ডেস্ক রিপোর্ট, Prabartan | প্রকাশিতঃ ১৬:৫৫, ১৩-০৪-১৯
আজকের বিষয়বস্তুটা একটু অবাক করার মতো। তবে জানার আকুতি আছে অনেকের, সেই থেকে লেখা। পৃথিবীর পাঁচটি ধনী পরিবার নিয়ে আজকের আয়োজন। অনেকেই হয়ত ভাববেন এই ধনী পরিবার সম্পর্কে জেনে আপনাদের কী হবে? তবে হোক না হউক তাদের এ পর্যায়ে আসার কারণ জানতে চায় অনেকেই। এখান থেকে অনেকেই মোটিভেশন হতে চায়। এই পৃথিবীতে কার না ইচ্ছা ধনী হওয়ার! কার না ইচ্ছা অধিক সম্পদের মালিক হওয়ার! জানি, এই লেখা পড়লে সে ইচ্ছার কোন পরিপূর্ণতা পাওয়া যাবে না তবে শক্তি ও সাহসের সঞ্চয় অবশ্যই হবে। সে জায়গা থেকে লেখছি, পৃথিবীর পাঁচটি ধনী পরিবারের গল্প। যারা অর্থ দিয়ে নিজেদের নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।
চলুন এমন পরিবারের তালিকায় কারা আছেন, দেখে নিই-
মূলত শীর্ষ ব্যবসায়ীরাই এই দুনিয়ার আসল তারকা। কারণ পৃথিবীর প্রত্যেকটা কিছুই তাদের আওতায় থাকে। এই কারণে হয়তো এটা ভেবে সাধারণ ব্যক্তিরা সান্ত্বনা পান আর তাদের গল্প পড়ে অনুপ্রাণিত হন। প্রতিটি দৈত্যাকার করপোরেশনের পেছনে একজন জীবন্ত মানুষ আছে, যেমন অ্যামাজন মানে বেজোস, ফেসবুক মানে জাকারবার্গ, ওয়ালমার্ট মানে দ্য ওয়ালটনস আর মাইক্রোসফট মানে বিল গেটস।
ওয়ালটন পরিবার
ওয়ালটন পরিবারের সম্পদের আনুমানিক পরিমাণ ১৫ হাজার ১৫০ থেকে ১৭ হাজার ৪৫০ কোটি ডলার। অবাক হচ্ছেন? হওয়ারই কথা। কারণ এই পরিবারটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী পরিবার। এমনকি এটি কিছু দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী পরিবারও বলা চলে। এদিকে, চলতি বছর অর্থাৎ ২০১৯ এর হিসেব মতে, এ পরিবারটি শীর্ষে রয়েছেন দুজনের কারণে। তারা হলেন- পরিবারের বড় সদস্য জিম ও অ্যালিস ওয়ালটন, যাদের প্রত্যেকের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ৬৪০ কোটি ডলার। আর এই দুজন ধনী ব্যক্তি ফোর্বসের বার্ষিক বিলিয়নেয়ারের তালিকায় ১৬ ও ১৭তম অবস্থানে রয়েছেন। পরিবারটি খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি ওয়ালমার্টের মালিক। আরাকানসাস অঙ্গরাজ্যে ১৯৬২ সালে স্যাম ওয়ালটন ওয়ালমার্ট প্রতিষ্ঠা করেন, যা আয়ের দিক থেকে এ মুহূর্তে বিশ্বের সর্ববৃহৎ কোম্পানি। এই বছরের জানুয়ারির তথ্য অনুসারে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ১২ হাজার এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৫ হাজার ৩৫৫ খুচরা দোকান রয়েছে এই কোম্পানিটির। যার ফলে বর্তমানে এক অনন্য উচ্চতায় অবস্থান করছে এই পরিবারটি।
দ্য কোচ ব্রাদার্স
