ডেস্ক রিপোর্ট, Prabartan | প্রকাশিতঃ ২১:৫৫, ০৪-০৫-১৯
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বেড়েছে মরিচের ঝাল। বাজারে একদিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি মরিচের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। এছাড়া ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে অন্যান্য সবজি, মাছ ও মাংসের। একই সঙ্গে বাজারে শনিবার (০৪ মে) ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উপস্থিতিও ছিল কম।
সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। মাংসের দামের মধ্যে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৫ টাকা, গরুর দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। তবে লেয়ার, কক, দেশি মুরগি ও খাসির মাংসের দাম বাড়েনি। বেড়েছে সব ধরনের মাছের দাম প্রতি কেজিতে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা বেড়েছে। তবে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চিনি, পেঁয়াজ, ছোলা, আদা, রসুন, আলু। একদিনের ব্যবধানে সবজির দাম ১০ থেকে ৩০ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। অপরিবর্তিত রয়েছে চাল, ডাল, লবণসহ বেশিরভাগ মুদিপণ্যের দাম।
শনিবার রাজধানীর নয়াবাজার, রায়সাহেব বাজার, সূত্রাপুর বাজার, শ্যামবাজার, দয়াগঞ্জ বাজার, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর কয়োটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন অস্বস্তি দেওয়া সবজির দাম শুক্রবার (৩ মে) একটু কমলেও শনিবার আবারও বেড়েছে।
বাজারে এখন বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। যা শুক্রবার বিক্রি হয়েছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। পণ্যের দাম বাড়লেও শনিবার বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাক ছিল কম। সকাল ৯টায়ও বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় একেবারেই কম। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মরিচ ও পেঁপের। পণ্য দুইটি মধ্যে মান ও বাজারভেদে মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। যা শুক্রবার বিক্রি হয়েছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। সে হিসেবে মরিচের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকা। আর পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, আর কাঁচা পেঁপে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো ও শসা। একদিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ টাকা।
প্রতিকেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, সজনে ডাটা ৮০ থেকে ১০০, বরবটি ৫০ থেকে ৬০, কচুরলতি ৫০ থেকে ৬০,কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। প্রতিকেজি ধুন্দুল ৭০, বেগুন মানভেদে ৫০ থেকে ৭০, মূলা ৪০, গাজর ৪০ থেকে ৫০, এবং ঢেঁড়শ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাঁচা মরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। প্রতিকেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। একদিনের ব্যবধানে মরিচের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা।
দাম অপরিবর্তিত থাকা অন্য সবজির মধ্যে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে ছিল ২৮থেকে ৩২ টাকা। সে হিসেবে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে গড়ে ৫ টাকা। আর প্রতিকেজি আলুর বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকা, যা আগে ছিল ১৫ টাকা। আর বাজার ও মানভেদে আমদানি করা চায়না রসুন ও আদা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১২০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ টাকা। দেশি রসুন ও আদা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১১০ টাকায়। সেহিসেবে প্রতি কেজি আদা রসুনে দাম বেড়েছে ২০ টাকা।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সবজি ব্যবসায়ী আবুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝঢ় ফণীর কারণে দেশের সব পথে পণ্য সরবরাহ কম হয়েছে। বিশেষ করে নৌ পথে তো বৃহস্পতিবার থেকে চলাচল বন্ধ। সড়ক পথ চালু থাকলেও ফেরি পারাপার না হওয়ায় কোনো ধরনের সবজি ঢাকায় প্রবেশ করতে পারেনি। যে সবজি দেখা যাচ্ছে তা ঢাকার আশেপাশের সবজি। অন্যান্য দিনের তুলনায় সবজির সরবরাহ অর্ধেক হয়েছে। ফলে সব ধরনের সবজিকে ৫ থেকে ১০ টাকা দাম বেড়েছে। গতকাল আমরা যে সবজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। আজ সে সবজি ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করছি। এ ধরনের বৈরী আবহাওয়া যদি আরো দুই একদিন থাকে তাহলে এই সবজির দাম ৮০ টাকা হয়ে যাবে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। বেশি দামে কিনলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। লোকসান দিয়ে বিক্রি করলে বাচবো কেমনে।
