খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ফ্লু কর্ণারে ভর্তি থাকা ৪ জন রোগীকে করোনা আক্রান্ত নয় বলে ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন ফোকাল পারসন (মুখপাত্র) ডাঃ শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। তার কথার উপর ভিত্তি করে ফ্লু কর্ণারের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেয় চারজনকে। সেখানে একদিন পরে তাদের করোনা হয়েছে বলে জানানো হয় খুমেক হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে। এতে করে মেডিসিন ওয়ার্ডের ভর্তি থাকা অর্ধশতাধিক রোগী, চিকিৎসক নার্সসহ শতাধিক রোগীর স্বজন পড়েছে করোনার মারাত্মক ঝুঁকিতে। ইতোমধ্যে ওই ওয়ার্ডের চিকিৎসক নার্সসহ ১০ জনের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী কোয়ারেন্টাইনে চলে গেছেন। এমন নানাবিধ কাজের জন্য ডাঃ শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাসকে খুমেক হাসপাতালের ফ্লু কর্ণারে ফোকাল পারসনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (০৩ জুন) দুপুরে খুমেক হাসপাতালের এক সভায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে চিঠি দিয়ে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে এক ব্যক্তির করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। কিন্তু হাসপাতালের নিবন্ধন খাতায় স্পষ্ট ঠিকানা না থাকায় তাকে খুঁজে পেতে বিপাকে পড়ে স্থানীয় প্রশাসন। প্রথমে জানানো হয়, ওই ব্যক্তি জেলার রূপসা উপজেলার কালীবাড়ী এলাকার বাসিন্দা। কিন্তু সেখানে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে ওই ব্যক্তির নামের সঙ্গে মিল থাকায় রূপসা উপজেলার এক সাংবাদিকের করোনা আক্রান্তের গুজব রটে। এতে বিপাকে পড়েন ওই সাংবাদিক ও তার পরিবার। পরবর্তী সময়ে প্রকৃত করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান মেলে নগরীর দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশায়। তিনি পেশায় একজন রিকশাচালক। বর্তমানে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
আরো পড়ুন:>> দালালের ক্ষমতা : পরীক্ষা ছাড়াই করোনা মুক্ত সনদপত্র দেয় খুলনা মেডিকেল
খুলনার সরকারি হাসপাতালগুলিতে আসা রোগীদের অস্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না লেখায় প্রতিনিয়ত এমন বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ। সর্বশেষ গত রবিবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআরে করোনা পজিটিভ আসা একই পরিবারের তিন সদস্যকে নিয়ে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়। তারা বর্তমানে খুলনার করোনা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের রোগী নিবন্ধকরা নিজেদের কষ্ট লাঘবে দিনের পর দিন এমন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব ব্যক্তি হাসপাতালের আসা রোগীদের নাম-ঠিকানা কোনো রকমে লিপিবদ্ধ করে দায়িত্ব শেষ করেন। অন্যদিকে এখানে রোগী না দেখে করোনা নেগেটিভ সনদ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগী নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, হাসপাতালে নাম নিবন্ধনকারীরা (বিশেষ করে খুলনা মেডিকেল কলেজের ফ্লু কর্ণারের দূর থেকে নাম-ঠিকানা, মোবাইল নম্বর নেন। এ ক্ষেত্রে তারা কাজটি সংক্ষেপে শেষ করেন। এতে ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। আবার রোগী না দেখে অনেক কর্মরত চিকিৎসক করোনাভাইরাস নেগেটিভ লিখে দিচ্ছেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেমনটি হয়েছে রবিবার শনাক্ত হওয়া একই পরিবারের তিনজনের ক্ষেত্রে। তারা গত ২৯ মে তাদের করোনা নেগেটিভ ছাড়পত্র নেন। ওই দিন তারা ফ্লু কর্ণার থেকে হাসপাতালের মেডিসিন সাধারণ ওয়ার্ডে অবস্থান নেন। এক দিন পর তারা সেখান থেকে চলে যান। তাদের ঠিকানা খুলনা নগরের শেখপাড়া হলেও সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশ ব্যাপক অভিযান চালিয়েও তা পায়নি। তারা নিজেরা আবার গত সোমবার সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফ্লু কর্ণারে উপস্থিত হন। পরে তাদের করোনা রোগীদের চিকিৎসাকেন্দ্র ডায়াবেটিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা পরিচয় গোপন করে ঠিকানা নগরীর শেখপাড়া উল্লেখ করেন।
আরো পড়ুন:>> খুলনায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে করোনা ভাইরাস, ছড়িয়ে পড়ছে জালের মত
এর আগে গত ১৭ মে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফ্লু কর্ণারে রোগীদের করোনামুক্ত সার্টিফিকেট দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগে আউটসোর্সিং কর্মচারী আরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে সাজা দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। নিরাপত্তাকর্মী আরিফুল ইসলাম কয়েকজনকে ৫০ টাকার বিনিময়ে করোনামুক্ত সার্টিফিকেট এনে দেন। এতে লেখা ছিল, ‘এই রোগী বর্তমানে সুস্থ, ভবিষ্যতে জ্বর-সর্দি ও কাঁসি হলে যোগাযোগ করবেন।’ ওই সার্টিফিকেট পেতে শ্রমিকদের চিকিৎসকদের কাছে যেতে হয়নি। তা ছাড়া সার্টিফিকেটে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সিল-স্বাক্ষরও ছিল।
নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসি মো. মোনতাজুল হক বলেন, কোনো রোগী হাসপাতালে তথ্য গোপন করলে অনেক ক্ষেত্রেই সংকট তৈরি হয়। সম্প্রতি তিন রোগীর ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুন্সি মো. রেজা সেকেন্দার বলেন, নানাবিধ ঘটনায় ডাঃ শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাসকে ফ্লু কর্ণারের ফোকাল পারসনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বুধবার দুপুরে বিষেশ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে তাকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সাথে ফ্লু কর্ণারের ফোকাল পারসন হিসেবে ডাঃ মিজানুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।