দ্য কোচ ব্রাদার্স। তারা আপন দুই ভাই। তাদের সম্পদের আনুমানিক পরিমাণ ৯ হাজার ৯০০ থেকে ১২ হাজার কোটি ডলার। এই দুই ভাই হলেন চার্লস ও ডেভিড। তাদের বিশাল সম্পদ এসেছে পিতার প্রতিষ্ঠিত তেল ব্যবসা থেকে। যে ব্যবসাটি তাদের বাবা করে দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু জনসাধারণের কাছে তারা আরো বেশি পরিচিত রাজনীতিতে পদচারণা, রাজনৈতিক প্রার্থী ও উদারবাদী থিংক ট্যাংকগুলোকে অর্থায়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের তহবিল প্রদান এবং নীতিমালার লবিংয়ের জন্য। এই দুই ভাইয়ের প্রত্যেকের সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৬ হাজার কোটি ডলার এবং ফোর্বসের তালিকায় তাদের অবস্থান ১১তম।
মার্স পরিবার
মার্স পরিবার। এই পরিবারটির সম্পদের পরিমাণ ৮ হাজার ৭০০ থেকে ৯ হাজার কোটি ডলার। অনেক ধরণের ব্যবসা রয়েছে বর্তমানে পরিবারটির। তবে শুরুতে ক্যান্ডি জগতের ওয়ালমার্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন এই মার্স। যেটি একটি বহুপ্রজন্মের পারিবারিক ব্যবসা, যা সর্বব্যাপী, সস্তা ও তুমুল জনপ্রিয়। বর্তমানে কোম্পানিটি এমঅ্যান্ডএম তৈরির জন্যও বেশি পরিচিত। কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ফ্র্যাংক মার্সের তৃতীয় প্রজন্ম জ্যাকুলিন ও জন মার্স, যাদের প্রত্যেকের সম্পদের পরিমাণ ২ হাজার ৩৬০ কোটি ডলার এবং ফোর্বসের তালিকায় যাদের স্থান যুগ্মভাবে ৩৩তম। বর্তমানে এই কোম্পানির পরিচালনায় রয়েছেন তাদের সন্তানরা অর্থাৎ মার্স পরিবারের চতুর্থ প্রজন্ম। যারা প্রতিষ্ঠানটিকে ঠিক আগের মতই ধরে রেখেছেন।
বেহনা আহনু ও তার পরিবার
বেহনা আহনু ও তার পরিবার। এদের সম্পদের আনুমানিক পরিমাণ ৭ হাজার ২২০ থেকে ৮ হাজার ৩১০ কোটি ডলার। এই বেহনা আহনু ভীষণ পরিশ্রমী একজন। তিনি ৭০টির মতো বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের ফরাসি কনগ্লোমারেট এলভিএমএইচের চেয়ারম্যান ও সিইও। স্বনামের কোম্পানি লুই ভিঁতো, ময়ে, হেনিসি ছাড়াও এই বেহনার আরো রয়েছে ফ্যাশন লেবেল ক্রিশ্চিয়ান ডিওর ও ফেন্ডি, ডোম পেরিগনন শ্যাম্পেন, হেনিসি লিকার, উবলু ও টগ হয়ার ঘড়ি এবং প্রসাধনী বিপণি সেফোরা। এদিকে, তরুণ বয়সে বাবার নির্মাণ ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলেন আহনু, পরে নিজস্ব উদ্যোগে পারিবারিক অর্থ লগ্নি করেন তিনি। গত শতকের আশির দশকে এলভিএমএইচ প্রতিষ্ঠা এবং ফরাসি বস্ত্র কোম্পানি বোসাক অধিগ্রহণ করেন। এতে কয়েক দশক ধরেই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন আহনু, তবে এলভিএমএইচের রেকর্ড মুনাফা ও ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের শেয়ার ক্রয়ের কারণে গত বছর তার সম্পদে আরো ৩ হাজার ৫০ কোটি ডলার যোগ হয়েছে। বর্তমানে তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে চারজনই আভেক পাপায় কর্মরত।
কার্লোস স্লিম হেলু ও তার পরিবার
কার্লোস স্লিম হেলু ও তার পরিবার। এই পরিবারের মূল সম্পদের পরিমাণ ৬ হাজার ৪০০ থেকে ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। এই পরিবারটি ল্যাটিন আমেরিকার বৃহত্তম মোবাইল টেলিকম প্রতিষ্ঠান আমেরিকা মোভিলের পাশাপাশি আরো কয়েকটি কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে আছে মেক্সিকোর একমাত্র ফোন কোম্পানি টেলমেক্স, যা নিয়ন্ত্রণ করছেন মেক্সিকোর ধনী কার্লোস স্লিম ও তার পরিবার। তবে এর আগে সামান্য একজন দোকান মালিকের সন্তান ছিলেন স্লিম। পরে ১৯৮২ সালে অধিকাংশ সম্পদের মালিক হন তিনি। সে সময় মেক্সিকোর ধসে পড়া অর্থনীতির সুবিধা নিয়ে সস্তায় কোম্পানি কেনেন এই কার্লোস স্লিম।
