বিএনপির স্থায়ী কমিটির সংস্কার চায় তৃণমূল

আন্দোলন-সংগ্রাম ও দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয় ও ব্যর্থ নেতৃত্বের সংস্কার চায় বিএনপির তৃণমূল।

তারা মনে করে, খালেদা জিয়ার কারাগারে থাকা অবস্থায় দলটির সর্বোচ্চ জাতীয় স্থায়ী কমিটির অনেক নেতার দায়িত্ব অবহেলা, অদক্ষতা ও অযোগ্যতা লক্ষ্য করা গেছে। এসব নেতাদের ভয়-ভীতি ও ব্যক্তিস্বার্থ বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তাদের সে সময়ের কর্মকাণ্ড ও তৎপরতাকে সাংগঠনিকভাবে অপরাধ বলে গণ্য করা উচিত। কেননা এসব নেতাদের কারণেই বিএনপির আজ দুর্বস্থা।

তারা আরো বলেন, দলের স্থায়ী কমিটি এখন ব্যবসায়ী, বয়স্ক ও অসুস্থ নেতাদের দিয়ে ভরা। এখানে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দেয়ার মতো কেউ নাই। সশরীরে ২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। এ সমস্ত কারণেই স্থায়ী কমিটির সংস্কার চান তৃণমূল বিএনপি নেতারা।

দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ কাউন্সিল এর মাধ্যমে ২টি পদ ফাঁকা রেখে ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির নাম ঘোষণা করে বিএনপি। এদের মধ্যে তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ এবং এম কে আনোয়ার মারা গেছেন। বার্ধক্যজনিত কারণে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার দলীয় কর্মকাণ্ডে অনুপস্থিত।

এছাড়াও দলীয় কোন্দলে খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দলীয় কর্মসূচিতে কখনো কখনো সক্রিয় কখনো নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মির্জা আব্বাস ব্যবসায়িক স্বার্থ ও মামলা থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আঁতাত করে চলেন। এছাড়াও আরেকজন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন চৌধুরী অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ভারত থেকে ফিরতে পারছেন না।

দীর্ঘ ২৫ মাস কারাবরণের পর রাজনীতি থেকে অনেকটাই দূরে সরে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এছাড়া একাধিক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সম্প্রতি যদিও দলের দু’জন ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটিতে আনা হয়েছে, তবে তা যথেষ্ট নয়। ফলে দলে নেতৃত্ব দেয়ার মতো এখন কেউ নেই। এই অবস্থায় দলকে চাঙা করতে বা দলের গতি ফেরাতে স্থায়ী কমিটিতে আমূল পরিবর্তন চায় বিএনপির তৃণমূল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি’র এক সময়ের শীর্ষ প্রভাবশালী নেতা বলেন, বিএনপি’র ঘুণে ধরা স্থায়ী কমিটিতে সংস্কার প্রয়োজন।

তিনি বলেন, দলকে রাজনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হলে স্থায়ী কমিটির শূন্য পদগুলো পূরণ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এই কমিটি থেকে মীরজাফর ও অন্যদলের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারীদর সরিয়ে ত্যাগী, চৌকষ ও যোগ্য নেতাদের স্থান দিতে হবে। কেননা একটা পরিবারের যদি অভিভাবক ঠিক না থাকে তাহলে ওই পরিবারের অভিভাবকদের অধীনস্থ কোনো সন্তানই সঠিক পথে পরিচালিত হবে না।

তাই নেতৃত্ব সঠিকভাবে না দেয়া হলে দল সঠিকভাবে পরিচালিত হবে না এটাই বাস্তবতা। যতদিন না পর্যন্ত স্থায়ী কমিটিতে বড় সংস্কার হবে ততদিন পর্যন্ত এ দলের ভাগ্য পরিবর্তন হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে দলটির একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বুদ্ধিজীবী বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে সফল হওয়ার জন্য তরুণ, দক্ষ ও চৌকষ নেতা প্রয়োজন। বিএনপিতে এখন এটার বড়ই অভাব। তারা বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটি এখন বয়স্ক, অসুস্থ ও নিষ্ক্রিয় নেতাদের দিয়ে ভরা। এখানে সংস্কার প্রয়োজন। নতুনদের হাতে দলের দায়িত্ব তুলে দিতে হবে।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top