বগুড়ায় উপ-নির্বাচন; শুরু হয়েছে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

ডেস্ক রিপোর্ট, Prabartan | প্রকাশিতঃ ১৮:১৮, ১১-০৫-১৯

কথায় শুন্য মনে হলেও আসলে নেতাকর্মীতে ঠাসা। ক্রমাগত বেজে চলেছে বগুড়ার উপ-সংসদ নির্বাচনের খবর। বগুড়া-৬ (সদর) আসনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম শপথ না নেওয়ায় এবং আসনটি শুন্য ঘোষণার পর থেকে বগুড়ার সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। কেন্দ্র থেকে শুরু করে ভোটারদের কাছে ও দলীয় নেতাকর্মীসহ সবখানেই প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন উপ-নির্বাচনের প্রার্থীরা।

রমজানেও মাসেও থেমে নেই প্রার্থীরা। নানা কৌশলে আর নানাভাবে নির্বাচনের খবর পৌঁছে দিচ্ছেন ভোটারদের কাছে। বিএনপির ঘাটিখ্যাত এই আসনে কে হবেন ধানের শীষের প্রার্থী তা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিলেও নৌকার মাঝি হতে মাঠে নেমেছেন অর্ধ ডজন প্রার্থী। আর মহাজোটের প্রার্থী হয়ে পরাজিত হলেও আবারও উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বগুড়া সদর আসনের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চান জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ওমর। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন মোটর শ্রমিক নেতা সৈয়দ কবির আহম্মেদ মিঠু।
বগুড়া জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শপথ না নেওয়ায় এই আসনটি শুন্য ঘোষণা করা হয়। বগুড়া সদর আসন শুন্য ঘোষণার পর থেকেই উপ নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাই এমন পোস্ট করেন নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ ভোট গ্রহনের তারিখ ঘোষণার পর নড়েচড়ে বসেছে প্রার্থীরা। দলীয় হাইকমান্ডে লবিংসহ ভোটারদের পক্ষে টানতে কাজ শুরু করেছেন একাধিক প্রার্থীরা। প্রার্থী হতে আগ্রহীদের পক্ষে মনোনয়ন পেতে চলছে নানা কৌশলে দৌড়ঝাঁপ। তবে আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও বিএনপি এই আসন নিয়ে উপ নির্বাচন বিষয়ে মুখ খুলছে না।

বগুড়া-৬ (সদর) আসনটি দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির দখলেই ছিল। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বর্জন করায় মহাজোটের প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ওমর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সর্বশেষ বিরোধিদলীয় চীফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমর বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে পরাজিত হন। মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শেষ পর্যন্ত শপথ না নেওয়ায় আসনটি শুণ্য ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি ২৪ জুন নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে তফসীল ঘোষণা করলে বগুড়া সদর আসনে প্রার্থী হতে একাধিক নেতা কর্মী মাঠে নেমেছে।

দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন মোটর শ্রমিক নেতা সৈয়দ কবির আহম্মেদ মিঠু। তিনি শ্রমিক সংগঠন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, তরুণ শিক্ষার্থী, ভোটার এবং বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তিনি নিজেকে তুলে ধরছেন এবং নিজের জন্য দোয়া কামনা করছেন।

বগুড়া-৬ সদর আসনে উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক পৌর চেয়ারম্যান এড. রেজাউল করিম মন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের তিনজন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, টি জামান নিকেতা, মঞ্জুরুল আলম মোহন, জেলা আওয়ামীলীগের প্রয়াত সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের ছেলে বগুড়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন।

তবে এই মুহুর্তে মাসুদুর রহমান মিলন সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন। ব্যবসায়ী নেতা, ক্রীড়া সংগঠক, এফবিসিসিআই এর পরিচালক মাসুদুর রহমান মিলনের নামে জেলা শহরে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীরা সাইনবোর্ড, ফেস্টুন, ব্যানার ঝুলিয়েছেন। ইতিমধ্যেই তার প্রার্থীতার জন্য সামাজিক যোগাযোগে চলছে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু বিভিন্নভাবে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জাতীয় পার্টি থেকে বিগত দুটি নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম ওমর মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি এ আসনে জাপার একক প্রার্থী এবং মহাজোটের মনোনয়ন তিনিই পাবেন বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।

জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান এড. রেজাউল করিম মন্টু জানান, তিনি ইতিপূর্বে বগুড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে উন্নয়ন কাজ করেছেন। উপ-নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে প্রত্যাশা করেন।

বগুড়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন বলেন, তার পিতা দীর্ঘসময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি থেকে তিনি বগুড়ার উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। এটি বগুড়াবাসি জানে। কিন্তু তিনি কখনো সংসদ সদস্য হননি। আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে থেকেছেন সাধারণ মানুষের সাথে। তিনি আজ নেই। বগুড়ার উন্নয়ন এগিয়ে নিতেই তিনি নৌকা প্রতিকে ভোট করতে ইচ্ছুক। দল তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচিত হবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

বগুড়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান সফিক জানান, আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখাসহ বগুড়ার উন্নয়ন এগিয়ে নিতে উপ নির্বাচনে প্রয়াত জেলা সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের ছেলে ক্লিন ইমেজের ব্যবসায়ী নেতা, সংগঠক মাসুদুর রহমান মিলনের বিকল্প নাই।

সাবেক বিরোধিদলীয় চীফ হুইপ নুরুল ইসলাম ওমর বলেন, বিগত ৫ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নয়ন পৌঁছে দিয়েছি। উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে তিনি আবারো মনোনয়ন চাইবেন। তবে বগুড়া জেলা বিএনপির আহবায়ক ভিপি সাইফুল ইসলাম উপ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীতা নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top