কাকতালীয় ঘটনার যত রকমফের

ডেস্ক রিপোর্ট, Prabartan | প্রকাশিতঃ ২১:৪২, ০৪-০৫-১৯

জীবনে হরহামেশাই ছোট বড় কাকতালীয় ঘটনা ঘটে থাকে! যেমন আজকে আপনি কোনো এক বন্ধুর কথা ভাবছেন, অনেক দিন পর আজকেই হঠাৎ তার দেখা পেয়ে গেলেন। আবার সকাল থেকেই হয়তো মাথায় ঘুরছে পুরনো কোনো গান, এই গানটি হঠাৎ রেডিও বা টিভিতে বেজে উঠলো। এসব টুকিটাকি ঘটনাকে আমরা খুব স্বাভাবিক হিসেবেই ধরে নেই। বেশিরভাগ সময়ই এসব কাকতালীয় ঘটনার কোনো অর্থ থাকেনা কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যায় যা প্রত্যক্ষভাবে বিস্ময়কর, অথবা এমন একটি ঘটনা যা বিশ্বের ঘটনাগুলোতে বড় প্রভাব ফেলে। এমনই বেশ কিছু বিস্ময়কর, অসাধারণ, অথবা ইতিহাসে কেবলমাত্র সামান্য কৌতুহলপূর্ণ কাকতালীয় ঘটনার বর্ণনা এবং কীভাবে তারা বিশ্বকে প্রভাবিত করেছে তা দেয়া হল। এ ঘটনাগুলো অন্তত মানুষকে অবাক করে দিতে সমর্থ্য হয়েছিল-

দুই ফিনিশীয় যমজ

বাই-সাইকেল

২০০২ সালে, ফিনল্যান্ডের রাহেতে ৭০ বছর বয়সের দুই অভিন্ন যমজ ভাই ট্রাকের ধাক্কায় মারা যায়। দুই ভাই আলাদা আলাদাভাবে তুষারঝড়ের মধ্য দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু অবাক করা ব্যাপার যেটি ছিল সেটি হল তারা দু’জন একই বছর, একই দিনে, একই রাস্তায়, একইভাবে মারা যান। তফাৎ শুধু এটুকুই ছিল যে দ্বিতীয় জন প্রথম জনের ১ ঘন্টা পর দূর্ঘটনায় মারা যান। এমনকি দ্বিতীয়জন মারা যাওয়ার সময় এটিও জানতেননা যে ঠিক একটু আগেই তার ভাই এখানে মৃত্যুবরণ করেছেন।  অবশ্যই, অভিন্ন যমজদের মধ্যে অস্বাভাবিক মিল লক্ষ্য করা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। এমন অনেক রেকর্ড আছে যেখানে এমন জিনগত কারণে সম্পূর্ণ একই রকম জীবনধারা, খাদ্য পছন্দ এবং একই রকম অভ্যাস পেয়ে থাকে। তবে কাকতালীয় হচ্ছে অনেক সময় দেখা যায় এদের জীবনসঙ্গীর নামও এক হয়। ঠিক যেভাবে দুই ফিনিশীয় ভাইয়ের জন্মের সাথে সাথে মৃত্যুও মিলে গিয়েছিল একইভাবে।

 

কেনেডি – লিংকন সংযোগ

কেনেডি ও লিঙ্কন

এই দুই রাষ্ট্রপতির মাঝে অসংখ্য কাকতালীয় ঘটনা লক্ষ্য করা যায়, যা সত্যিকারভাবে অবাক হওয়ার মত। উদাহরণস্বরূপ, এরা দু’জনই প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল ১০০ বছর বাদে। ১৮৬০ সালে নির্বাচিত হয় আব্রাহাম লিঙ্কন এবং ১৯৬০ সালে জন এফ কেনেডি। তাদের জিতে যাওয়ার পেছনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল দু’জন জনসন এবং এই জনসনেরা জন্মগ্রহণ করেন ১০০ বছরের পার্থক্যে, ১৮০৮ সালে অ্যান্ড্রু জনসন, ১৯০৮ সালে লিন্ডন জনসন। এই দুই প্রেসিডেন্টের হত্যাকারীরাও ১০০ বছর এর তফাতে জন্মগ্রহণ করেন, ১৮৩৯ সালে জন্ম নেন বুথ এবং ১৯৩৯ সালে ওসওয়াল্ড। এই দুই হত্যাকারী বিচার হওয়ার পূর্বেই মারা যান। আব্রাহাম লিঙ্কনকে একটি থিয়েটারে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল এবং তার হত্যাকারীকে গুদাম থেকে আটক করা হয়, অপরদিকে কেনেডিকে একটি গুদামঘরের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল এবং তার হত্যাকারীকে থিয়েটার থেকে বন্দী করা হয়েছিল। অবশেষে, লিঙ্কনকে ফোর্ডের থিয়েটারে গুলি করে হত্যা করা হয়, আর কেনেডিকে হত্যা করা হয় যখন তিনি তার ফোর্ড লিংকন গাড়িতে ছিলেন। এখানেই শেষ নয়, কেনেডি এর লিঙ্কন (ইভলিন লিঙ্কন) নামে একজন সেক্রেটারি ছিলেন, অপরদিকে লিঙ্কনের কেনেডি নামে একজন সেক্রেটারি ছিলেন।

