‘বাবুলাল’ থেকে সিনেমায় যেভাবে ‘জাম্বু’ হয়ে উঠেন তিনি

jambu32.jpg

‘বাবুলাল’ থেকে সিনেমায় যেভাবে ‘জাম্বু’ হয়ে উঠেন তিনি

বিনোদন ডেস্ক : সত্তর, আশি, নব্বইয়ের দশকের সিনেমার দর্শকরা জাম্মুকে এক নামেই চিনে ফেলবেন। কিন্তু এই প্রজন্মের দর্শকদের কাছে খুব  একটা পরিচিত নন । সে সময়কার সিনেমায় ভয়ংকর এক রুপ ছিল তার । তিনি জাম্বু। হ্যাঁ দর্শকরা তাকে এই নামেই চিনতেন।  সিনেমায় যিনি ছিলেন নির্মম আর নিষ্ঠুর।

এই জাম্বু ২০০৪ সালের ৩ মে মারা যান। আজ তার মৃত্যুবার্ষিকী। সিনেমায় দাপুটে খল অভিনেতা হলেও আজকের সিনেমা সংশ্লিষ্ট মানুষরা তাকে মনে রাখেনি। তাই তার জন্ম ও মৃত্যুর দিন অনেকটা সরণহীন হয়েই কেটে যায়।

সিনেমায় জাম্বু নাম পরিচিত পাওয়া এই খল অভিনেতার আসল নাম ছিল বাবুলাল। কিন্তু সিনেমায় কেনো তার নাম হয়ে উঠে জাম্বু? খোঁজ নিয়ে জানা যায় নামটি দিয়েছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। চলচ্চিত্রের পর্দায় তিনিই জাম্বুকে নিয়ে আসেন।

জনপ্রিয় এই খল অভিনেতার মৃত্যুর দিনে আলাপ হয় পরিচালক ঝন্টুর সঙ্গে।  তিনি তার নাম রাখার বিষয়টি নিয়ে বলেন,  ‘সেটা ১৯৭২ সালের ঘটনা। আমি তখন পপুলার স্টুডিওতে লিডার সিনেমার শুটিং করছিলাম। পপুলার স্টুডিওটা নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার আগে। এটা বাংলাদেশের প্রথম পরিচালক আব্দুল জব্বার খানের স্টুডিও ছিল। তো শুটিং চলাকালীন দেখি একটা ছেলে আসছে লম্বা-চওড়া। জিজ্ঞেস করলাম নাম কী? বলল, বাবুলাল। জিজ্ঞেস করলাম, অভিনয় করবে? সে বলল, হ্যাঁ করব। আমি তখন বললাম শর্ত রয়েছে…।’

গল্পের এই পর্যায়ে ঝন্টু থামলেন।ফের ১৯৭২ সালে ফিরে গেলেন। সদ্য মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়া দেশের সংস্কৃতি পুনর্নির্মাণ কাজে ব্যস্ত। হয়তো সে দৃশ্য আরো চোখের সামনে এনে পরিষ্কারভাবে দেখতে চাইলেন। বললেন, ‘আসলে মারপিটের একটা দৃশ্য আছে। বিপরীত দলে বাবুলালের মতো একটা ছেলে থাকলে ভালো হয়। আমি ওকে শর্ত দিলাম, মাথা ন্যাড়া করে অভিনয় করতে হবে। সে বলল, তা-ই করবে। এরপর মাথা ন্যাড়া করে দিলাম। সত্যি তাঁকে এবার দেখতে বড়সড় একজন মাস্তানের মতোই লাগছিল। আমি ওর নাম দিলাম জাম্বু।’

এই পর্যায়ে নির্মাতা ঝন্টুকে থামিয়ে গল্পের ধারাবাহিকতাটাকে একটু ব্যাহত করলাম। কারণ আমার জানা দরকার জাম্বু নামটি কেন দেওয়া হলো। এ প্রশ্ন করতেই ঝন্টু নিমেষেই উত্তর দিতে প্রস্তুত। কেননা স্পষ্ট মনে আছে- ঝন্টু বললেন, ‘বড় বিমানকে বলা হয় জাম্বো জেট। আর বাবুলাল দেখতেও বেশ বড়সড় ছিল। নামটা সে ভালোভাবেই গ্রহণ করল। এই নামটাই ফিল্মে ছড়িয়ে পড়ল।’