কারগিল-ম্যাকমিলান পরিবার
কারগিল-ম্যাকমিলান পরিবার। এই পরিবারটির সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। কথিত আছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিলিওনিয়ার রয়েছে এই পরিবারে। আর কারগিল-ম্যাকমিলান পরিবারের মোট ১৪ জন বিলিওনিয়ার। তাদের পরিবারের ৬-৭ নম্বরে রয়েছে কারগিল-ম্যাকমিলান। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবসায় জড়িত এ পরিবারটির মোট স্কোর ৪০। ১৮৬৫ সাল থেকে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে যুক্ত এ পরিবারটি একদিনে আজকের এই অবস্থানে আসেনি। এতে আসতে তাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। এখন কৃষি সম্প্রসারণ ব্যবসা, দানাশস্য উৎপাদন ও ‘ফিন্যান্সিয়াল রিস্ক ম্যানেজমেন্ট’ তাদের ব্যবসার অর্থনৈতিক ভিত্তি আরো মজবুত করেছে।
লিলিয়ান বেটনকোর্ট ও তার পরিবার
লিলিয়ান বেটনকোর্ট ও তার পরিবার। এই পরিবারটির সম্পদের পরিমাণ ৪ হাজার ২৭০ কোটি ডলার। বলা হয়, ইউরোপের সবচেয়ে ধনী নারী লিলিয়ান বেটেনকোর্ট। তিনি প্রসাধনী ব্যবসায় রাজকীয় অবস্থান গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে বিশ্বের যে কোনো প্রসাধনী ব্যবসায়ীকে চমকে দিতে বাধ্য এই নারী। প্রসাধনী সামগ্রী ল’রিয়েলের মালিক এই পরিবারটির মোট স্কোর ৩৯। এবং ধনী পরিবারের তালিকায় তার অবস্থান ৭ নম্বরে। ১৯০৭ সালে লিলিয়ানের বাবা স্কোইলারের হাতে ল’রিয়েলের গোড়াপত্তন ঘটে। তারপর নানা উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে তারা। কয়েক বছর ধরে লিলিয়ান নিজে ব্যবসা না সামলালেও উন্নতির গ্রাফ ঠিকই ঊর্ধ্বমুখী। ২০১৪ সালে তিনি প্রসাধনী ব্যবসা আরো ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি করেছেন।
বার্নার্ড আরনল্ট পরিবার
বার্নার্ড আরনল্ট ও তার পরিবার। এই পরিবারটির সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৭৭০ কোটি ডলার। ফ্রান্সের বার্নার্ড আরনল্ট ও তার পরিবারের ব্যবসার পরিসর জানলে যে কাউকে চমকে যাবেন। বিশ্বজুড়ে অন্তত ৭০টি ব্রান্ডের মোড়কে তারা ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে। এসব ব্রান্ডের মধ্যে রয়েছে ডম প্যারিগনন, বুলগেরি, লউস ভোটন, ফেন্ডি, সেফোরা। এ ছাড়াও সারা বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৭০০ রিটেইল স্টোর। বিলাসবহুল পণ্য উৎপাদনকারী ও বিপণনকারী হিসেবেও তারা পুরো পৃথিবীজুড়ে বেশ সমাদৃত। এই পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৭৭০ কোটি ডলার। বিশ্বের সেরা বিলাসপণ্য উৎপাদনকারী এলভিএমএইচ কোম্পানিটি তাদের মালিকানাধীন।