নিজস্ব প্রতিবেদক : বছর শেষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে-এমন ভাবনায় খুলনা-৬ (কয়রা ও পাইকগাছা) আসনে দলীয় মনোনয়নের আশায় আ’লীগের ৫ তরুণ প্রার্থী আগাম তৎপর রয়েছেন। সড়ক, বাজারসহ এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এসব সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্যানা-পোস্টার বাড়ছে দিনে দিনে। একই সাথে দলীয় কর্মী ও এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। নির্বাচন নিয়ে অন্য কোন রাজনৈতিক দলের তেমন আনাগোনা চোখে না পড়লেও আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশিদের প্রতিযোগীতামূলক প্রচারণা বর্তমানে এলাকায় নির্বাচনী আমেজ তৈরী করেছে।
মনোনয়ন পেতে যাদের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে তাঁরা হলেন-জেলা আ’লীগের কোষাধ্যক্ষ প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, আওয়ামীলীগ কেন্দ্রিয় অর্থ ও পরিকল্পনা উপ কমিটির সদস্য এস,এম সাইফুল্যাহ আল মামুন, খুলনা জেলা আ’লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী প্রেম কুমার মন্ডল, জেলা আ’লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, স্বাচিপ নেতা ডা. শহীদুল্লাহ। এছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্য মো. আকতারুজ্জামান বাবু ও সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব আলী সানা রয়েছেন এ তালিকায়।
মনোনয়ন প্রত্যাশিদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য আকতারুজ্জামান বাবু ও সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব আলী সানা বাদে বাকি ৫ জনই নতুন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নবীন-প্রবীন সকলেরই তৎপরতা দেখা গেলেও স্থানীয় ৫ জন তরুণ প্রার্থীর প্রতিযোগীতামূলক প্রচারণা এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। দিন-রাত মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। দলের নেতা-কর্মীদের কাছে টানতে চেষ্টার অন্ত নেই তাঁদের।
দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করে আসছেন প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম। দলের বিভিন্ন কর্মসুচীতে তাঁর উপস্থিতি এবং দলের স্থানীয় সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, এলাকার সন্তান হিসেবে যতটুকু পেরেছি মানুষের আস্থা অর্জনে কাজ করে যাচ্ছি। একই সাথে আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করছি। মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে এলাকার সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখব।
তরুণ প্রার্থী সাইফুল্যাহ আল মামুন বলেন, ছাত্রজীবন থেকে আওয়ালীলীগের রাজনীতির সঙ্গে আছি। আমার পরিবারও এলাকায় ‘আওয়ামী পরিবার’ হিসেবে পরিচিত। আমার বাবা সানা ইউনুসুর রহমান ছিলেন কয়রা উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাকালিন সাধারণ সম্পাদক। তাঁর পরিশ্রমে দল সাংগাঠনিকভাবে এলাকায় অনেক শক্তিশালী হয়েছে। তাঁর সন্তান হিসেবে এবং বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শ সৈনিক হিসেবে এবার নিজ এলাকার জন্য মনোনয়ন চাইব।
আরেক তরুণ মনোনয়ন প্রত্যাশি প্রকৌশলী প্রেম কুমার মন্ডল বলেন, আমি মনে করি এলাকার মানুষের সেবায় কাজ করার সময় এখন। গত নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছিলাম, এবারও চাইব। সে জন্য এলাকায় সরকারের উন্নয়নের চিত্র সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরছি। মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে কি কি কাজ করব সে পরিকল্পনাও মানুষের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
জানা গেছে, এবারই প্রথম দলীয় মনোনয়ন পেতে এতো বেশি সংখ্যক নেতা ব্যাপকভাবে তৎপরতা চালাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত অন্য কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের আনাগোনা দেখা না গেলেও সরকার দলীয়দের মধ্যে মনোনয়ন প্রতিযোগীতা এলাকায় নির্বাচনী আমেজ তৈরী করেছে। হাটে, বাজারে চায়ের আড্ডায় এসব প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা চলছে। তাদের নিজ নিজ অনুসারিরা মটরসাইকেল শোভাযাত্রাসহ প্রচারণা চালাচ্ছেন। জাতীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানেও প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সম্প্রতি খুলনা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব আলী সানা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি বলেন, বহিরাগত কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তাঁরা নিজেদের স্বার্থে দলের মধ্যে সুকৌশলে বিভাজন তৈরীর পাশাপাশি ‘ভাইলীগ’ সৃষ্টি করেন। এসব ‘ভাইলীগে’র দাপটে দলের ত্যাগি নেতারা কোনঠাসা হয়ে পড়েন। এ কারণে নেত্রির কাছে আমার দাবী থাকবে এসব ‘ভাইলীগ’ সৃষ্টির কারিগরদের যাতে এবার প্রাধান্য দেওয়া না হয়।
দলের স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাধীনতা পরবর্তি সময় থেকে এখন পর্যন্ত এ জনপদের উন্নয়নে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। অভ্যন্তরিণ সড়কের উন্নয়ন না হওয়ায় এখনও অনেক ইউনিয়নের মানুষকে নৌকা ও ট্রলারে যাতায়াত করতে হয়। এর মধ্যে কয়রা উপজেলার দক্ষিন বেদকাশি ও পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ কমেনি আজও।
সাধারণ মানুষের দাবী, অবহেলিত জনপদের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া দরকার। এ জন্য স্থায়ি বাসিন্দাদের মধ্যে থেকে কেউ প্রতিনিধি নির্বাচিত হলে এলাকার মানুষের দুঃখ-দুর্দশাগুলি উপলব্ধি করে উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন।