থামছে না শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি

ডেস্ক রিপোর্ট, Prabartan | আপডেট: ২০:০৯, ০৫-০৪-১৯

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছুতেই থামছে না নিয়োগ জালিয়াতি। দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির ক্ষমতাবলে একের পর এক নিয়োগ দেয়া হয় শিক্ষক। আর এ কারণে যে কোনো অনিয়মে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকে না। তবে ম্যানেজিং কমিটি ভেঙে দেয়া গেলে এসব জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, পাবনার সাথিয়া উপজেলার দেবীপুর তেবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের বাংলা ও হিসাব বিজ্ঞানের দুই প্রভাষককে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ দেয় ম্যানেজিং কমিটি। এ অভিযোগে গত ১৬ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠিও দেয় মাউশি।

অন্যদিকে, গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুর উপজেলার দক্ষিণ হাটবমুনী এনআই দাখিল মাদরসার সহকারী শিক্ষক সাইদুর রহমানের জাল সনদ ধরা পড়ে। এ কারণে চাকরিকালীন সময়ে তিনি বেতন-ভাতা বাবদ যে পরিমাণ টাকা উত্তোলন করেছেন, তা ফেরত আনার বিষয়ে মাউশিকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অধিদফতরের মহাপরিচালকের বরাবর গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি জারি করা আদেশে বলা হয়, এনআই দাখিল মাদরাসা কবে এমপিও হয়েছে এবং ওই শিক্ষক কত টাকা উত্তোলন করেছেন তা দ্রুত জানাতে হবে।

অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বছরের পর বছর এসব নিয়োগ জালিয়াতির সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদ যেমন জড়িত থাকে, তেমনি এসব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে অধিদফতরের এক শ্রেণির কর্মকর্তাদের হাত রয়েছে। তারা অর্থের বিনিময়ে এসব কাজ করেন বলেও অভিযোগ আছে।

মাউশি’র অন্য আরেকটি সূত্র জানায়, নাটোরের সিংড়া উপজেলার আলহাজ জালাল উদ্দিন কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৭ শিক্ষক জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ দেয় ম্যানেজিং কমিটি। তদন্তে জালিয়াতি প্রমাণিত হলে গত ৩১ ডিসেম্বর সাময়িকভাবে ওই ৭ শিক্ষকের বেতন বন্ধের নির্দেশসহ শোকজ করা হয়। এতকিছুর পরও থেমে নেই জালিয়াত চক্র। নতুন নতুন উপায়ে ভুয়া নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছে তারা। ম্যানেজিং কমিটির সহায়তায় অসদুপায় পাবনার চাটমোহর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নিজের স্ত্রীকে সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৬ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মাউশির মহাপরিচালককে এ ভুয়া নিয়োগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।

কিন্তু এ জালিয়াতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মাউশির আদেশেও এ নিয়ে কিছু বলা হয়নি। ওই আদেশে স্বাক্ষরকারী মাউশির শিক্ষা অফিসার চন্দ্র শেখর হালদার বলেন, জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডকে আলাদা চিঠি দেয়া হয়েছে।

এসব বিষয় স্বীকার করে শিক্ষা অফিসার চন্দ্র শেখর হালদার জানান, এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনা অনেক রয়েছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছে উত্তোলিত বেতন-ভাতা ফেরত চেয়ে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির দুর্নীতির কারণেই এমনটা হচ্ছে।

এমপিওভুক্তির সময় কেন এসব দুর্নীতি ধরা পড়ে না? জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান বলেন, নিয়োগের সময় জালিয়াতি করা হয় আর্থিকসহ অন্যান্য দুর্নীতির কারণে। একইভাবে এমপিও দেয়ার সময়ও জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়। সে কারণে তখন ধরা পড়ার প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু পরে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত হলে বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। আমরা বর্তমানে কঠোর অবস্থানে থাকায় আগের দুর্নীতিও ধরা পড়ছে।

এছাড়া বিদ্যমান নিয়মে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার শিক্ষা বোর্ডের। আমরা শিক্ষা বোর্ডকে সুপারিশ করে থাকি, তারা যেন ব্যবস্থা নেয়। তবে বিদ্যমান আইন সংশোধন করলে দুর্নীতি কমবে বলে মনে করেন ড. আবদুল মান্নান।

নিয়োগ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয় না প্রশ্নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) জাবেদ আহমেদ বলেন, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদগুলোর বিরুদ্ধে। সে কারণেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নেয়া হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির ক্ষমতা অনেক। প্রতিষ্ঠান প্রধানের জবাবদিহিতা ম্যানেজিং কমিটির হাতে। সে কারণে খুব সহজে কিছু করার থাকে না। পুরনো আইন ও নীতিমালা সংশোধন করা প্রয়োজন। তাহলে দুর্নীতির প্রবণতা কমে আসতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হক  বলেন, বিদ্যমান আইনে ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতা হলো কমিটি ভেঙে দেয়া। এর বেশি কিছু করার নেই। আমাদের যতটুকু ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। কেউ যদি দুর্নীতি করে তাহলে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে।

কিন্তু এ ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাউশি বা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড প্রচলিত আইনে এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে এমন কোনো উদাহরণ নেই।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top