যশোরে ধর্ষিতা শিশু অন্ত:সত্ত্বা, দায় এড়াতে ছেলের সাথে বিয়ে

ডেস্ক রিপোর্ট, Prabartan | প্রকাশিতঃ ২১:০৫, ১০-০৪-১৯

যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের রেজাউল ইসলাম ও তার ছেলে বায়েজিদ। রেজাউলের শ্যালিকার মেয়ে ১৩ বছরের শিশু আত্মীয়তার সূত্রে বায়েজিদের খালাত বোন। গ্রামময় ছড়িয়ে পড়েছে শিশু মেয়েটি অন্ত:সত্ত্বা। কেউ বলছেন এর জন্য দায়ী রেজাউল, আবার কেউ বলছেন মেয়েটির সাথে বায়েজিদের সম্পর্ক ছিল। সেই সূত্রে অবৈধ মেলামেশার কারণে মেয়েটি অন্ত:সত্ত্বা হয়েছে।

এ ঘটনা চাপা দিতে সর্বশেষ যে ঘটনাটি ঘটেছে তা আর একটি বেআইনী কাজের জন্ম দিয়েছে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েটিকে বিয়ে দেয়া হয়েছে বায়েজিদের সাথে। আর এই ঘটনার পর সংশ্লিষ্টদের নিখোঁজের গল্পটা বেশ আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, রেজাউল ইসলাম ফতেপুর গ্রামের আব্দুল আজিজের জামাই। তিনি শ্বশুর বাড়ির পাশে ঘর বেধে বসবাস করেন। তার দুই ছেলের মধ্যে বায়েজিদ উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করে। আব্দুল আজিজের স্বামী পরিত্যক্তা অন্য এক মেয়ের শিশু মেয়েকে বাবা আবদুল আবদুল আজিজের কাছে রেখে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করেন। পড়াশোনায় ভাল না হওয়ায় সেই শিশুটির বয়স ১৩ বছরে পড়লেও তৃতীয় শ্রেণি উত্তীর্ণ হতে পারেনি।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, রেজাউল ইসলাম ভয়ভীতি দিয়ে ওই শিশুকে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করেছে। যার ফলে শিশুটি ৫ মাসের অন্ত:সত্ত্বা হলে মহিলাদের মাধ্যমে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ঝামেলা এড়াতে টাকা দিয়ে ফতেপুর ইউনিয়নের মেম্বর তবিবর রহমানকে তুষ্ট করে মেয়েটির গর্ভপাত ঘটানো হয়। শুধু তাই নয় গত ৪ এপ্রিল রাতে বায়েজিদের সাথে বিয়েও দেয়া হয়।
শুক্রবার সকাল থেকে বিয়ের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের ভয়ে রেজাউলের পরিবারের লোকজন এক এক করে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। তারপর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত কেউ বাড়িতে ফিরে আসেননি।

এ ব্যাপারে ফতেপুর সন্যাসী বটতলায় গেলে খোঁজ মেলে রেজাউল ইসলামের বাড়ি। কথা হয় তার শাশুড়ি কুলসুম বিবি, শালাবউ বৈশাখী, ভাইরা ওলিয়ারের সাথে।

তারা প্রথমে কেউ মুখ খুলতে চাননি। এক পর্যায়ে বললেন, আপনারা যা শুনেছেন, আমরাও তাই শুনেছি। রেজাউলের পরিবারের লোকজন কোথায় এমন প্রশ্নে তারা সবাই বললেন, জানিনে। তবে বায়োজিদের সাথে শিশুটির বিয়ে হয়েছে সে ব্যাপারে তারা নিশ্চিত করেন।

অন্ত:সত্ত্বার বিষয়টি চেপে গিয়ে তারা বলেন, আমরা ঘরের মধ্যে টের পাইনি। আপনাদের কে বলল?

স্থানীয়দের মধ্যে অনেকে এগিয়ে আসলেন। কেউ নাম বলতে না চাইলেও অকপটে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণের ফলে ওই শিশুটি অন্ত:সত্ত্বা হয়ে পড়েছে।

মেম্বারের সহযোগিতায় গর্ভপাত ঘটানোর বিষয়টাকে ভালো বলেননি তারা। তারপর রেজাউল আবার ওই শিশুটিকে নিজের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছে।

ফতেপুর মোড়ে আসলে অনেকেই বলেছেন, ওই শিশুর সাথে বায়েজিদের সম্পর্ক ছিল। যার কারণে শিশুটি অন্ত:সত্ত¡া হয়ে পড়ে। পরে লোকজনের চাপের কারণে বায়েজিদ বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে।

বিয়ের সময় উপস্থিত নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাবিন নামার একজন সাক্ষি বলেন, যশোর শহরের সিভিল কোর্টের মোড়ে হোসেন কাজী এ বিয়ে পড়িয়েছেন। কাবিন নামায় মেয়ের ১৮ বছর দেখানো হয়েছে।

কাজী হোসেন আলীর বিয়ে পড়ানোর কথা অস্বীকার করে বলেন, আমাকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু নাবালক হওয়ায় আমি যায়নি।

বাল্যবিয়ে বলে তারা বাড়ি থেকে নিঁখোজ হয়েছেন এমন দাবি করেছেন স্থানীয় কয়েকজন। তবে বেশিরভাগ বলেছেন, রেজাউলের কুকর্মের কথা অনেকেই জেনে গেছে। যার কারণে তারা ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।

ওই শিশুটি ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে বলে জানিয়েছেন তার নানী কুলসুম বিবি। স্কুলে অনিয়মিত তাই তের বছর বয়স হলেও ওপরে উঠতে পারছে না।

তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিথিকার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ছয়মাস এসেছি। কাগজপত্র খুঁজে তার জন্মতারিখ বের করতে হলে একটু সময় লাগবে।

পরদিন ফোন দিলে প্রধান শিক্ষক আর ফোন রিসিভ করেননি।

স্থানীয়দের অভিযোগের মতে রেজাউলকে বাঁচানো এবং নাবালিকাকে বিয়ে দেয়ার মূল হোতা স্থানীয় মেম্বর তবিবর রহমান। তাকে দুদিন ধরে খোঁজার পর মোবাইল ফোন রিসিভ করেন। তিনি এরকম কোন সংবাদ জানেন না বলে দাবি করে বলেন, স্থানীয়রা তাকে ফাঁসানোর জন্য অপপ্রচার করছে।

ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিয়ের পর তিনি শুনেছেন। তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে এমন সংবাদও শুনেছেন। কেউ তার কাছে অভিযোগ করেননি। তাই তিনি কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে জানান।

কয়েকদিন ধরে রেজাউল ইসলামের বাড়িতে গেলে তাদের ঘর সবসময় বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। ওই শিশুর মা হামিদপুর ময়লাখানা কলোনীতে বসবাস করতেন। রবিবার ও সোমবার তাকে খুঁজতে কলোনীতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। কয়েকদিন ধরে তাকে দেখছেন না বলে জানিয়েছেন তার প্রতিবেশিরা।

যশোর সদর উপজেলার চাঁদাপাড়া পুলিশের টুআইসি রিয়াজ জানান, ফাঁড়িতে কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। তবে লোকমুখে শুনেছেন।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top