ডেস্ক রিপোর্ট : প্রলয়ঙ্করী বন্যাসহ মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় সরকার যথাযথ গুরুত্ব না দিয়ে বরং পদ্মা সেতু উদ্বোধনের নামে অনাড়ম্বর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের বিপরীতে ‘জমকালো’ ও ‘বিলাসবহুল’ অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, দুর্যোগে সরকারের ভূমিকা হতাশাজনক।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে খবর আসছে, বানের স্রোতে তলিয়ে যাওয়া হতভাগা মানুষের লাশ ভাসছে। কারও লাশ হাওরে, আবার কারও লাশ খালের পানিতে। দাফনের জন্য মাটি মিলছে না। দিনের পর দিন পলিথিনে মুড়িয়ে রাখা হচ্ছে লাশ। দাফনের জায়গা না পেয়ে কেউ কেউ প্রিয়জনের লাশ ভাসিয়ে দিচ্ছে বানের পানিতে।
রব বলেন, মৃত বা নিখোঁজের সংখ্যা কত সরকার তাও প্রকাশ করতে পারছে না। সিলেট অঞ্চলে বন্যার ভয়াবহতা কল্পনাতীত। হবিগঞ্জসহ বন্যায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
জেএসডি সভাপতি বলেন, বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ এখন দিশেহারা। সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। ত্রাণ ও বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে বানভাসিদের ত্রাহি অবস্থা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় দুর্গম এলাকার দুর্গত মানুষ কোনো ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ত্রাণের জন্য হাহাকার। নিরাপদ পানির তীব্র অভাব। কুয়া-নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় নিরাপদ পানি পান করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে বন্যা কবলিতদের মাঝে মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
রব বলেন, সর্বোপরি বন্যা পরিস্থিতি এখন আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। যথাসময়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ থাকার পরও প্রাণহানি কমানো বা দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার কোনো পূর্বপ্রস্তুতি নেয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে লাখ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, বন্যার ভয়াবহতার মাত্রা বৃদ্ধিতে হাওর এলাকায় অবকাঠামো নির্মাণে কতটুকু ভূমিকা রয়েছে সে সম্পর্কেও সরকারি কোনো তদন্তের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এই ভয়াবহ সংকট মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকা খুবই হতাশাজনক। বন্যার ভয়াবহতায় যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা খুবই অপ্রতুল। মানুষের ভয়াবহ বিপদে, তাদের পাশে সরকার দাঁড়াচ্ছে না। সরকার দৃশ্যমান স্থাপনা নির্মাণেই উৎসাহী জনজীবন সুরক্ষার চেয়ে। এটাই সরকারের উন্নয়ন দর্শন।
জেএসডি সভাপতি বলেন, জাতির জন্য এখন দুর্যোগকাল। চারদিকে মানুষের কান্না আর হাহাকার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। বিধ্বংসী বন্যায় মানুষের মননে যখন জাতীয় শোকের আবহ তখন ‘জমকালো’ ও ‘বিলাসবহুল’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা কোনোভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়।
তিনি বলেন, এখন জরুরি ভিত্তিতে দরকার বিপন্ন মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা। খাদ্য সামগ্রী ও সুপেয় পানি পৌঁছে দেওয়া। নিরাপদ আশ্রয় ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা। অভুক্ত থেকে কোনো মানুষের যেন মৃত্যু না ঘটে তার ব্যবস্থার পাশাপাশি বন্যা উত্তর পরিস্থিতিকে যথার্থ মোকাবিলা করা। বন্যা ও বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।