করোনার ভয়ে তটস্থ গোটা পৃথিবী। বাংলাদেশেও প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। পিছিয়ে নেই খুলনাও। সবখানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস। যে কারণে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন সংক্রমণ প্রতিরোধে জেলার সব উপজেলা ও মহানগরীতে দোকানপাট, শপিংমল, যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলের উপর বৃহস্পতিবার (১১ জুন) থেকে বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) পর্যন্ত ১৫ দিনের জন্য বিধি নিষেধ জারি করেন। সেই নিষেধাজ্ঞা ভেঙে খোদ খুলনা জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগ খুলনায় ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ৫৪টি পদে পরীক্ষা নিয়েছে।
শনিবার (২০ জুন) দিনভর খুলনা নগরীর তিনটি কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৭০০ প্রার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেন। একই দিন পৃথক স্থানে প্রার্থীদের মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষাও নেওয়া হয়। এতে পরীক্ষা কেন্দ্রে জনসমাগম তৈরি হয়।
জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী ছিল যার মধ্যে ৭৪০ জন উপস্থিত হয়েছেন।
করোনা প্রাদুর্ভাবকালে বিভিন্ন স্থানের চাকরি প্রত্যাশীদের পরীক্ষা নেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খুলনার নাগরিক নেতা ও চাকরি প্রত্যাশীরা। তারা বলেছেন, যখন সারা জেলায় দিন দিন করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে ও অষোষিত লকডাউন অবস্থা বিরাজ করছে, তখন এ ধরনের পরীক্ষা বা জমায়েত সাধারণ মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া চাকরি প্রার্থীদের সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলার ৫৪টি ইউনিয়নের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সহস্রাধিক প্রার্থী আবেদন করেন। চলতি মাসে ৪ জুন নিয়োগ কমিটির সভায় ২০ জুন প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা আহ্বান করা হয়। সে অনুযায়ী সকাল ১০টায় খুলনা জিলা স্কুল, সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও খুলনা কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে লিখিত পরীক্ষা, বিকেল ৪টায় নগরীর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল দপ্তরে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় খুলনা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে মৌখিক পরীক্ষার সময় দেওয়া হলেও পরে তা সন্ধ্যা ৭টায় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণ এড়াতে জেলায় পাবলিক পরিবহন ও যান চলাচল সীমিত থাকায় পরীক্ষার্থীরা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নগরীতে আসতে বিড়ম্বনায় পড়েন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রার্থী বলেন, বেঁচে থাকার জন্য চাকরি জরুরি। কিন্তু করোনা দুযোর্গের সময় পরীক্ষা দিতে এসে থাকা-খাওয়াসহ নানা বিষয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এ পরীক্ষা নিলে আরও ভাল হতো। পাশাপাশি তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকিরও শিকার হলেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, খুলনা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জেলায় এক প্রকার লকডাউন চলছে। তারমধ্যে এ ধরনের পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হয়নি। এতে যারা শহরে এলেন তারা ঝুঁকির মধ্যে পড়লেন। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক সময়ে করা উচিত ছিল। এটি দুঃখজনক।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, এখন একটি দুর্যোগ চলছে। এ অবস্থায় এ ধরনের পরীক্ষা নেওয়া খুব জরুরি বলে মনে হয় না। সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি ভাবা উচিত ছিল।
এ অবস্থায় খুলনায় নিয়োগ পরীক্ষা সরকারি বিধিতে কতটুকু যৌক্তিক এ প্রশ্নের জবাবে খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) ও স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক ইকবাল হোসেন বলেন, আমি এখন ভাইভা বোর্ডে আছি। পরে ফ্রি হয়ে আপনাকে জানাবো।