কোনো দরপত্র বা বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই সিঙ্গেল সোর্সের মাধ্যমে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার বই কিনতে যাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর বঙ্গবন্ধু কর্নারের জন্য এসব বই কেনা হচ্ছে। প্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে এভাবে বই কেনায় সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
তালিকায় দেখা গেছে, ভালো ও মানসম্পন্ন কিছু বইয়ের পাশাপাশি এমন বেশকিছু প্রকাশনী ও বই রয়েছে যা তেমন পরিচিত নয়। পরিচিত নন বেশ কয়েকটি বইয়ের লেখকও।
দরপত্র ছাড়াই বই কেনার প্রক্রিয়া বাতিল চেয়ে দেশের খ্যাতনামা লেখকরা যথাযথভাবে বই ক্রয়ের আহ্বান জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিটির মাধ্যমে বাছাই করে বই ক্রয়ের আহ্বান জানান তারা। কিন্তু এরপরও প্রক্রিয়াটি থেমে নেই।
এমন অবস্থায় প্রক্রিয়াটি বাতিল চেয়ে ও নিয়ম মাফিক ক্রয়ের আহ্বান জানিয়ে এবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এবং সচিব বরাবর দুই দফা চিঠি দিয়েছে দেশের পুস্তক ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। ২২ জুন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ও সমিতির রাজধানী শাখার সভাপতি মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রথম চিঠিটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী জাকির হোসেন বরাবর দেয়া হয়।
মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক গ্রেড-১ বরাবর অনুলিপি দেয়া হয়। চিঠির এক জায়গায় বলা হয়, আমরা সম্প্রতি নানা সূত্রে জেনেছি, আপনার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) কর্তৃক কিছু শিরোনামের বই ৬৭ হাজার কপি করে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নাধীন আছে বলে আমরা জেনেছি। বই ক্রয়ের যে-কোনো উদ্যোগকে আমরা ইতিবাচক মনে করি। উক্ত উদ্যোগটিও প্রশংসনীয়। এর সঙ্গে যুক্ত সবাইকে আমাদের সাধুবাদ জানাই। এ উদ্যোগকে সর্বজনীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সম্প্রসারিত রূপ দেয়ার জন্য আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
চিঠিতে বলা হয়: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এক বছরে দেশে প্রচুর বই প্রকাশিত হয়েছে। মান ও প্রকাশনা সৌকর্যের বিচারে উল্লেখযোগ্য বইয়ের সংখ্যা কম নয়। এ ছাড়াও শিল্প-সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বইও আছে প্রচুর। প্রকাশকদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে উন্মুক্তভাবে বইয়ের তালিকা আহ্বান করা হলে বই ক্রয়ের প্রক্রিয়াটি আরও ফলপ্রসূ হবে।
আমাদের বিশ্বাস, এর ফলে মহতী এ উদ্যোগ অংশগ্রহণমূলক ও পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। বাংলাদেশে প্রকাশিত বইয়ের রত্নভাণ্ডার থেকে উপযুক্ত বইগুলো প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পৌঁছে দেয়ার এ অনন্য উদ্যোগ কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাবে।
আরেকটি বিষয় ভাবা যেতে পারে- একক শিরোনামের বই এত বিপুল সংখ্যায় না কিনে একই পরিমাণ অর্থে একাধিক শিরোনাম, লেখক ও প্রকাশকের বই কেনা যায়। এর ফলে করোনাভাইরাসের এ দুর্যোগকালে বিপর্যস্ত প্রকাশকরা যেমন আশার আলো দেখতে পাবেন, বেশি সংখ্যক লেখকও তেমনি উপকৃত হবেন।
এ চিঠির কোনো উত্তর না পেয়ে ২৮ জুন সমিতির পক্ষ থেকে আবারও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব বরাবর চিঠি দেয়া হয়।
সেখানে এ ক্রয় প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় পর্যায় অবিলম্বে বাতিল করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘বইবান্ধব সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর কর্তৃক প্রতিটি শিরোনাম ৬৭ হাজার কপি করে বই ক্রয় প্রক্রিয়াটির দ্বিতীয় পর্যায় অবিলম্বে বাতিল করে উদ্যোগটির অধিকতর সম্প্রসারণ এবং সীমিত সংখ্যক প্রকাশকের স্থলে বৃহত্তর প্রকাশক সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আমাদের আবেদন ও প্রস্তাবনা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবেন।’
এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী জাকির হোসেনের সঙ্গে বেশ কয়েকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মুদ্রণ ও প্রকাশনা বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খান মাহবুবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ ক্রয় প্রক্রিয়ায় এমন কয়েকজন লেখকের নাম শুনছি যাদের নাম আগে শুনিনি। শুধু তাই নয়, এমন কিছু বইয়ের নাম শুনছি, যা আমাদের বিস্মিত করেছে। কোমলমতি শিশুদের জন্য বই তো হাতে গোনা কয়েকটি।
দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় বঙ্গবন্ধু কর্নারের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সৃজনশীল বই ক্রয়ের বিষয়ে তারা কিছু জানেন কি না, জানতে চাইলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, আমরা এ ধরনের কোনো ক্রয়ের বিষয়ে অবহিত নই।