বিভিন্ন তথ্যসূত্র বলছে, বাবুলাল বা জাম্বুর আদিনিবাস দিনাজপুরের পার্বতীপুরের সুইপার কলোনিতে। সেখানে ১৯৪৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। রেলওয়ে অধ্যুষিত ওই শহরে বাবুলালের পূর্বপুরুষ এসেছিলেন ভারতের কোনো এক রাজ্য থেকে। রেলের শহরের কারণেই সেখানে গড়ে ওঠে সুইপার কলোনি। স্থানীয় ভাষায় মেথরপট্টিও বলা হয়।

বাবুলাল পার্বতীপুর থেকে ঢাকায় চলে আসেন। কাজ নেন পিলখানায়। দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর মতে, বাবুলাল পিলখানায় কাজ করতেন। ঝন্টু বলেন, ‘বাবুলালের কাজের বিষয়টা আমি বলতে চাই না। কারণ সে সমাজের সবচেয়ে বড় কাজটা করত। কিন্তু সেই কাজটাকে আমরা ছোট কাজ হিসেবে দেখি।’

বলা হয়, পর্দায় তার সবচেয়ে বেশি জমত নায়ক জসিমের সঙ্গে। সাদাকালো সময় থেকে শুরু করে রঙিন পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে বহু সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা। ‘আত্মরক্ষা’ সিনেমায় তিনি হাজির হয়েছিলেন পজিটিভ চরিত্রে। এ সিনেমার নায়ক ছিলেন ‘লাভ স্টোরি’র পল্লব। দুলারীর হুকুমের গোলাম ছিল জাম্বু। তাকে বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে কাজ করায়। শেষে জাম্বুর হাতেই মৃত্যু হয় দুলারীর। বিচ্ছিন্নভাবে জাম্বুর কিছু গানও আছে কিছু সিনেমায়।

জাম্বু অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে:

‘সাগর ভাসা’, ‘এক মুঠো ভাত’, ‘রক্তের দাগ’, ‘শীষনাগ’, ‘সেলিম জাভেদ’, ‘হাসান তারেক’, ‘নির্দোষ’, ‘মোহাম্মদ আলী’, ‘ধর্ম আমার মা’, ‘ডাকাত’, ‘নবাব’, ‘রাস্তা’, ‘রাস্তার রাজা’, ‘রকি’, ‘আত্মরক্ষা’, ‘পরিবার’, ‘সন্ত্রাস’, ‘অতিক্রম’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’, ‘উত্থান পতন’, ‘নয়নমণি’, ‘হাবিলদার’, ‘বিজয়’, ‘ঝুমুর’, ‘গোলাবারুদ’, ‘বাঘা বাঘিনী’, ‘সমর’, ‘অপরাজিত নায়ক’, ‘আপোষ’, ‘বিজলী তুফান’, ‘মাটির ফুল’, ‘পালকি’, ‘রুবেল আমার নাম’, ‘আঁচল বন্দী’, ‘টাইগার’, ‘বনের রাজা টারজান’, ‘হিরো’, ‘রাজাবাবু’, ‘নয়া লায়লা নয়া মজনু’, ‘শিকার’, ‘শত্রু ধ্বংস’, ‘আত্মত্যাগ’, ‘ঘাতক’, ‘কালিয়া’, ‘বন্ধু’, ‘সাজা’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘রাখাল রাজা’, ‘নয়নের আলো’, ‘বজ্রপাত’, ‘খুনের বদলা’, ‘অঙ্গার’, ‘বিপ্লব’, ‘যোদ্ধা’, ‘অভিযান’, ‘উসিলা’, ‘নিষ্পাপ’, ‘অমর’, ‘মৃত্যুদণ্ড’, ‘জ্যোতি’, ‘সাথী’, ‘মূর্খ মানব’, ‘দেনমোহর’, ‘প্রেম দিওয়ানা’, ‘চাকর’, ‘ববি’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘দায়ী কে’, ‘মিস লংকা’, ‘সাগরিকা’, ‘নির্মম’ ইত্যাদি।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top