খুলনার কয়রায় লবণাক্ত জমিতে বাদাম চাষে সফলতা

হারুন অর রশিদ, Prabartan | প্রকাশিতঃ ২২:২৯, ২৭-০৪-১৯

বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে কৃষিজমিতে ফসল ফলানোর কথা ভুলতেই বসেছিলেন খুলনার কয়রা উপজেলার কৃষকরা। প্রতিনিয়ত বাঁধ ভেঙে নদীর লোনা পানির আগ্রাসনে কৃষিজমিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় চিংড়ি চাষে ঝুঁকে পড়েন এখানকার বেশিরভাগ মানুষ। তবে খুলনার কৃষি গবেষণা বিভাগ লবণাক্ত মাটিতে ফসল ফলানোর জন্য নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার লবণাক্ত জমিতে প্রথম বাদাম চাষ করে সফলতা পেয়েছেন এক কৃষক। আর এটি স্থানীয় কৃষিক্ষেত্রে পরিবর্তন আনবে বলে প্রত্যন্ত এ জনপদের কৃষকরা মনে করছেন।

কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কৃষক শাহিদুল ইসলাম তার এক বিঘা জমিতে প্রথমবারের মতো বাদাম চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। তার এই সফলতার পেছনে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগ এমএলটি সাইট সহযোগিতা করেছে। প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক সহযোগিতায় উপকূলীয় এ এলাকায় কৃষিক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে।

কৃষক শাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রথমে বাদাম চাষ করতে আগ্রহী ছিলাম না। পরে কৃষি গবেষণা বিভাগের পরামর্শে আগ্রহী হয়ে উঠি। চাষাবাদের পর সুন্দর গাছ দেখে ও গাছের গোড়ায় বাদাম দেখে স্থানীয় আরও অনেক কৃষককে বাদাম চাষের পরামর্শ দিয়েছি।

কৃষি গবেষণা বিভাগ এমএলটি সাইট কয়রা অফিস সূত্রে জানা যায়, কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আর্থিক সহযোগিতায় স্থানীয় কৃষকরা বাদাম চাষের পাশাপাশি ধান, সূর্যমুখী, গমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় কয়রা উপজেলায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এমএলটি সাইট কয়রার বৈজ্ঞানিক সহকারী জাহিদ হাসান বলেন, বাদাম চাষের জন্য বেলে দো-আঁশ মাটির প্রয়োজন। সে হিসেবে উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নকে বেছে নেওয়া হয়। সেখানে এ বছর বাদামের তিনটি জাত বপন করা হয়েছে। এর মধ্যে লবণাক্ত এলাকায় যে জাতটির বেশি ফলন হবে, পরে ওই জাতের বীজ বপনে কৃষকদের উৎসাহিত করা হবে।

তিনি জানান, বাদাম বপনের পর ওই এলাকা নদীর লোনা পানিতে তলিয়ে যায়। পানি কমে যাওয়ার পর বাদামের ফলন দেখে অনেক  কৃষক গবেষণা অফিসে এসে বাদাম চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

কৃষি গবেষণা বিভাগ খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক ড. হারুনর রশিদ বলেন, লবণাক্ততার কারণে কয়রায় অনেক জমি আমন ধান কাটার পর পড়ে থাকে। সেখানে মাটিতে কোন ফসল উৎপাদন করা যায়, তা নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা চলছে। কয়রার কিছু এলাকায় বাদাম চাষ করার উপযোগী মাটি রয়েছে। সেখানে প্রথমবারের মতো চাষাবাদ করে সফলতা এসেছে। ধীরে ধীরে এসব চাষাবাদ বাড়াতে পারলে স্থানীয় কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top