ডেস্ক রিপোর্ট, Prabartan | আপডেট: ২১:২৯, ১৬-০৪-১৯
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাংক চত্বরে ধূমপান না করা এবং কর্মস্থলে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে চার বছর আগে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ আদেশ অমান্য করেই বিদ্যমান স্থাপনার জরুরি নির্গমন সিঁড়িসহ ব্যাংক চত্বরের বিভিন্ন জায়গায় ধূমপান করে আসছেন ধূমপায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডজনিত দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই জ্বলন্ত সিগারেট ও ম্যাচের কাঠি থেকে দুর্ঘটনা রোধে এবার ব্যাংক চত্বরে সম্পূর্ণরূপে ধূমপান নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, ব্যাংক চত্বরের কোথাও কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ধূমপান অবস্থায় দেখা গেলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি অফিস আদেশ জারির জন্য গত বৃহস্পতিবার মানবসম্পদ বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক একটি কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান। তাই আমরা চাইছি ব্যাংক চত্বরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ধূমপান নিরুৎসাহিত করতে। অগ্নিজনিত দুর্ঘটনাসহ যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
জানা যায়, গত মাসেও বাংলাদেশ ব্যাংকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। প্রধান ভবনের ওপর থেকে ফেলা সিগারেটের পরিত্যক্ত অংশ হতে ওই আগুনের সূত্রপাত বলে জানা গেছে। এর আগে ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ৩০ তলা ভবনের ২০ তলায় গবেষণা বিভাগের কনফারেন্স রুমে আগুন লাগে। ডাটা সেন্টারের আইটি সার্ভারের আইপিএস থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। এর আগে ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ ৩০ তলা ভবনের ১৩ তলায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয় এবং তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে ওই আগুন ছড়িয়েছিল। চায়ের কেটলি থেকে ওই আগুনের সূত্রপাত বলে ওই সময় জানানো হয়েছিল। ওই ঘটনার সাত মাসের মাথায় একই ভবনের ১৮ তলায় আবারও আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। লিফট মেরামতের সময় কাগজ থেকে ওই আগুনের সূত্রপাত ছিল বলে জানিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিভাগের আদেশে বলা হয়, অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার অন্যতম উৎস হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট, গ্যাসপাইপ লিকেজ, এয়ারকন্ডিশনার, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও জ্বলন্ত সিগারেটের পরিত্যক্ত অংশ ইত্যাদি। সিগারেটের অবশিষ্টাংশ থেকে যাতে কোনো অগ্নিকাণ্ডজনিত দুর্ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধূমপানবিরোধী সচেতনতায় উদ্ধুদ্ধকরণ ও কর্মস্থলে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখার জন্য মানবসম্পদ বিভাগ থেকে ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করা হয়। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও শাখা অফিসগুলোর সব স্থাপনা ধূমপানমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও মতিঝিল অফিসে কর্মরত ধূমপায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ নির্দেশনা অমান্য করছেন। বিশেষ করে জরুরি নির্গমন সিঁড়ি, লিফট লবি, করিডর, বারান্দা, ওয়াকওয়ে, পরিত্যক্ত রুম, বাথরুম, ব্যাংক চত্বর, ভোগ্য পণ্যের সম্মুখে ও বিভিন্ন সংগঠনের জন্য নির্ধারিত কক্ষসহ বিভিন্ন স্থানে ধূমপান করে সিগারেটের পরিত্যক্ত অংশ ও জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠি যত্রতত্র ফেলছেন তাঁরা। সিগারেটের পরিত্যক্ত অংশ কিংবা জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠি থেকে যেকোনো সময় বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড হতে পারে। এতে ব্যাংকের স্থাপনার ক্ষতিসহ প্রাণহানির আশঙ্কা থেকে যায়।
গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকে যে অগ্নিকাণ্ড ঘটে সেটা প্রধান ভবনের ওপর থেকে ফেলা সিগারেটের পরিত্যক্ত অংশ হতে সূত্রপাত বলেও উল্লেখ করা হয়। এ অবস্থায় মানবসম্পদ বিভাগের জারিকৃত সার্কুলার যথাযথ পরিপালন এবং অগ্নিজনিত দুর্ঘটনা রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ সব শাখা অফিসগুলোর সব স্থাপনায় ধূমপান সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়। একই সঙ্গে ব্যাংক স্থাপনার যেকোনো জায়গায় ধূমপান করা অবস্থায় দেখা গেলে বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে মানবসম্পদ বিভাগ থেকে আরেকটি অফিস আদেশ জারি এবং তা প্রধান কার্যালয়, মতিঝিল অফিসসহ বিভাগীয় পর্যায়ের সব শাখায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণের লক্ষ্যে নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছে।