চট্টগ্রামে করোনার ভয়ে কর্মে অনীহা ইন্টার্নদের

চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগ দিচ্ছেন না অধিকাংশ ইন্টার্ন চিকিৎসক (প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক)।

করোনাভাইরাসের ভয়ে তারা কাজে যোগ না দেয়ায় হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ২০২০-২০২১ ব্যাচের প্রায় ১৭০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক কাজে যোগ দেননি।

ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অনেকে হাসপাতালে আসছেন না। আবার ছুটিতে গিয়েও অনেকে ফিরছেন না। মূলত করোনাভীতি ও অভিভাবকদের অনীহার কারণে তাদের অধিকাংশকে কাজে ফেরানো যাচ্ছে না।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। করোনার ভয়ে নানান অজুহাত দেখিয়ে অনেকে চলে গেছেন। তাদের ফেরানোর চেষ্টা চলছে। যথাসময়ে তারা না ফিরলে তাদের বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) সনদ আটকে দেয়া হবে। হাসপাতাল থেকেও কোর্স চূড়ান্ত করার সনদ দেয়া হবে না! তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে- এমন হুমকির পরও সাড়া মিলছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ ও সাদার্ন মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস কোর্সসম্পন্ন ৫০০ চিকিৎসকের ইন্টার্নশিপ করার কথা ছিল। কিন্তু তাদের অধিকাংশই হাসপাতালে যোগ দিচ্ছেন না।

করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় ইন্টার্নশিপ করার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের মধ্যে অনীহা দেখা দেয়। অনেকে কোর্স শুরুই করেননি। আবার কর্মরতদের অধিকাংশ নানা অজুহাত দেখিয়ে ছুটি নিয়েছেন। এ অবস্থায় হাসপাতালগুলো ইন্টার্ন চিকিৎসক সংকটে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল।

দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এ হাসপাতালের ২০২০-২০২১ ব্যাচের ১৭০ জন চিকিৎসকের কেউ কাজে যোগ দেননি। রোগী রিসিভ করা থেকে শুরু করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়াসহ সিংহভাগ কাজ সম্পন্ন করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। সরকারি ছুটির দিনেও ভরসা তারা। অথচ করোনার ভয়ে একটি ব্যাচের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা যোগ না দেয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চরম সমস্যায় পড়েছে।

সূত্র জানায়, এমবিবিএস পাস করার পর শিক্ষার্থীদের এক বছর ইন্টার্নশিপ করতে হয়। এতে তারা হাতে-কলমে চিকিৎসাসেবার পাঠ নেন। ইন্টার্নশিপের জন্য বিএমডিসি সাময়িক সনদ ইস্যু করে। এক বছরের ইন্টার্নশিপ শেষ হলে এবং হাসপাতালের কোর্স সম্পন্ন করার সনদ পাওয়ার পর বিএমডিসি স্থায়ী সনদ দেয়।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবির বলেন, কাজে যোগ দিতে মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও সাড়া মেলেনি। কী কারণে তারা যোগ দিচ্ছেন না সেটাও নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, এমনিতে লোকবল সংকট। এর ওপর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কাজে যোগ না দেয়ায় তাদের খুবই বেগ পেতে হচ্ছে।

চমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন ডক্টর অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ডা. নাঈম ইসলাম বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুরক্ষার ব্যবস্থা করলে অবশ্যই তাদের কাজে যোগ দেয়া উচিত। সদ্য ইন্টার্ন কোর্স সম্পন্ন করা চিকিৎসক নাঈম আরও বলেন, চিকিৎসক হয়ে ঘরে বসে থাকার মধ্যে কোনো আনন্দ নেই। করোনাভীতি ও অভিভাবকদের অনীহার কারণে কাজে যোগ না দেয়া দুঃখজনক।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আশরাফুল করিম বলেন, এখানে প্রতিদিন তিন শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে। এর কয়েকগুণ বেশি চিকিৎসা নেন আউটডোরে। অথচ হাসপাতালে ৫০ শতাংশ ইন্টার্ন চিকিৎসক অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সব ধরনের সুরক্ষাসামগ্রী দেয়া হয়েছে। এরপরও অনেকে নানা অজুহাত দেখিয়ে কাজে যোগ দিচ্ছেন না।

কেউ কেউ পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ছুটিতে রয়েছেন। যারা নির্ধারিত সময়ে কাজে যোগ দেবেন না, তাদের বিরুদ্ধে বিএমডিসির নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের কোষাধ্যক্ষ রেজাউল করিম আজাদ বলেন, কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের অভিভাবককে আমরা অনেক অনুনয়-বিনয় করেছি। সব ধরনের সুরক্ষাসামগ্রী দেয়ার আশ্বাস দিয়েছি। এরপরও তারা রাজি হননি।

বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির পরিচালক (মেডিকেল সার্ভিসেস) খায়ের উদ্দিন বরকত বলেন, এক ব্যাচের ১৭০ শিক্ষার্থীর অনেকে কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তবে যারা কাজ করছেন তাদের রোস্টার করে দেয়া হয়েছে।

বেসরকারি হাসপাতাল মনিটরিংয়ে গঠিত সার্ভিল্যান্স টিমের প্রধান ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ক্যারিয়ারের শুরুতে তারা এমন করলে তাদের কাছ থেকে জাতি কী আশা করতে পারে। এ সময় কাজ না করলে তাদের চিকিৎসক জীবনও বৃথা বলে আমি মনে করি। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। যারা কাজে যোগ দেবেন না, তাদের বিএমডিসি সনদ আটকে দেয়াসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top