ডেস্ক রিপোর্ট, Prabartan | প্রকাশিতঃ ১৩:০২, ১৮-০৫-১৯
ঈদের আগে সোনার ফসল ঘরে আসতে দেখে আশায় বুক বেধে ছিলেন কৃষক রমজান আলী। ধান বিক্রি করে পরিবারের সবাইকে নতুন পোশাক দিয়ে ধুমধাম করে ঈদ করার ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু কষ্টের ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে আসন্ন ঈদ আনন্দও নিরানন্দে পরিণত হয়েছে।
রমজান আলী লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের শৈলমারী গ্রামের বাসিন্দা। স্ত্রী সন্তান ও মা বাবা মিলে ৬ সদস্যের সংসারে সব ধান বিক্রি করেও ঈদের মোটা কাপড় কেনা সম্ভব হচ্ছে না তার।
পরিবারের খাদ্যের যোগান আসবে কিভাবে? সেটাও ভাবিয়ে তুলছে এ প্রান্তিক কৃষককে। স্ত্রীর জন্য একটা মোটা কাপড় কিনতেও ধান বিক্রি করতে হচ্ছে দেড় থেকে দুই মণ।
কৃষক রমজান আলী জানান, হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দুই বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছিলেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে বাম্পার। ঈদুল ফিতর আসার আগেই ধান ঘরে আসতে দেখে মহাখুশি হয়েছিলেন তিনি ও তার পরিবার। কিন্তু সেই ধান ঘরে না আসতেই বাজার মূল্যের দরপত হওয়ায় নিরাশ হয়ে পড়েন তিনি। ঈদ আনন্দ তো দূরের কথা ধানের উৎপাদন খরচও উঠছে না। বিঘা প্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। ফলে আনন্দের ঈদ নিরানন্দে পরিণত হয়েছে তার পরিবারে।
রমজান আলী বলেন, হামারো দাম নাই, হামার ধানেরও দাম নাই। কৃষক মরিলেও কারো কিচ্ছু হয় না। ধান বেচেয়া ঈদ করনো হয়। সেই ধানের দাম নাই। হামার আরো ঈদ আছে ভাই? শুধু রমজান আলীই নন, ঈদের আনন্দ মলিন হতে বসেছে গোটা জেলার প্রতিটি কৃষক পরিবারে। এ বছর লোকসানের মুখে পড়ে কৃষিকাজে আস্থা হারাচ্ছেন এ অঞ্চলের বহু কৃষক। তাই লোকসান থেকে বাঁচতে সরকারের কাছে ধানের বাজার মূল্য বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
এক হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান ক্রয়ের যে ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সেখানে দাম পছন্দ হলেও পরিমাণে অনেক কম। জেলার ৫টি উপজেলা থেকে মাত্র এক হাজার মেট্রিক টন ধান কিনবে সরকার। কৃষক প্রতি ৫শ’ কেজি হলেও সরকারকে মাত্র দুই হাজার কৃষক ধান দেয়ার সুযোগ পাবে। সিংহভাগই বঞ্চিত হবেন। এরপরও রাজনৈতিক প্রভাবে প্রকৃত কৃষকরা এ সুযোগ বিগত দিনেও পায়নি। চলতি বছরেও না পাওয়ার শঙ্কা কৃষকদের। এজন্য শক্ত মনিটরিং দাবি করেন তারা।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা বালাপাড়া গ্রামের আরেক কৃষক তাহাজুল ইসলাম জানান, এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে খরচ হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। সেই এক বিঘা জমির ধান বিক্রি করলে সর্বচ্চ ৭ হাজার টাকা আসে। খরচের তিন হাজার টাকাই ঘাটতি থাকছে।
তিনি বলেন, এ বছর ঋণ করিয়া ধান আবাদ করে লচ (লোকসান) হইলো। সামনের বার আর ধানের আবাদ করবার নই, বাহে। এত লচ কি মেকাপ করা যায়? বছরে একবার রমজানের ঈদে সবাই নতুন কাপড় কিনি। কিন্তুক এবার আর হইলো না।
আসন্ন ঈদের বাজারেও পড়েছে ধানের মন্দা প্রভাব। ঈদ বলেই নয়। ধান মাড়াই শুরু হলে স্থানীয় বাজারগুলোতে বিকিকিনি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু এ বছর আসন্ন ঈদেও জমে ওঠেনি ঈদ বাজার। ঈদের ব্যবসা নিয়েও বড্ড চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। এখনো জেলার মার্কেটগুলো ক্রেতা শুন্যতা বিরাজ করছে। বিগত দিনে রমজান শুরু হলেই ঈদের আগাম কেনাকাটা শুরু হয়ে যেত এ জেলায়। কিন্তু ধানের বাজারে দরপতনের প্রভাবে ঈদ মার্কেটও ক্রেতা শুন্য হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাট শহরের প্রাণ কেন্দ্র মিশন মোড়ের কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক রাজা জানান, ধান মাড়াই শুরু হলেই বিক্রি বেড়ে যায়। কিন্তু এ বছর ঈদেও আশানুরূপ ক্রেতা নেই মার্কেটে। ধানের দাম কম থাকায় কেনাকাটায় আগ্রহ নেই কৃষকদের। ঈদের জন্য বাহারি ডিজাইনের কাপড় নিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এবার ঈদের বাজার তেমন একটা জমে উঠবে না বলেও মন্তব্য করেন এ ব্যবসায়ী।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিদু ভুষণ রায় জানান, এ বছর ৪৮ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও প্রায় ৩ হাজার হেক্টরেরও বেশি আবাদ হয়েছে। সরকার নির্ধারিত বাজার মূল্যে ধান সংগ্রহ শুরু করলে বাজারে ধানের মূল্য বাড়বে এবং কৃষকরাও লাভবান হবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।