আওয়াল শেখ, Prabartan | প্রকাশিতঃ ২২:৩৮, ১১-০৪-১৯
আবহমান বাংলার চিরায়ত অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনা-চর্চার মূলে রয়েছে এক অসাধারণ অনুষঙ্গ; সেটি হল বাংলা নববর্ষ। পয়লা বৈশাখে পাল্টে যায় গোটা দেশের চিত্র। পথে পথে ঢল নামে বাঙালি সংস্কৃতি লালনকারী, আনন্দপিয়াসী নগরবাসীর। বড়-ছোট প্রায় সবার পরনেই থাকে বৈশাখী রং লাল-সাদার বাহারি নকশার পোশাক। বাহারি সাজে শিশুরা বের হয় তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে। কিন্তু এর মধ্যেই কিছু মানুষ রয়েছে যাদের কাছে পৌঁছায় না এ পরিবর্তন আর বদলে যাওয়ার হাওয়া। নতুন বছর, নববর্ষ এসবের আলাদা কোনো অর্থ তাদের কাছে নেই। এরাই পথশিশু। ক্ষুধার যন্ত্রণায় মায়ের কোল ছেড়ে শিশুরা যখন মা-বাবার ঘর ছেড়ে অজানার পথে পা বাড়ায় তখনই তাদের পরিচয় হয় পথশিশু। কিন্তু এই পথশিশু শব্দটাই যেন এক অভিশাপ ওদের জন্য। জীবনযুদ্ধে সুবিধা বঞ্চিত।
খুলনা মহানগরের সাতরাস্তা, জাতিসংঘ পার্ক, রয়েল মোড়, হাদিস পার্ক, ফেরীঘাট, ডাকবাংলা, রেলওয়ে, দৌলতপুর, ৬ ও ৭ নং ঘাট এলাকা, সোনাডাঙ্গা, গল্লামারীসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে ওদের দেখা মেলে।
বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) ডাক বাংলা মোড়ে দেখা মেলে বেশ কয়েকটি পথ শিশুর। তারা ক্ষুধার যন্ত্রনায় পথচারীদের কাছে এসে দুইএক টাকার আবদার করছে বারবার।
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে চোখ পড়ল গায়ে ধুলাবালি, মলিন চেহারার ছোট্ট একটি শিশুর দিকে। কিছুক্ষণ পর পর কারও ওড়না, কারও শাড়ি অথবা কারও পাঞ্জাবির কোনা টেনে ধরছে সে; আর বলছে, দুইডা ট্যাকা দেবেন? কেউ কেউ দুই টাকা-পাঁচ টাকা দিচ্ছে। কেউবা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলছেন, অন্য কোথাও দেখ।
কাছে গিয়ে নাম জানতে চাইলে বলল না। আবদার করে বসল ১০ টাকার। বলল, খেতে না দিলে নাম বলব না। ১০ টাকার আবদার মিটিয়ে জিজ্ঞেস করলাম সামনে নববর্ষ। তুমি জানো? এক বাক্যে বলল, জানি না। এভাবে যতগুলো শিশুর কাছে জানতে চাওয়া হল সবার একই উত্তর নববর্ষ কি?
বাজারে এত ক্রেতার সমাগম, বং বেরংয়ের বাহারী পোষাকের দিকে তাদের ও বিশেষ নজর থাকে। তবে সেটা শুধু চোখের চাহনিতে। নতুন বছরের আলাদা কোনো বিশেষত্ব বা মহত্ব নেই তাদের কাছে। এই শিশুদের কাছে বছরের সব দিনই একই রকম। ঈদ-পূজা বা নববর্ষের কোনো বৈচিত্র তাদের স্পর্শ করে না। হয়তো ওদের স্বপ্নগুলো একটু আলাদা। অবহেলিত শব্দটি এই শিশুদের জীবনের সঙ্গে যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে তারা বিভিন্ন ধরনের অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার।
রাব্বি, রিফাত, সাকিব, সালমান নামের কয়েকটি শিশুকে দেখা মেলে খালি গায়ে, পরনে হাফ প্যান্ট। সারা গায়ে ময়লাযুক্ত, মাথার চুলগুলো আঠালো, চোখ লালছে বর্ণের। তারা নিজেদের নাম নিজেরাই রেখেছে। তাদের একটি একক নাম রয়েছে টোকায়। তবে তারা টোকায় না বলে জানান।
এদের মধ্যে পরিবার আছে রাব্বির। সে জানাই, নববর্ষের কোন আয়োজন তাদের পরিবারে নাই। তার বাবা একজন কুলি।
রিফাত জানায়, তার বাবা, মা কেউ নাই। কখন সে নতুন কোন জামা কিনতে পারে নি। তবে গত ঈদে সে একটি নতুন জামা উপহার পেয়েছিল বলে জানায়।
এভাবে বেশ কয়েকটি শিশুর কাছে গিয়েও জানা যায়নি বাঙ্গালী জাতির
বাঙালির সবচেয়ে বড় প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ। হাজারো ছন্দ-কবিতা ও প্রাণের উচ্ছ্বাসে বছর ঘুরে দ্বারপ্রান্তে এই দিনটি সকলের গ্লানি মুছে দিলেও আনন্দ থেকে বঞ্চিত পথ শিশুরা।