শ্বাসরোধে শিশু মনিরকে হত্যার পর মরদেহ রাখা হয় মসজিদে

ডেস্ক রিপোর্ট, Prabartan | প্রকাশিতঃ ১৬:১২, ১০-০৪-১৯

রাজধানীর ডেমরা এলাকার নুর-ই মদিনা মাদ্রাসার শিশুশ্রেণির ছাত্র মনির হোসেন (৮)। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল জলিল হাদীর নেতৃত্বে মুক্তিপণ চেয়ে অপহরণ করা হয় শিশু মনিরকে। এরপর শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় এবং বস্তাবন্দি করে মরদেহ লুকিয়ে রাখা হয় স্থানীয় একটি মসজিদে।

সোমবার (০৮ এপ্রিল) বিকেলে ডেমরা থানাধীন ডগাইর নতুনপাড়া এলাকার নুর-ই-আয়েশা জামে মসজিদের ভেতর থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় শিশু মনিরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আব্দুল জলিল হাদী, মো. আকরাম ও আহাম্মদ সফি ওরফে তোহা নামে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ১টি পাতলা তোয়ালে, ২টি সিমেন্টের বস্তা, ২টি কালো রংয়ের দড়ি, সিমসহ ১টি মোবাইল সেট, মরদেহের পরনে থাকা ফুল প্যান্ট ও পাঞ্জাবি উদ্ধার করা হয়েছে।

বুধবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।

তিনি বলেন, ডগাইর নতুনপাড়ার নুর-ই-মদিনা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও মসজিদুল-ই-আয়েশা জামে মসজিদের ঈমাম আব্দুল জলিল হাদী শিশু মনির হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। মনির তার মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন এবং মসজিদুল-ই-আয়েশা জামে মসজিদের দোতলা থেকেই মনিরের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

আরেক আসামি মো. আকরাম গত বছর মসজিদুল-ই-আয়েশা জামে মসজিদে তারাবির নামাজ পড়িয়েছিলেন, এ বছরও তারাবির নামাজ পড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আহাম্মদ সফি ওরফে তোহা নুর-ই-মদিনা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।

ফরিদ উদ্দিন বলেন, টাকার জন্য মনিরকে অপহরণ করা হয়, পরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বস্তায় ভরে লুকিয়ে রাখে। প্রথমে আব্দুল জলিল হাদী ও আহাম্মদ সফি ওরফে তোহাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। পরে তারা জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বংশালের মালিটোলা এলাকা থেকে অপর অভিযুক্ত মো. আকরামকে গ্রেফতার করা হয়।

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ডেমরার ডগাইর নতুন পাড়ার মো. সাইদুল হকের মেয়ে ফাতেমা আক্তার (১২), মুন্নি আক্তার (৯) ও ছেলে মো. মনির হোসেন (৮) ডগাইর নতুনপাড়ার নুর-ই-মদিনা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতো। প্রতিদিনের মতো রোববার (০৭ এপ্রিল) তারা তিনজনেই সকাল সাতটায় মাদ্রাসায় যায়। মুন্নি আক্তার বাসায় এসে তার বাবাকে বলে, মনিরকে মাদ্রাসায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

তখন তিনি তার স্ত্রীসহ মেয়েদেরকে নিয়ে মাদ্রাসায় এবং মাদ্রাসার আশেপাশে সম্ভাব্য সব জায়গায় ছেলেকে খোঁজাখুঁজি করেন। না পেয়ে এলাকায় মাইকিংও করা হয়।

একই রাতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি একটি মোবাইল নাম্বার থেকে ভিকটিমের বাবা সাইদুলের মোবাইলে ফোন দিয়ে ছেলের বিনিময়ে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। মুক্তিপণের টাকা ডেমরা থানার মসজিদুল-ই-আয়েশা জামে মসজিদের ভেতরে জানাজার খাটিয়ার নিচে রেখে আসার কথা বলে। টাকা না দিলে ছেলের মরদেহ পাবেন বলে হুমকিও দেওয়া হয়।

ফরিদ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি পুলিশকে জানালে, পুলিশ সম্ভাব্য সব জায়গায় শিশু মনিরকে উদ্ধারের জন্য অভিযান চালায়। পরের দিন মসজিদুল-ই-আয়েশা জামে মসজিদের ২য় তলা থেকে ৩য় তলায় ওঠার সিঁড়ির নিচে সিমেন্টের বস্তার ভেতরে রশি দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় শিশু মনিরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, টাকার জন্য শিশু মনিরকে অপহরণ করা হয়। কিন্তু অপহরণের পরই শিশুটি চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে। তখন অপহরণকারীরা মনিরের মুখ চেপে ধরলে সে মারা যায়। মনিরের মৃত্যুর পরই তার বাবার কাছে মুক্তিপণের টাকা চাওয়া হয়।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top