ইউএনও জুলিয়া সুকায়নার ধান মাড়াই

এন ইসলাম সাগর : বাংলাদেশ মানেই কৃষিপ্রধান দেশ, এদেশের ৮০ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। দেশের প্রতিটি পরিবারই যেন কৃষি পরিবার। ধনি, গরিবসহ সব শ্রেণীর পরিবারের সন্তান যেন কৃষির সাথেই পরিচিত হয়ে বেড়ে উঠেছে। এজন্য হয়তো দেশের এমন অনেক কৃতি সন্তান আছেন যারা সমাজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকেও ভুলে যায়নি বাঙ্গালির আবহমান কৃষি ও ঐতিহ্যের কথা।

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়না দেশের কৃতি সন্তানদের মধ্যে অন্যতম একজন। যিনি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে বর্তমানে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। প্রথম কোন নারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যিনি বদলে দিয়েছেন উপজেলা পরিষদকে। উন্নয়নের নান্দনিক ছোয়ায় দৃষ্টিনন্দন করেছেন উপজেলা পরিষদ এলাকা। একজন দক্ষ প্রশাসক হিসেবে যিনি ইতোমধ্যে সকলের কাছে একজন পরিচিত মুখ। ফনি, বুলবুল ও করোনার মত মহামারী দূর্যোগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে মানবিক সহায়তা পৌছে দিয়ে মানবিকতায়ও যিনি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

এসব নানামুখি কর্মকান্ডের জন্য মানুষের কাছ থেকে তিনি পেয়েছেন অফুরন্ত ভালবাসা, প্রকৃতি প্রেমী, মমতাময়ী, রুচিশীল ও নন্দিত উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ নানা উপাধি। প্রশাসনের সকল কর্মকান্ডে তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়ে ভূয়শী প্রসংশা অর্জন করেছেন। এলাকার মানুষ দেখেছেন তার নানামুখী কর্মকান্ড। কিন্তু কেউ কখনও দেখেনি একজন নারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারও অবতীর্ণ হতে পারেন একজন দক্ষ কৃষকের ভূমিকায়। তিনি নন কোন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আবার জীবনে কখনো তিনি মাঠ পর্যায়ে কোন কৃষি কাজ করেছেন কিনা এমনটি হয়তো কেউ কখনো দেখেনি। কিন্তু সেদিন কৃষকের সাথে ধান মাড়াই করতে দেখে সবাই যেন হতবাক। দেখে বোঝার উপায় নেই উনি প্রশাসনের একজন পদস্থ কর্মকর্তা। ঠিক সাধারণ একজন কৃষক যেভাবে ধান মাড়াই করে থাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মধ্যেও তেমন স্বাভাবিকতা ছিলো। তবে এটা তিনি কোন ফটোশেসন কিংবা মিডিয়ায় প্রচারের জন্য করেননি। চলার পথে নিজের ভালো লাগা থেকে কৃষকের সঙ্গে তিনি কিছুটা সময় কাটান।

তিনি করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এলাকার কর্মহীন মানুষের মাঝে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে ছুটে যান দুয়ারে দুয়ারে। ঠিক এমনিভাবে এবারের বোরো মৌসুমে করোনার মধ্যে সেদিন তিনি গিয়েছিলেন উপজেলার রাড়ুলী ইউনিয়নের কলমিবুনিয়া এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে। কাটাখালী বাজার পার হয়ে শ্রীকন্ঠপুরের মধ্যে দিয়ে ওয়াপদার রাস্তা হয়ে যাওয়ার সময় শ্রীকন্ঠপুর বিলে প্রচন্ড রৌদ্রের মধ্যে এক কৃষক ধান মাড়াই করতে ছিলেন। এটি দেখে তিনি তাৎক্ষনিকভাবে ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলেন। এক পর্যায়ে তিনি গাড়ী থেকে নেমে চলে যান প্রখর রৌদ্রে ফসলের মাঠে। ইঞ্জিনচালিত ধান মাড়াই মেশিন চলমান অবস্থায় কৃষকের পাশে দাঁড়িয়ে যান কৃষকবান্ধব উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়না। বেশ কিছুসময় তিনি কৃষকের পাশে দাড়িয়ে ধান মাড়াই করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ধান মাড়াইয়ের দৃশ্য দেখে আশে পাশের কৃষকসহ সফরসঙ্গী সবাই অবাক হয়ে যান। কৃষকের পাশে থেকে ধান মাড়াই করায় এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়নাকে ভূয়শী প্রশংসা করেন। সাধুবাদ জানান পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার ইকবাল মন্টু ও মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর।

এ প্রসঙ্গে মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, ইউএনও জুলিয়া সুকায়নার মধ্যে বহুমুখী প্রতিভা রয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক কাজ করেছেন, প্রকৃত অর্থে উনি একজন কাজের মানুষ, তিনি করেননি এমন কোন কাজ নেই।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top