সূত্রাপুর বাজারে বাজার করতে আসা বিপ্লব জানান, দু’দিন পর রমজান এখন যদি এ অবস্থা হয় তাহলে রোজার মধ্যে কি খাবো? বাজারে তো কোনো জিনিসের কমতি দেখলাম না। ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলেই দাম বাড়ায়। এটা যেন তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। বৈশাখ মাসে ঝড় হবে এটাই স্বাভাবিক। এজন্য পূর্ব প্রস্তুতিও নিয়েছে সরকার। কিন্তু এই কাঁচা বাজারে নিয়ে সরকার বা সংশ্লিষ্ট কারো মাথা ব্যাথা নেই।
মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দাম এক দিনের ব্যবধানে সরবরাহের ঘাটতি দেখিয়ে কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়। যা গতকাল বিক্রি হয়েছিল ১৫০ টাকা। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে লাল লেয়ার মুরগির দাম। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। আর পাকিস্তানি কক প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২৫০ টাকা। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। মুরগির মতো গরুর মাংসেরও দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেতে ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৩০ থেকে ৫৫০ টাকা। যা গতকাল ছিল ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে খাসির মাংসের দাম। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭২০ থেকে ৮০০ টাকা।
মাংসের দামের পাশাপাশি বেড়েছে মাছের দাম। ঝড়ের কারণে শনিবার বাজারে মাছের গাড়ি এসেছে কম। ফলে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ছোট বড় সব ধরনের মাছের দাম। কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে মাছের দাম। বাজারে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। পাঙাশ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি, রুই ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, বাইলা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, টেংরা কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, চিতল ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া এখনও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। বাজারে ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশের দাম দুই হাজার টাকা। নদীর ৯শ’ থেকে ১ কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ তিন হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। এক কেজি ১০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের বড় ইলিশও কিছু বাজারে দেখা গেছে। দাম চাইছে প্রতি কেজি চার হাজার টাকা। আর দেড় কেজি বা দুই কেজির কাছাকাছি ওজনের ইলিশের প্রতি কেজির দাম চাওয়া হচ্ছে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। তবে ৫শ’ গ্রামের নিচে এক হালি ইলিশের দাম তিন হাজার টাকা। তবে বার্মিজ ও সাগরের ইলিশের দাম তুলনামুলকভাবে কম।
অপরিবর্তিত রয়েছে চাল ও অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম। বাজারে প্রতি নাজির ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮নম্বর ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬টাকা, প্যাকেট ৩২টাকা, ডাল ৪০ থেকে ৯০, লবণ ৩০ থেকে ৩৫, পোলাউর চাল ৯০ থেকে ৯৫। প্রতিকেজি খোলা আটা ২৭ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, খোলা ময়দা ২৮ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা।
এদিকে বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি করা হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫১ টাকায়। সে হিসেবে দাম গড়ে ৫ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজারে দাম বেশি হলে মিলগেটে কমেছে দাম। এছাড়া গত ২৮ এপ্রিল থেকে কেজিতে ২ টাকা কমেছে তেলের দাম। এখন থেকে বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১০২ টাকা, দুই লিটার ২০২ টাকা এবং ৫ লিটার ৫০০ টাকা। যা আগে ছিল যথাক্রমে ১০৪ টাকা, ২০৬ টাকা এবং ৫১০ টাকা। বর্তমানে তেলের ইনভয়েস মূল্য এক লিটার ৯০ টাকা, দুই লিটার ১৭৮ টাকা ও পাঁচ লিটার ৪৪৫ টাকা, যা আগে ছিল যথাক্রমে ৯২ টাকা, ১৮২ টাকা ও ৪৫৫ টাকা। আর বাজারভেদে মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন ১১০ থেকে ১২০ টাকা। দেশী মুরগির ডিম ১৫০ টাকা ডজন বিক্রি হতে দেখা গেছে।