ডেস্ক রিপোর্ট, Prabartan | প্রকাশিতঃ ১২:৫০, ২৭-০৪-১৯
শপিং মল, বিভিন্ন দোকান ও মেলায় দেদারছে বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিকের ভয়ংকর সব খেলনা, যেগুলো থাকছে শিশুদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। তাদের বায়না মেটাতে অভিভাবকরাও অবলীলায় কিনে দিচ্ছেন এসব খেলনা।
নগরের লালদীঘি মাঠে আবদুল জব্বারের বলীখেলা ঘিরে জমে ওঠা বৈশাখী মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা গেছে, বড়-ছোট পিস্তল, এ কে-৪৭, রাইফেল, তীর-ধনুক, প্লাস্টিকের ছুরি, তলোয়ার, গুলতি কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে শিশুরা।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা দোকানী সেলিম উদ্দীন বলেন, গত তিনদিনে বেশকিছু খেলনা বিক্রি হয়েছে- যার মধ্যে এসব খেলনার চাহিদাই বেশি। পিস্তল আকারভেদে ৬০-১০০ টাকা, রাইফেল ১২০-২২০ টাকা, তীর-ধনুক ৮০-১০০ টাকা, ছুরি ২০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মেলায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া তাহমিনের জন্য বন্দুক কিনে দিচ্ছিলেন বাবা মাশকুর রহিম। তিনি বললেন, খেলনার গাড়ি-পুতুল কিনে দিয়েছিলাম। ওসবে ওর আগ্রহ নেই। বন্দুক নেয়ার জন্য কান্নাকাটি করছে, তাই কিনে দিচ্ছি।
জানা গেছে, পুরান ঢাকায় প্লাস্টিকের খেলনা তৈরির জন্য গড়ে উঠেছে কয়েকটি কারখানা। স্ট্যাম্প মেশিন, ডাইস, হাতপাম্প মেশিনে মারলেস পাউডার, এল গাথেন পাউডার, পিপি পাউডার, রিপিট, চায়না রং মিশিয়ে তৈরী করা হয় খেলনা। এসব খেলনা সরবরাহ করা হয় সারাদেশে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আকলিমা সুলতানা বলেন, ‘শিশুদের প্রথম শিক্ষক মা-বাবা। তাদের আচরণ দেখেই শিশুরা বড় হয়। টেলিভিশনে মারদাঙ্গা দৃশ্য, যুদ্ধের ভিডিও গেম, সুপারম্যানের মতো মুভি দেখে তারা নিজেরাও হিরো হতে চায়। এসব দৃশ্যে ব্যবহৃত যুদ্ধাস্ত্র তারা পেতে চাইবে-এটাই স্বাভাবিক। না পেলে তারাও গুলি করার কথা বলে ফেলছে’।
এজন্য অভিভাবকদের সতর্ক হওয়ার বিকল্প নেই জানিয়ে প্রভাষক আকলিমা বলেন, শিশুমনে প্রভাব ফেলবে না-এমন খেলনাই বেছে নেয়া উত্তম। ধ্বংসাত্মক খেলনা না দিয়ে পাজল মিলানো, বিভিন্ন রঙ্গের চাকতি বাছাই করা, ডক্টর সেট এর মতো খেলনা নিয়ে খেলতে দিলে শিশুর মনে আগ্রাসী মনোভাব তৈরি হবে না।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টরা কোন বয়সে শিশুকে কি ধরণের খেলনা দেয়া যাবে, সে ব্যাপারে পরামর্শও দিয়েছেন। তাদের মতে, শূন্য থেকে দুই বছরের শিশুকে লাল, নীল, হলুদসহ একরঙা খেলনা দেয়া যেতে পারে। এ বয়সের শিশুদের কখনোই সুতা বা তার জড়ানো বা পলিথিনে মোড়ানো খেলনা দেওয়া উচিত নয়। এতে খেলার সময় অসাবধানতাবশত হাত-পায়ে বা গলায় জড়িয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। খেলনার আকার এমন হওয়া উচিত নয়, যা শিশুরা গিলে ফেলতে পারে।
তিন থেকে আট বছর বয়সীদের প্লাস্টিকের বল, বেলুন, ফুটবল, বার্বি সেট বা কিচেন সেট, গাড়ি, হেলিকপ্টার, ঘড়ি, ড্রয়িং খাতা ও পেনসিল দেয়া যেতে পারে। চার-পাঁচ বছর বয়সীদের জন্য বিল্ডিং বক্স ও ক্লে মডেলিং কিট জাতীয় খেলনা দেয়া ভালো। এতে তাদের সৃজনশীল চিন্তার প্রসার ঘটবে। ছয় থেকে আট বছর বয়সীদের জন্য বাজারে নানা রঙের লেগো সেট পাওয়া যায়। টুকরো টুকরো লেগো জোড়া লাগিয়ে বাড়ি, গাড়ি সহ নানান জিনিস তৈরি করা যায়। এ ছাড়া সংখ্যা হিসাব করতে এবং বর্ণমালা শিখতে বেশকিছু খেলনা পাওয়া যায়।
বয়স আট বা তার বেশি হলে সন্তানকে দাবা খেলা, লুডু খেলা, সুডোকু বা ক্রস ওয়ার্ড খেলা শেখানো যায়। কিনে দেয়া যেতে পারে সাইকেলও। ১০-১২ বছর বয়সীদের জন্য বাইনোকুলার, অ্যাডভেঞ্চার জাতীয় বই কিনে দেয়াই উত্তম।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হ্যান্ডকাফ, পিস্তল-বন্দুক, ছুরি জাতীয় খেলনা শিশুমনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। পরিবারের অগোচরে অনেক শিশু বিপথগামী হচ্ছে। এসব খেলনার অস্ত্র দেখিয়ে তারা ছোটখাটো ঘটনার জন্মও দিচ্ছে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহসিন বলেন, বলীখেলা উপলক্ষে মেলায় অনেক খেলনা বিক্রি হতে দেখেছি, যেগুলো দেখতেই ভয়ংকর। এসব ধ্বংসাত্মক খেলনা বিক্রির বিষয়ে বিধিনিষেধ থাকা প্রয়োজন, দরকার নীতিমালা প্রণয়ন।
তিনি বলেন, বাজারে সহজলভ্য হওয়ায় খেলনা পিস্তল, চাকু দিয়ে খুন-খারাবীর মতো ঘটনা ঘটছে। সদ্য শৈশবোত্তীর্ণ কিশোর অপরাধী বাড়ছে, এটা উদ্বেগজনক। এজন্য অভিভাবকদের দায়িত্ব হচ্ছে, সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখা।