আওয়াল শেখ, Prabartan | আপডেট: ২১:৪০, ০৫-০৪-১৯
গ্রামাঞ্চলে টাটকা মাছ সুলভ এবং দাম তুলনামূলক কম হলেও খুলনা মহানগরে ততটা সহজ নয়। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রূপসার পাইকারি সাদামাছ বাজার। জ্যান্তা মাছের লাফালাফি আর আড়তদারদের হাঁকডাকে বাজারটিতে প্রতিদিন ভোর থেকেই জমে উঠে মাছ বিকিকিনি। চৈত্র মৌসুমে দেশি ও চাষের মাছের সরবরাহ কম থাকলেও সামুদ্রিক মাছের কমতি নেই এই বাজারে।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) সকালে রূপসার পাইকারি সাদামাছ বাজারে ছিল অগনিত ক্রেতার ঢল।
বাজারে মাছের দাম আকাশচুম্বী। নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষের কাছে বাজার থেকে টাটকা মাছ কিনে খাওয়া অনেকটা স্বপ্নের মতো। তবে এই বাজারে ছোট-বড় সব ধরনের টাটকা মাছ পাওয়া যায়। পাওয়া যায় সামুদ্রিক মাছও। বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানসহ পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য এখান থেকে কেনা যায় টাটকা মাছ। দাম অন্যান্য বাজারের চেয়ে প্রায় ২০/২৫ শতাংশ কম। বাজারটি মূলত পাইকারি মাছের আড়ৎ হলেও আশপাশের লোকজন সস্তায় টাটকা মাছ কিনতে ছুটে আসেন এই বাজারে।
খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও নড়াইল জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রাক, পিকআপ ও ট্রলার বোঝাই দেশি মাছ বাজারে আসে রাতভর। বঙ্গপোসাগর ও সুন্দরবনের জেলেদেরও মাছ বিক্রি করার পাইকারি বাজার এটি। ভোরে শুরু হয় বেচাকেনা। সকাল ১০টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় মাছ বিক্রি। আশপাশের বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী ও ফেরি করে যারা বাসাবাড়িতে মাছ বিক্রি করেন, তারা ভোরেই চলে আসেন পছন্দসই মাছ কিনতে। আড়তদারদের হাঁকডাকে ভোর থেকেই জমে উঠে মাছ বিক্রি। দর-কষাকষির তেমন একটা প্রয়োজন হয় না।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, আড়তদাররা সারিবদ্ধভাবে মাছের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন। অনেকটা নিলামের মতো করে হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
এই বাজারে মাছের দাম নির্ভর করে আকারের ওপর। তবে প্রতিদিন দামের তফাত থাকে। শুক্রবারে বাজারে সবচেয়ে দামি মাছ ছিল ইলিশ। এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের দাম উঠছে প্রায় ১২০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা। এছাড়াও শিং ৬০০-৭০০ টাকা, ছোট গলদা চিংড়ি ৫২০ টাকা, কাইন মাগুর ৬০০-৭০০ টাকা, ঢগরা ৩০০ টাকা, গুলে ৪০০ টাকা, ভোলা ৮০ টাকা, চন্দন ২৩০ টাকা, সিলভার কাপ ১২০ টাকা, সাগরের শোল ২৫০ টাকা, বাইন ৮০০ টাকা, পায়রা আকার ভেদে ৩৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাকা চিংড়ি ২৩৫ টাকা, মটকা চিংড়ি ১৫০ টাকা, সাগরের টুনা মাছ ১৪০ টাকা, তেলাপিয়া ১১০ টাকা, মলা ১০০ টাকা, ২ থেকে ৩ কেজি ওজনের ইন্ডিয়ান রুই ২৫০ টাকা, এক থেকে দেড় কেজি ওজনের দেশি রুই ২২০ টাকা, আকার ভেদে মেদ ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ১৫০ টাকা, দুই থেকে তিন কেজি ওজনের পাঙ্গাস ১৫০ টাকা, কলম্ব ১০ কেজির কার্টুন ১০৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এখানকার একজন পাইকারি মাছ বিক্রেতা জানান, ‘খুচরা মাছ বিক্রেতারা এখান থেকে মাছ কিনে নিয়ে যান। এই মৌসুমে অন্যান্য বাজারে তুলনায় এই বাজার মাছের সরবরাহ বেশি রয়েছে’।
বাজার এখন মন্দা বলে জানান একজন আড়তদার। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ ঘেরের মাছ তুলে ফেলা হয়েছে। চাহিদার তুলনায় মাছের সরবরাহ অনেক কম। তাই মাছের দাম একটু বেশি’।
খুচরা মাছ বিক্রেতা লতিফ এসেছেন মাছ কিনতে। তিনি প্রবর্তনকে বলেন, ‘অন্যান্য বাজারের তুলনায় এই বাজারে বেশি মাছ পাওয়া যায়। এখন দেশী মাছ এলাকা থেকে কিনতে পারছি না। তাই বাজার থেকে পাইকারি দরে মাছ কিনে ব্যবসা করছি’।
মাছ কিনতে আসা আব্দুল হাদি শেখ বলেন, ‘সব বাজারে তাজা মাছ পাওয়া যায় না। আর যদিও পাওয়া যায়, তবে দাম এখন রীতিমতো হাতের নাগালের বাইরে। তাই কম দামে টাটকা মাছ কিনতে এখানে আসি।’
বাজারের মাছ ব্যাবসায়ী নেতারা জানান, ‘সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী আমরা বাজারে পাইকারি মাছ বিক্রির পাশাপাশি খুচরা মাছ বিক্রি করে থাকি। সাধারণ মানুষ কম দামে টাটকা মাছ পায় বিধায় দূরদূরান্ত থেকে মাছ কিনতে এই বাজারে ছুটে আসেন।’