আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির খাতে বিশেষ কোনো বরাদ্দ নেই। মামলাসহ উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় চলতি বছরের মতোই প্রায় ৩৩ কোটি টাকা এই খাতে রাখা হয়েছে।
তবে বরাদ্দ না থাকলেও যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করার চিন্তা সরকারের আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বুধবার বলেন, ‘প্রতি বছরই যোগ্য প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথা দিলে কথা রাখেন। এটা সবাই জানেন। আমরা যোগ্য প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করব।’
আর বৃহস্পতিবার সংসদে বাজেট প্রস্তাবের পর নিজের বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। এমপিওভুক্তির জন্য মানদণ্ড ঠিক করা আছে। এর ভিত্তিতে প্রতি বছরই এমপিওভুক্ত করা হবে।
নতুন অর্থবছরের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ২১ হাজার ২৫২ কোটি টাকা আছে।
এটা চলতি অর্থবছরের চেয়ে দুই হাজার দুই কোটি টাকা বেশি। আর কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অনুকূলে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে আট হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা।
এর মধ্যে অনুন্নয়ন খাতের বরাদ্দ ছয় হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। এটা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪১৬ কোটি টাকা বেশি। সাধারণত এই অনুন্নয়ন খাত থেকেই শিক্ষকদের এমপিও’র অর্থ সংস্থান করা হয়।
জানা গেছে, এখনও এমপিওবিহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে অন্তত সাড়ে সাত হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী আছেন। নতুন বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ না রাখায় হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। পাশাপাশি তারা বাজেট অনুমোদনকালে এই খাতে অর্থ বরাদ্দের দাবি করেছেন।
অন্য দিকে যেহেতু অধিবেশন চলমান আছে, তাই অধিবেশনের শেষে বাজেট অনুমোদনকালে এই খাতে অর্থ বরাদ্দের দাবি করেছেন শিক্ষক নেতারাও। স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেন, বাজেট বক্তৃতায় না থাকলেও বাজেট অনুমোদনকালে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ রাখা হবে বলে আমরা আশা করছি। তবে আমাদের অন্যতম দাবি, মুজিববর্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ঘোষণা। এই অধিবেশনেই সেই ঘোষণা আসবে এমন প্রত্যাশা রাখি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে নীতিমালা সংশোধন কার্যক্রম চলছে। গত অক্টোবরের পর থেকে ইতোমধ্যে এই কমিটির পাঁচটি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়।
এই নীতিমালার আলোকেই এমপিওবিহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে যোগ্য তালিকা তৈরি করার কথা আছে। এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত হলে বাজেটে বরাদ্দ না থাকলেও দুই মন্ত্রণালয়ের আলোচনায় বিশেষ বিবেচনায় সংস্থান হয়ে থাকে। অতীতে এমন অভিজ্ঞতা আছে।
এমপিও নীতিমালা সংশোধন কমিটির সদস্য ও নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, নীতিমালা নিয়ে সর্বশেষ সভাটি গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয়।
কমিটি পর্যায়ে কাজ শেষ। এরপর শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে একটি সভায় নীতিমালাটি চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে হয়তো আর কোনো সভা ডাকা হয়নি। এই শিক্ষক নেতা বলেন, নীতিমালায় এমপিওভুক্তির শর্তসহ কয়েকটি ধারায় আমাদের সঙ্গে দ্বিমত আছে।
আমরা বলেছি, এমপিওভুক্তির চার শর্তের কোনোটিতে শূন্য নম্বর দেয়া যাবে না। আরোপিত শর্ত অনুযায়ী যদি অর্ধেক শিক্ষার্থী থাকে তাহলে অর্ধেক নম্বর দিতে হবে।
বর্তমানে কাম্য শিক্ষার্থীর একজনও কম থাকলে নম্বর শূন্য দেয়া হয়। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওর জন্য যোগ্য বিবেচিত হয় না। আমাদের সুপারিশ ছিল যে, ১০০ নম্বরের মধ্যে ৩৫ পেলেই যোগ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
এছাড়া আমরা অনার্স-মাস্টার্স কলেজকে এবং ডিগ্রি স্তরের তৃতীয় শিক্ষককে এমপিও দিতে বলেছি। এর মধ্যে তৃতীয় শিক্ষকের বিষয়ে মন্ত্রণালয় বিবেচনা করছে। আশা করছি, অনার্স-মাস্টার্স কলেজও বিবেচনায় নেয়া হবে।
বর্তমানে দেশে প্রায় ৫০০ বেসরকারি কলেজে অনার্স চালু আছে বলে জানান বেসরকারি কলেজ অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক ফোরাম আহ্বায়ক নেকবর হোসাইন।
গত বছরের ২৩ অক্টোবর ২৭৩০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও পরে চূড়ান্ত বাছাইয়ে দুই হাজার ৬১৫টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ছাড়পত্র পায়। শর্ত পূরণ না করায় বাকিগুলো বাদ পড়ে।
চলতি অর্থবছরে নতুন এমপিও খাতে বরাদ্দের মাত্র অর্ধেক ব্যয় করতে পেরেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।
যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না পাওয়ায় ৪১৪ কোটি টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এই অর্থ নতুন বছরের জন্য রাখার চেষ্টা চলছে। তাহলে এই অর্থেই অন্তত দেড় হাজার প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা যাবে।