সরবরাহে ঘাটতি দেখিয়ে পেঁয়াজে কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা

ডেস্ক রিপোর্ট, Prabartan | প্রকাশিতঃ ২০:১৭, ২৭-০৪-১৯

সরবরাহ প্রচুর থাকলেও মোকামে ঘাটতির কথা বলে পেঁয়াজের দাম পাইকারি বাজারে মানভেদে কেজিতে ৫ টাকা ও খুচরা বাজারে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ভরা মৌসুমেও ভোক্তাদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে পেঁয়াজ।

এদিকে এ সময়ে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, রমজান উপলক্ষে বেশি মুনাফা পাওয়ার আশায় মজুদ শুরু করে দিয়ে বাজারে কৃত্রিম ঘাটতি তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সরবরাহে ঘাটতিসহ নানা অজুহাতে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শ্যামবাজারে পাইকারি দরে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ২০ থেকে ২২ টাকা। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। যেখানে গত সপ্তাহে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৫ থেকে ১৮ টাকা। আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১০ থেকে ১৫ টাকায়। ব্যবসায়ীরা জানান, এখন পেঁয়াজ মজুদ চলছে। বড় বড় পাইকাররা এখন মজুদ শুরু করে দিয়েছেন। প্রতি বছর এ সময়ে মজুদ করা হয়। ফলে এ সময়টাতে দাম একটু বেশি থাকে। এর সঙ্গে এবার চৈত্র মাসে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন ঘাটতি যোগ হয়েছে। এছাড়া রমজান এলে প্রতি বছরই নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম কিছুটা বাড়ে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ সময়ে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়া অযৌক্তিক। গত বছর ব্যবসায়ীদের অজুহাত ছিল বাজারে দেশি পেঁয়াজের সংকট। তারা আমদানি করা পেঁয়াজ অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে অতি মুনাফা করে নেন। এবছর দেখা যাচ্ছে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার পরও দাম তেমন কমছে না। এর মধ্যে আবার দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে।

তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম কমাতে উৎপাদন ও সংরক্ষণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। এজন্য কৃষককে প্রযুক্তিগত সুবিধা ও স্বল্পমূল্যে ঋণ সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া কৃষকদের উন্নতমানের বীজ ও সার সরবরাহ করা গেলে পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা যাবে। এতে বাজারে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রমজান উপলক্ষে অন্যবারের মতো এবারও আমাদের মজুদ পরিস্থিতি খুব ভালো। রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে সেগুলোর মজুদ আরও বাড়ানো হচ্ছে। ওই সময়ের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে আমদানি বাড়ানোসহ যা করণীয় সরকারের পক্ষ থেকে সব করা হবে। এছাড়া এবার সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা টিসিবির কার্যক্রম আরও বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, রমজানের চাহিদাকে পুঁজি করে কেউ যাতে অস্বাভাবিকভাবে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে সে লক্ষ্যে বাজারের দিকে গোয়েন্দা সংস্থার তীক্ষ্ণ নজরদারি থাকবে।

শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা বিনিময় বাণিজ্যালয়ের সত্ত্বাধিকারী আতাউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গত সপ্তাহ থেকে পেঁয়াজের দাম মানভেদে কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমদানিকারকরা বেশি দামে আমদানি করছেন। পাশাপাশি মজুদও করছেন বেশি দাম পাওয়ার জন্য। এছাড়া সামনে রমজান মাস আসছে, তাই বাজার একটু বাড়তি। এ সময় দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা ইয়াসীন বাণিজ্যালয়ের সত্ত্বাধিকারী নন্দন সাহা বাংলানিউজকে বলেন, গত সপ্তাহ থেকে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়তির দিকে। মোকামে পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় পাইকারিতে কিছুটা দাম বেড়েছে।

সূত্রাপুর বাজারের খুচরা বিক্রেতা নির্মল সাহা বাংলানিউজকে বলেন, পাইকারি বিক্রেতারা দাম বাড়ালে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। তবে মনে হচ্ছে সামনে আরো দাম বাড়বে। কারণ আমদানি পর্যায়ে দাম বাড়ছে এবং মজুতদাররা মজুদ শুরু করে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজের ঘাটতির কথা বলে ৫ টাকা বাড়িয়েছেন। তাই বেশি দামে কিনে আমাদের মতো খুচরা বিক্রেতাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বাড়ার পেছনে খুচরা বিক্রেতাদের কোনো হাত নেই।

এদিকে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ, বিপণন ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে পেঁয়াজ পরিস্থিতি নিয়ে বলা হয়েছে, দেশে প্রায় ২২ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে এক লাখ ৭০ হাজার টন চাহিদা থাকলেও শুধু রোজার মাসে চাহিদা দাঁড়ায় তিন লাখ টন। এর মধ্যে দেশে ২৩ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত আট লাখ টনের ওপর পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। চাহিদার তুলনায় এ মুহূর্তে দেশে অনেক বেশি পেঁয়াজ রয়েছে। তাই সরবরাহ ব্যবস্থা যথেষ্ট স্বাভাবিক। ফলে রমজানে দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top