বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস আজ

ডেস্ক রিপোর্ট : ফিজিওথেরাপি হল একটি স্বাধীন স্বাস্থ্যসেবা পেশা- যা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা, অসারতাসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ে স্বীকৃত, কার্যকরী ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিহীন চিকিৎসা পদ্ধতি। বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস আজ। বিশ্বব্যাপী সচেতনতা অর্জনের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সাল থেকে বৈশ্বিক ফিজিওথেরাপি সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ফিজিওথেরাপি’র আহ্বানে ৮ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

এরপর ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) নেতৃত্বে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘অস্টিওআর্থাইটিস চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি’।জানা যায়, ১৯১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের একদল স্বাস্থ্য কর্মী তাদের দেশে চিকিৎসা সেবায় প্রথমবারের মতো ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার কার্যক্রম শুরু করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা শুরু হয় ১৯১৪ সালে। এরপর শুরু হয় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে গবেষণা। ১৯২১ সালে ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট অ্যাসোসিয়েশন গঠন করে পঙ্গুদের পুনবার্সনের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিক শাখার নাম ‘ফিজিওথেরাপি’-বলে ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক মেরি এমসি মিলান। ১৯২৪ সালে জিওরজিয়া ওয়ার্ম স্প্রিং ফাউন্ডেশন পোলিও রোগ নিয়ে কাজ শুরু করে।

এক পর্যায়ে ফাউন্ডেশনটির অন্যতম কর্মী কিননি পোলিও চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপর থেকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা হয়ে উঠে পোলিও রোগীদের পুনর্বাসন ও চিকিৎসার মূল পদ্ধতি। ১৯৫০ সালে পঙ্গুত্ব ও বাত – ব্যথা এবং প্যারালাইসিস চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপির সাথে নিউরোলজি, অর্থোপেডিকস, কাইনেশিওলজি, হাইড্রোথেরাপি, ক্রায়োথেরাপি সংযুক্ত করা হয়।

আরও পড়ুন : এনআরবি ব্যাংকে চাকরির সুযোগ

১৯৮০ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বাত-ব্যথা ও প্যারালাইসিস চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপিতে যোগ করেন ইলেক্ট্রিক্যাল স্টিমুলেশন, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি, আল্ট্রাসাউ্ণ্ড , মাইক্রো ওয়েভ, ইনফ্রারেড রেডিয়েশন, আল্ট্রাভায়োলেট রেডিয়েশন, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ, ওয়াক্স বাথসহ ফেরাডিক ও গ্যালভানিক কারেন্ট ইত্যাদি। ফিজিওথেরাপিতে এই অংশটির নাম দেওয়া হয় ইলেক্ট্রোথেরাপি।

১৯৯০ সালে ফ্রেডি কেলর্টেনবর্ন নামের একজন ফিজিওথেরাপিস্ট ম্যানুয়েল থেরাপির বিভিন্ন ধারা ব্যবহার করে রোগীকে সুস্থ করে তোলার মধ্য দিয়ে সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বাত, ব্যথা প্যারালাইসিস ও স্পোর্টস ইনজুরির চিকিৎসায় অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অন্তর্ভূক্ত।

এক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাই বর্তমানে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত একমাত্র উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি।বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের অবসানের পর হাজার হাজার যুদ্ধাহত পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা ও জনসাধারণের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন বিভিন্ন দেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এনে সাময়িকভাবে চিকিৎসা কার্য পরিচালনা করা হয়।

জরুরি ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার ফিজিওথেরাপি সিলেবাসের সমন্বয়ে একটি আধুনিক সিলেবাস প্রণয়ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদ বা মেডিসিন ফ্যাকাল্টির অধীনে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এ বিষয়ে ব্যাচেলর কোর্স চালু করা হয়। ১৯৭৩ সনে ২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির মাধ্যমে আর-জে গাস্টের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শিক্ষার ব্যাচেলর ডিগ্রি চালু করা হয়।

তখন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টি হতে এমবিবিএস (মেডিক্যাল), বিডিএস (ডেন্টাল) এর ন্যায় বিপিটি ( ফিজিওথেরাপি ) বিষয়ে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি বা ব্যাচেলর ডিগ্রির অগ্রযাত্রা শুরু হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ফিজিওথেরাপি শিক্ষার ব্যাপকতা উপলব্ধি করে বর্তমানে আরও অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও এ বিষয়ে স্নাতক বা ব্যাচেলর ডিগ্রি অধ্যয়নের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বর্তমানে ফিজিওথেরাপির উপর ব্যাচেলর (বিপিটি) ডিগ্রির পাশাপাশি পোস্ট গ্রাজুয়েশন (পিজিডি), মাস্টার্স ( এম পি এইচ, এম পি টি, এম ডি এম আর) পিএইচডি  ডিগ্রি চালু হয়েছে। অন্যদিকে ফিজিওথেরাপির উপর ডিপ্লোমা (ডিপিটি), সার্টিফিকেট কোর্স রয়েছে। বাংলাদেশে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি) প্রতি বছর অন্তত ৮০ হাজার রোগীকে সেবা প্রদানের পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের কল্যাণে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। এ ছাড়াও এই সেবাদানের জন্য দেশে এখন অনেক ফিজিওথেরাপি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top