চিতলমারীতে প্রভাবশালীদের স্থাপনায় চিত্রা নদী খনন ব্যাহত

মরা চিত্রা নদীর পাড়ে প্রভাবশালীদের অবৈধ স্থাপনা থাকায় নকশা অনুযায়ী খাল খনন ব্যাহত হচ্ছে। কমে গেছে প্রসস্থতা। নদী, খাল খননের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত কয়েক কোটি টাকার কাজ ভেস্তে যেতে বসেছে। ফলে ‘তীরে এসে ডুবতে বসেছে তরী’ বলে মন্তব্য বলে করেছেন এলাকার অনেকেই। বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা সদরের পাশের মরা চিত্রা নদী খননে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন জায়গায় প্লান অনুযায়ী খাল খনন সম্ভব হচ্ছে না।

স্থানীয় বাসিন্দা অনুকুল বসু, রাজু ফরাজী, বাবলু মণ্ডলসহ প্রায় অর্ধ-শতাধিক ব্যক্তি জানান, এই খনন কাজের জন্য অসংখ্য মানুষের রেকর্ডিয় ঘর-বাড়ি, গাছপালা, জমি নষ্ট হয়েছে। কিন্তু তারা স্বপ্নের সেই চিত্রা নদীর জন্য বৃহত্তর স্বার্থে ব্যক্তিগত স্বার্থ ত্যাগ করেছেন। কিন্তু হাতে গোনা কয়েক প্রভাবশালী ব্যক্তির স্থাপনার জন্য সরকারের এই মহতি উদ্যোগ বিনষ্ট হতে বসেছে। ওই প্রভাবশালীরা তাদের স্থাপনা রক্ষার জন্য নানা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করছে। নদীর পাড়ে থাকা সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সরকারী নকশা অনুযায়ী নদী খননের দাবী জানান তারা।

এলাকাবাসীরা জানান, খনন কাজের শুরুর দিকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ‘লাল চিহ্ন’ দেয়া হয়। গত বছর ২৩ ডিসেম্বর খনন কাজের শুরুর দিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) যৌথ উদ্যোগে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় পাউবো বাখেরগঞ্জ বাজার থেকে চিতলমারী সদর বাজার পর্যন্ত ২০টির অধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য চিহ্নিত করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চিহ্নিত স্থাপনা থাকা প্রভাবশালীদের মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ী মিরাজ হোসেন ও শহীদ মোল্লাসহ প্রায় এক ডজন ব্যাক্তি। নদীর দুপাশ জুড়ে এই বড় বড় স্থাপনা থাকায় সিডিউলের চেয়ে কম প্রসস্থ রেখে খনন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

তবে ওই প্রভাবশালীদের একজন মো. মেরাজ দাবী করেন তার দ্বিতল বাড়িটি যেখানে স্থাপিত, সেখান থেকে নদীর মধ্যে আরো তিন ফুট জায়গা তিনি পাবেন।

তিনি আরো জানান, আবেদনের প্রেক্ষিতে পাউবো ও উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারের সমন্বয়ে জায়গা মেপে স্থাপনাকে রেকর্ডীয় সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নদীর মধ্যে পাওনাকৃত জায়গা বুঝে দিতে তিনি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এ ব্যপারে ঠিকারদারী প্রতিষ্ঠান কাবিকো লিঃ এবং জুয়েল কনষ্ট্রাকশনের (জেভি) পক্ষে ইলিয়াস হোসেন সাংবাদিকদের জানান, কোন কোন স্থানে নদীর পাশে নানা ধরণের স্থাপনা থাকায় নকশা ও পরিমাপ অনুযায়ী খনন কাজ করা যাচ্ছে না। ফলে সময় ও ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিসহ করোনার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সমাপ্ত করা যাবে না।

 

এ বিষয়ে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মারুফুল আলম বলেন, ‘অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ড সহযোগিতা চাইলে প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। উপজেলা প্রশাসন এই কাজের শুরু হতে সহযোগিতা করছে।’

তবে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিদুজ্জামান বলেন, ‘চিতলমারীতে ২৫৬ কোটি টাকার প্রকল্পে ৫৫টি নদী ও খাল পুন খননের কাজ প্রায় শেষের দিকে। নকশা অনুযায়ী খনন কাজ হতে হবে। এই কাজে কোন প্রকার অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দায়িত্ব প্রশাসনের।’

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top