 

যুগ্ম হত্যা – ১৫৭ বছরের ব্যবধানে

বারবারা ফরেস্ট ও মেরি এ্যাশফোর্ড

এই কাকতালীয় ঘটনাটি কিছুটা ভয়াবহ। বারবারা ফরেস্ট এবং মেরি এ্যাশফোর্ড, দুই নারী ইংল্যান্ডের বার্মিংহামের বাইরে পাঁচ মাইল দূরে এডিংটন গ্রামে বসবাস করতেন। সেখানে তারা একই ধরনের অপরাধের শিকার হন। দুজনে’র বয়সই ছিল ২০ বছর, এমনকি জন্মদিনও একই দিনে। দু’জনকে একইভাবে ধর্ষণ করার পর গলা টিপে হত্যা করা হয় এবং তাদের মৃতদেহ ৩০০ গজ দূরে পাওয়া যায়। দু’জনের মৃতদেহও পুলিশ একই দিনে উদ্ধার করে। দিনটি ছিল ২৭ মে, পার্থক্য শুধু ১৫৭ বছর আগে পরে (১৮১৭ এবং ১৯৭৪)! তারা দু’জনই সন্ধ্যায় একটি নাচের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল। সম্পূর্ণ নতুন পোশাক পড়ে সেই অনুষ্ঠানে তাদের খুনির সাথে দেখা হয়। তবে সবথেকে বড় কাকতালীয় ব্যাপারটি ছিল তাদের খুনীর নাম। তাদের দু’জনের খুনীর নামই ছিল থর্নটন। একে আপনি কাকতালীয় বলবেন নাকি থর্নটন এর পুনর্জন্ম?

 

টাইটানিক এবং দ্য টাইটান

ডুবন্ত অবস্থায় টাইটানিক জাহাজ

টাইটানিক জাহাজ এবং এর ডুবে যাওয়া সম্পর্কে জানে না এমন কাউকে হয়তো বর্তমানে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এর সাথেও জড়িত রয়েছে এক বিস্ময়কর ঘটনা যা অনেকেরই অজানা! ১৯৯৮ সালে লেখক মর্গান রবার্টসন (১৮৬১-১৯১৫), একটি সাহিত্য রচনা করেন ‘Futility; The Wreck of The Titan’ নামে। তার গল্পে তিনি এক ব্রিটিশ জাহাজের সমুদ্রযাত্রার রুপরেখা করেন। যার অধিকাংশ যাত্রী ছিল অভিজাত বংশের, ঠিক যেমনটি আমরা টাইটানিক সিনেমায় দেখতে পাই। মর্গানের গল্পের জাহাজটির নাম ছিল এইচ এম এস টাইটান। যে জাহাজটি উত্তর আটলান্টিক পার হওয়ার সময় একটি বরফ খন্ডের সাথে ধাক্কা খায় এবং পর্যাপ্ত লাইফ বোটের অভাবে বিশাল সংখ্যক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়। কাল্পনিক এই গল্প প্রকাশিত হওয়ার প্রায় ১৪ বছর পর প্রায় একই নামের বিলাসবহুল এই জাহাজের ডুবে যাওয়ার ঘটনার সাথে অবিশ্বাস্য মিল খুঁজে পাওয়া যায়, যার পুরোটাই কাকতালীয় ছাড়া আর কিছুনা। কাল্পনিক টাইটান এবং বাস্তবিক টাইটানিক দু’টোই ছিল ট্রিপল স্ক্রু লাক্সারি জাহাজ এবং ৮০০ ফিট লম্বা, দু’টোই ২৫ নটে চলছিলো এবং দু’টো ঘটনাই এপ্রিল মাসে ঘটে। মর্মান্তিক এই দূর্ঘটনা দু’টিতেই ২ হাজার ৫০০ এর মত মানুষ নিহত হয়। তবে সবই যে মিলে গিয়েছিল তা নয়। টাইটান আইসবার্গের সাথে ধাক্কা খেয়ে খুব দ্রুত ডুবে যায় আর টাইটানিক ধাক্কা খাওয়ার প্রায় ২ ঘন্টা পর ডুবে যায়।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top