বাগেরহাটের ফকিরহাট, মোল্লাহাট ও চিতলমারীতে গত ২১ সেপ্টেম্বর এক রাতেই মারা যায় তিন সহস্রাধিক ঘেরের চিংড়ি। সরকারি হিসাবেই এতে ৫ হাজার ৩৪১ জন চিংড়িচাষীর ক্ষতি হয় প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি টাকা। তবে এ ঘটনার এক মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তরা কোনো ধরনের সরকারি সহায়তা পাননি। ফলে ঘের করার সময় নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বর্তমানে তারা চরম বিপাকে পড়েছেন।
বাগেরহাট মত্স্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২১ সেপ্টেম্বর রাতে হঠাৎ বৃষ্টিপাতে চিংড়িঘেরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এতে ফকিরহাট, মোল্লাহাট ও চিতলমারীর ৩ হাজার ১০৩টি ঘেরে মারা যায় ৩৫৬ টন গলদা ও বাগদা চিংড়ি। এতে চাষীদের ক্ষতি হয় ১৭ কোটি ৩৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তারা সরকারি সহায়তার দাবি করেছেন। তাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ফকিরহাট উপজেলার কলকলিয়া এলাকার সুশান্ত মণ্ডল বলেন, যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি চিংড়ি চাষ শুরু করেন গত বছর। মোট ১৬ বিঘার দুটি ঘেরে চিংড়ি চাষ করে তার মুনাফাও হয়। এ বছর আশা, গ্রামীণ ব্যাংক ও ডাক দিয়ে যাই এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ওই দুই ঘেরে ১২ লাখ টাকা খরচ করেন। কিন্তু ২১ সেপ্টেম্বর বৃষ্টির পর এক রাতেই তার ঘেরের সব চিংড়ি মারা যায়। এখন কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন বুঝতে পারছেন না।
একই কথা জানান ওই এলাকার চিংড়িচাষী নিলয় কুমার দে, বিভূতি ভূষণ মজুমদার, মনোতোষ বাগচী ও লাভলু কাজী। তারা প্রায় ২৫-৩০ বছর ধরে চিংড়ি চাষের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এ ধরনের বিপর্যয় এর আগে কখনো ঘটেনি। তারা বলেন, চিংড়ি চাষের জন্য তারা সবাই এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন। বছর শেষে চিংড়ি বিক্রি করে সেই ঋণ পরিশোধ করেন। কিন্তু এবার এক রাতে ঘেরের সব চিংড়ি মরে যাওয়ায় কোনোভাবেই এ ঋণ শোধ করতে পারবেন না। অথচ এরই মধ্যে ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো থেকে তাদের তাগাদা দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় ঋণ মওকুফের পাশাপাশি সরকারি সহায়তা না পেলে তারা নতুন করে চিংড়ি চাষ করতে পারবেন না।
এছাড়া কয়েকজন চিংড়িচাষী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে চিংড়ি মারা যাওয়ার আশঙ্কার বিষয়ে আগে থেকে মত্স্য বিভাগের কোনো নির্দেশনা ছিল না। এ অবস্থায় করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা পেলে হয়তো এত বড় ক্ষতি হতো না। তাছাড়া মত্স্য বিভাগ মাছ চাষীদের প্রশিক্ষণ দেয় বলে জানি। কিন্তু এ অঞ্চলের চাষীদের কখনই কোনো প্রশিক্ষণ দেয়া হয় না।
ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন দাস বলেন, এক রাতে অসংখ্য ঘেরের চিংড়ি মারা যাওয়ায় এ উপজেলার চাষীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ঘটনায় উপজেলায় এক ধরনের মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত জেলা মত্স্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, আমরা চাষীদের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও মত্স্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। তারা চাষীদের পুনর্বাসন ও ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা সবসময় জেলার চিংড়িচাষীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে সচেষ্ট। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে ইচ্ছা থাকলেও অনেক সময় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় কিছুটা সমস্যা হয়। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ সংকটকালীন পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে চাষীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে আমরা আরো গুরুত্ব দিচ্ছি।