এম সাইফুল ইসলাম, Prabartan | আপডেট: ২৩:০৬, ০৭-০৪-১৯
শিল্প কলকারখানা থেকে নির্গত কালো ধোয়ায় কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড ও সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস থাকে যার প্রভাবে শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সারসহ নানা রোগের সৃষ্টি হয়। কালো ধোঁয়ার প্রভাবে শুধু রোগই নয় হতে পারে এসিড বৃষ্টি ও বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি। কালো ধোঁয়ার জলবাযু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ।
অথচ খুলনা মহানগরীর লবনচরা সালাউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ঘিরে গড়ে উঠেছে কালো ধোঁয়া নির্গমন হয় এসন নানা শিল্পকারখানা। ফলে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ ও হুমকিতে পড়ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
স্বাস্থ্য হানিকর বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ধোঁয়া বা গ্যাস নিঃসরণ অপরাধে পরিবেশ সংরক্ষন আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ধারা ১৫ অনুযায়ী ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ও এক বছরের কারাদন্ড বিধান থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। এ কারনে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা হুমকির মুখে।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, স্কুলটির অদুরে রয়েছে দুই ডজনেরও বেশি তুষ কাঠ মিল। অনুমোদন ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যাবসা করে আসলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কোন মাথা ব্যাথা। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে লেখা অটো রাইস মিল। রাইসমিলের নামে ট্রেড লাইসেন্স করে ব্যাবসা করে আসছে মেসার্স নিষাদ অটোরাইসমিল। তাদের সাইনবোর্ড লেখা আছে এখানে ধান, চাউল, ভূষি মালামাল পাইকারি বিক্রয় করা হয়। ভিতরে ঢুকলে দেখা যায় সেখানে বিভিন্ন পশুর হাড় ভাঙ্গা কারখানা। যা পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। এই ব্যাপারে জানতে চাইলে মেসার্স নিষাদ অটো রাইস মিলের প্রোপাইটার জালাল হোসেন বলেন, আমরা অটো রাইস মিলের নামে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছি। কিন্তু মিলটি এখন বন্ধ আছে তাই হাড়ভাঙ্গা করখানা চালাচ্ছি। তিনি প্রতিষ্ঠানের অবৈধতা স্বীকার বলেন এই এলাকায় হাড়ভাঙ্গা কারখানা করা ঠিক নয়। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন আমরা খুব শীঘ্রই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেবো। আমাদের মূল অফিস ঢাকা।
পাশেই প্রধান সড়ক ঘেষে তুষ কাঠ চুল্লি রয়েছে। যার ধোঁয়াও অত্যান্ত ক্ষতিকর। কোষ্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশীপ সিডিপি’র বিভাগীয় সমন্বয়কারি এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বলেন, স্কুলটি ঘিরে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় সাধারণ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা হুমকির মুখে রয়েছে। তিনি জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কতুপক্ষকে খুব দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান। তিনি এ প্রতিবেদককে আরো বলেন স্কুলের সামনের রাস্তাটি ও অত্যান্ত নাজুক যা সবসময় থাকে ধুলোয় একাকার।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, ধোঁয়া পরিশোধনের ব্যবস্থা থাকার পরেই আমরা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দিয়ে থাকি। তুষকাঠের চুল্লিতে অতিরিক্ত কালো ধোয়া ও ম্যানেজমেন্ট ভালো না থাকায় আমরা অনুমোদন দেইনা। তিনি আরো বলেন, ওখানে শুধু তুষকাঠ নয় কোন রাইসমিল কিংবা হাড় ভাঙ্গা প্রতিষ্ঠানেরও অনুমোদন নেই। অবৈধ এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে বলেন, আমরা খুব দ্রুত নোটিশ দেব। এরপরেও যদি কাজ না হয় তাহলে মামলা দেয়া হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, ধুলাবালির কারণে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের বিভিন্ন ধরণের রোগ হতে পারে। নানা রোগের উপসর্গ ধূলা-বালু। আর এরমধ্যে বসবাস মানে মৃত্যুকে ডেকে আনা। এছাড়া এলার্জিজনিত ঠান্ডা, কাশি, চোখের সমস্যাও হতে পারে।
খুলনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, অটোরাইস মিলের সাইনবোর্ড ব্যাবহার করে হাড়ভাঙ্গার কারখানা পরিচালনা করছে এই ব্যাপারে আমার জানা নেই। যদি সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় তাহলে লবনচরার সকল অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য হুমকি থেকে বাচাঁতে পর্যায়ক্রমে পরিবেশে প্রভাব ফেলে এ ধরণের সকল প্রতিষ্ঠান তুলে দেয়া হবে।