নিজম্ব প্রতিবেদক : খুলনার কয়রায় সড়ক সংস্কারে অনিয়ম ও ত্রুটিপূর্ণ কাজের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। নির্ধারিত কর্ম পরিকল্পনা এবং প্রাক্কলন অনুসরণ না করায় নির্মাণ কাজের শুরুতেই ভেঙে পড়েছে সড়কের গাইড ওয়াল। এছাড়া সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারে সড়কটির স্থায়িত্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মানুষ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ঝুঁকি বৃদ্ধি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের (ডিআরএমইপি) আওতায় দুই কোটি ২৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা চুক্তি মূল্যে ‘কয়রা হতে গোবরা বাজার সড়ক সংস্কার ও মেরামত’ কাজ চলমান রয়েছে। জাইকার অর্থায়নে ১ হাজার ৬৯৩ মিটার দৈর্ঘ্যরে সড়ক সংস্কার ও মেরামত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মেসার্স নিয়াজ ট্রেডার্স এ্যান্ড মেসার্স রাজু ইন্টারন্যাশনাল (জেভি) নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর (এলজিইডি) প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে রয়েছে। কার্যাদেশ অনুযায়ি কাজের মেয়াদ এক বছর আগে শেষ হলেও চলতি বছরের মার্চ মাসে সংস্কার কাজ শুরু করে ঠিকাদার।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশে শ্রমিকরা গর্ত খুড়ে তার নীচে বালু ভরাট করছেন। আবার কিছু শ্রমিক গাইড ওয়ালের পাশে মাটি ভরাট করছেন। সেখানে মাটি ভরাটের পর গাইড ওয়াল হেলে পড়তে দেখা গেছে। হেলে পড়া সেই ওয়াল আবার শ্রমিকরা ঠেলে সোজা করার চেষ্টা করছেন। এছাড়া নিমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারে বাঁধা দেওয়ায় স্থানীয় মানুষের সাথে বাক বিতন্ডায় জড়াতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। এ সময় কাজের সাইটে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অথবা এলজিইডির কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে শ্রমিকদের কাছ থেকে খবর নিয়ে আলিফ নামে এক ব্যাক্তিকে খুঁজে বের করা হয়। তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোক হিসেবে নিজের পরিচয় দেন।
তার কাছে কাজের অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কেভেটর দিয়ে মাটি ভরাটের সময় কিছু কাজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেটি ঠিক করার চেষ্টা চলছে। পরে এ ব্যাপারে মূল ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
মুঠোফোনে জানতে চাইলে প্রকল্পের ঠিকাদার আবুল ফজল রাজু বলেন, ‘আমার লাইসেন্স ব্যবহার করে কাজটি আলিফ নামে আমার পরিচিত একজন করছেন। আমি কখনও ওই কাজের সাইটে যায়নি। আলিফ নতুন লোক এ জন্য শুরুতেই হয়তো কিছু ত্রুটি হতে পারে। আমি তাকে বলে দেবো কাজ ভালভাবে করতে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, কয়েকটি গ্রামের লোকজন ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থিরা এ সড়ক দিয়েই যাতায়াত করেন। তাছাড়া যে কোন দুর্যোগে সড়কটি উপজেলা সদরের প্রতিরক্ষা বাঁধ হিসেবে বিবেচিত হয়। এ জন্য সড়কটি এলাকাবাসির কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সড়কটি সংস্কারে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
প্রকল্পের পার্শ্ববর্তি ২ নম্বর কয়রা গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল বৈদ্য অভিযোগ করেন, তারা জানতে পেরেছেন মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে আলিফ নামের এক ব্যাক্তি কাজটি সাব কন্ট্রাক্ট নিয়েছেন। এ কাজে তার কোন দক্ষতা নেই বলে মনে হয়েছে।
এলজিইডির উপসহকারি প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন, সংস্কার কাজের শুরুতে কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। সেগুলো সম্পর্কে ঠিকাদারকে সতর্ক করা হয়েছে।
জানতে চাইলে কয়রা উপজেলা প্রকৌশলী দারুল হুদা বলেন, প্রকল্পটির কাজ যথাযথ হচ্ছে কীনা তা বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। আমরা সে ব্যাপারে আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। সেখানে কোন ত্রুটি ধরা পড়লে অথবা কাজে কোন অনিয়ম হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।