কালীগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ ৩২ টি বিদ্যালয়ে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান

নিজস্ব প্রতিবেদক, Prabartan | প্রকাশিতঃ ২০:২৬, ২০-০৪-১৯

ভূমিকম্পের পর বনখির্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের বিভিন্ন স্থান ফেটে যায়। পিলার গুলো থেকে পলেস্তরা খসে পড়ে রড বেরিয়ে গেছে। ছাদে ঝুলানো ফ্যান গুলি কখন যে মাথায় ভেঙ্গে পড়ে এমন আশংকাও রয়েছে। বিদ্যালয়টি কোন রকম মেরামত করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে সেখানেই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। এমনটিই জানালেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসিত কুমার ঘোষ। এ অবস্থা ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার ৩২টি ঝুকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

ওই প্রধান শিক্ষক আরো জানান, বিদ্যালয়টি ১৯৭৫ সালে স্থাপিত। জাতীয়করণ হয় ১৯৮৬ সালে। ১৯৯২-৯৩ অর্থ বছরে ৪ কক্ষ বিশিষ্ট একটি বিদ্যালয় ভবন তৈরি করা হয়। ৪ বছর আগে ভূমিকম্পে বিদ্যালয়ের সকল ভবনগুলো ফেটে যায়। সে সময় কিছু টা মেরামত করে এখনো সেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে ২৪৩ জন শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে তিনি লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন এবং অতি শিগগিরই নতুন ভবন যাতে নির্মাণ করা হয় তার জন্য আবেদন করেছেন।

একই অবস্থা বিরাজ করছে জটারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ে ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তরা খসে পড়ছে। বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নার্গিস আক্তার বলেন, শ্রেণী কক্ষের অভাবে ৭৫ জন শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যেই ক্লাস নিতে হচ্ছে। বিদ্যালয় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে তারা লিখিতভাবে উপজেলা শিক্ষা অফিসকে জানিয়েছেন মর্মে উল্লেখ করেন তিনি।

এছাড়া উপজেলার সিংগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিল্পী আক্তার বলেন, তার বিদ্যালয়ে ২৮৫ জন শিক্ষার্থী আছে। বিদ্যালয়টির টিন নষ্ট হয়ে গেছে। বিল্ডিংয়ের দেয়াল ফেটে গেছে। রাস্তার পাশ দিয়ে গাড়ী গেলে বিল্ডিং কেঁপে ওঠে। এই বিদ্যালয় ভবনটি ২ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে তারা আর ক্লাস নেন না। ২০০৪ সালে পিইডিবি-২ প্রকল্প এর আওতায় তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি বিল্ডিং করে দেয়া হয়েছে। শ্রেণী কক্ষ স্বল্পতার কারণে তারা দুই শিফটে বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা শুনছেন নতুন বিদ্যালয় ভবন হবে। কিন্তু এখনো কোন নতুন ভবন হয়নি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানাগেছে, কালীগঞ্জ উপজেলায় মোট ১৫০ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে ৩২ টি বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ বলে তারা চিহ্নিত করেছেন। ঝুকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে, সোনালীডাঙ্গা, কোলাবাজার, এসবিজিএম, কুল্ল্যাপাড়া, জলকর মাজদিয়া, নাকোবাড়িয়া, মান্দারবাড়িয়া, শশারপাড়া, জটারপাড়া, চাঁদপাড়া, নওদা, গৌরিনাথপুর, রাকড়া কচাতলা, বগেরগাছি, মধুপুর, বাবরা, ত্রিলোচনপুর, সানবান্ধা, কালুখালী, হাসানহাটি, ছোট ঘিঘাটি, বড় ঘিঘাটি, নরদহি,শাহপুর, চাপরাইল, বনখির্দ্দা, বেথুলী, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, পাইকপাড়া, পাতবিলা, মনোহরপুর, বাগডাঙ্গা, বড়শিমলা, কালীগঞ্জ সরকারি, বেজপাড়া, সিংগী, মনোহরপুর ও পাঁচকাহুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা অফিসার সেলিনা আক্তার বানু জানান, ৩২ টি ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় চিহ্নিত করে সেগুলি দ্রুত পুণঃনির্মাণ ও মেরামত করার জন্য জেলা অফিসে তালিকা পাঠিয়েছেন। ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়া হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়ে কিছু জানিনা। ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়া হয় কিনা সেটার খোঁজ খবর নিয়ে পরে জানাতে পারবো বলেন তিনি।

ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মোঃ আকতারুজ্জামান বলেন, জেলায় মোট ১৪০ টি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন। জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করে সেগুলি পুণঃনির্মাণ ও নতুন ভবনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top