আওয়াল শেখ : শরতের আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, আর দিগন্তে জুড়ে কাশফুলের মেলা জানান দিচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দিন যতই এগিয়ে আসছে মণ্ডপগুলিতে শিল্পীর রঙ তুলির আঁচড়ে ততই মূর্ত হয়ে উঠেছে দেবীর রুপ। কোন কোন মণ্ডপে শিল্পীদের নিপুন হাতে চলছে মাটির কাজ। আবার কোথাও কোথাও প্রতিমাগুলো রঙিন করার কাজে ব্যস্ত মালাকররা। তুলির আঁচড়ে সুন্দর করে তোলা হচ্ছে দুর্গা, গণেশ, কার্তিক ও মহিষাসুরের প্রতিমা। পদ্ম ও শিউলি লাবণ্য ছড়িয়েছে, ঢাক-ঢোল বাজিয়ে দেবী দুর্গাকে বরণ করে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
এ বছর আগামী ২২ অক্টোবরে ষষ্ঠী দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। আর ২৬ অক্টোবরে বিসর্জনের মাধ্যমে সমাপ্ত হবে সনাতন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও দেবীকে বরণ করে নিতে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে খুলনার স্থায়ী-অস্থায়ী মণ্ডপগুলোতে।
পূজা উদ্যাপন পরিষদের হিসাব মতে, এবছর খুলনা জেলা ও মহানগরীতে মোট ৯৭৮ টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এর মধ্যে খুলনা মহানগরীর ৮ টি থানায় ১৩৬ টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ডুমুরিয়া উপজেলায় ১৯৫ টি, পাইকগাছা উপজেলায় ১৩৬ টি, বটিয়াঘাটা উপজেলায় ১০৮ টি, তেরখাদা উপজেলায় ১০১ টি, রূপসা উপজেলায় ৭৩টি, দাকোপ উপজেলায় ৭০টি, দিঘলিয়া উপজেলায় ৬০ টি, কয়রা উপজেলায় ৫৫টি, ফুলতলা উপজেলায় ৩২টি ও চালনা পৌরসভায় ১০ টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
গত বছর খুলনায় ৯৯৮টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অর্থাৎ এবার ২০টি কম মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) খুলনার কয়েকটি মন্ডপে সরেজমিনে দেখা যায়, মণ্ডপ প্রাঙ্গণে ব্যস্ত সময় পার করছেন মালাকররা। নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি করা হচ্ছে দেবীদুর্গার মণ্ডপের কাজ। আকৃতি দেওয়া হচ্ছে দুর্গার সঙ্গে থাকে অসুর, সিংহ, মহিষ, গণেশ, সরস্বতী, কার্তিক ও লক্ষীর প্রতিমা। কোথাও বা প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। শিল্পীর রঙ তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দেবীর রুপ।

বটিয়াঘাটার নারায়ণপুরের মহানামা যজ্ঞাস্থলী গোপাল বাড়ির দুর্গাপূজার মণ্ডপের প্রতিমা।
বটিয়াঘাটার নারায়ণপুরের মহানামা যজ্ঞাস্থলী গোপাল বাড়ি মণ্ডপের পূজার আয়োজক খুলনার বিশিষ্ট শিল্পপতি ও তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল বলেন, প্রতিমা আর মণ্ডপে নান্দনিকতা ফুটে উঠেছে। রং তুলির আঁচড়ের কাজও শেষ হয়েছে। পূজাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে গোপাল বাড়ির মণ্ডপে।
তিনি জানান, করোনা মহামারিকালে এ বছর পূজার অনুষ্ঠানমালা শুধু ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে পূজা অর্চনার মাধ্যমে মন্দির প্রাঙ্গণেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে এ সীমিত পরিসরে পূজা উদযাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা।
এ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রতিমা তৈরি থেকে পূজা সমাপ্তি পর্যন্ত প্রতিটি মন্দিরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ভক্ত-পূজারি ও দর্শনার্থীদের জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখা, সবার বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরা, দর্শনার্থীদের মধ্যে ন্যূনতম তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, পূজামণ্ডপে নারী-পুরুষের যাতায়াতের আলাদা ব্যবস্থা করা, বেশি সংখ্যক নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক রাখতে হবে।
‘সন্দেহভাজন’ দর্শনার্থীদের দেহ তল্লাশির ব্যবস্থা রাখতে হবে। আতশবাজি ও পটকা ফাটানো থেকে বিরত থাকতে হবে। পূজামণ্ডপে রাখতে হবে সিসি ক্যামেরা।
ভক্তিমূলক সংগীত ছাড়া অন্য কোনো গান যেন বাজানো না হয়, মাইক বা পিএ সেট যেন ব্যবহার করা না হয়, পূজামণ্ডপে ‘প্রয়োজনের অতিরিক্ত দীর্ঘ সময়’ কোনো দর্শনার্থী যেন না থাকে এবং সন্ধ্যার বিরতির পর দর্শনার্থীদের প্রবেশে যেন নিরুৎসাহিত করা হয়- সেসব বিষয়ও আছে নির্দেশনায়।
সব ধরনের আলোকসজ্জা, সাজসজ্জা, মেলা, আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিহার করা, সম্ভব হলে বাসা/বাড়িতে থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভক্তদের অঞ্জলি দেওয়া, খোলা জায়গার অস্থায়ী প্যান্ডেলে স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে মেনে চলা, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে মণ্ডপকেন্দ্রিক ‘শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি’ গঠন, গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে তাৎক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা এবং প্রতিমা নিরঞ্জনে শোভাযাত্রা পরিহার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার কুন্ডু বলেন, ‘কেন্দীয় নেতাদের নির্দশনা অনুযায়ী এ বছর শুধু ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে মন্দির প্রাঙ্গণেই অনুষ্ঠান সীমাবদ্ধ থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিমন সাহা বলেন, ‘সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ বছর পূজা উদযাপন করা হবে। কোথাও অতিরিক্ত জন সমাগম হতে দেওয়া যাবে না। আমরা উপজেলা পর্যায়ের সকলে নেতাদের ডেকে মিটিং করে জানিয়ে দিয়েছি। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে সকলকে পূজার অনুষ্ঠান করতে বলেছি।’