ডেস্ক রিপোর্ট, Prabartan | আপডেট: ২১:২৫, ০১-০৪-১৯
বিশ্বব্যাপী ছোট বড় এমন সব রহস্যময় স্থান রয়েছে যার রহস্য ভেদ করা প্রায় অসম্ভব! বিজ্ঞানের সফলতাও এসব রহস্যের সঠিক সমাধান দিতে পারেনি। প্রাকৃতিক প্রাচুর্যপূর্ণ এই পৃথিবীতে অবাক হওয়ার মত অনেক বিষয়ই রয়েছে। যার অর্থভেদ করার মত শক্তি হয়ত মানুষের মধ্যে নেই। যদিও বিজ্ঞানের কল্যাণে বর্তমানে সকল রহস্যই ভেদ সম্ভব তবু যদি এমন বিষ্ময়কর সব জিনিসের স্থায়িত্ব থেকে থাকে তবে তা তো চমকপ্রদ বটেই। এসব নিয়ে মানুষের কৌতূহলেরও কমতি নেই। আজ এমনই কয়েকটি রহস্যময় স্থান সম্পর্কে জেনে নিন-
ডেভিলস কেটেল
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিয়ার লেকের উত্তর দিকে ডেভিলস কেটেল নামক একটি রহস্যময় ঝর্ণা অবস্থিত। যার অর্থ হলো শয়তানের গর্ত। এই ঝর্ণা দু’ভাগে বিভক্ত। এর পূর্ব দিকের অংশ একেবারেই সাধারণ ঝর্ণার মত। ঝর্ণার পানি নিচে পড়ে ব্রুল নামক নদীতে গিয়ে মিশে। কিন্তু ঝর্ণার পশ্চিম দিকের অংশ একেবারেই অস্বাভাবিক। এই ঝর্ণার ঠিক নিচে কড়াইয়ের মত দেখতে একটি গর্ত রয়েছে। ঝর্ণার এই অংশের পানি এই গর্তেই পড়ে। অবাক করা বিষয় হলো, এই গর্তে পড়ার পর পানি সামনে অদৃশ্যভাবে প্রবাহিত হয়। কিন্তু পানি সামনের দিকে প্রবাহিত হওয়ার কথা কিন্তু এই ঝর্ণার পানি কোন দিকে প্রবাহিত হয় তা বিষ্ময়কর! ঝর্ণার পানি নির্দিষ্ট ওই গর্তেই মিলিয়ে যায়। তবুও গর্ত কখনো ভরেনা। তাহলে এই গর্তে প্রত্যেক মিনিটে পড়া লাখ লাখ লিটার পানি কোথায় যায় এ প্রশ্নের উত্তর এখনো জানা যায়নি।
ডেভিলস কেটেল
কয়েক দশক আগেও অনেকের ধারণা ছিলো এই গর্তের অনেক গভীরে ছোট ছোট ছিদ্র বা ফাটল রয়েছে। সকলের ধারনা, ওই ফাটল দিয়ে পানি পাশের ঝর্ণার পানির সঙ্গে মিশে যায়। তবে এই তথ্যকে প্রমাণ করতে ঝর্ণার পানির সঙ্গে মিলবে ওই পানীয় যাতে রঙিন হয়ে যায়। পরবর্তীতে, ওই পানি যখন আরেক ঝর্ণার পানির সঙ্গে মিশবে তখন উক্ত পানির রঙও পরিবর্তন হয়ে যাবে। এই তথ্যকে প্রমাণ করতে ঝর্ণার পানির সঙ্গে লাখ লাখ টন রং মেশানো হয়। কিন্তু সকলেই অবাক হয়ে যায়! কারণ রঙিন পানি উক্ত গর্তেই বিলীন হয়ে গেছে এই দেখে। অন্যদিকে, পাশের ঝর্ণার এক ফোটা পানিও রঙিন হয়নি। আরো অনেক পদ্ধতিতে এই ঝর্ণার পানির গন্তব্য স্থল জানার চেষ্টা করা হয়েছে। তবুও এর রহস্য ভেদ হয়নি।
জোন অব সাইলেন্স
মেক্সিকোতে অবস্থিত এই স্থানটি চিকুয়া হুয়া নামে পরিচিত। এই স্থানকে জোন অব সাইলেন্স বলার কারণ হলো সেখানে গেলে সকল ইলেকট্রিক ডিভাইস অকেজো হয়ে যায়। তা হোক মোবাইল, ঘরি কিংবা রেডিও। এমনকি কম্পাসও কোনো প্রকার দিক নির্দেশনা দিতে পারেনা।কম্পাসটি শুধু ঘুরতে থাকে। ১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্র এখানকার মরুভূমিতে একটি মিসাইল পরীক্ষা করেছিলো। কিন্তু মিসাইলটি যখনই জোন অব সাইলেন্সের উপর দিয়ে যাচ্ছিলো তখন মিসাইলের সব ইলেকট্রিক সার্কিট কাজ করা বন্ধ করে দেয় আর তা সেখানেই পতিত হয়। আরো রহস্যময় বিষয় হচ্ছে, ওই স্থানটিতে মাঝেমধ্যেই অজানা কারণে উল্কাপিন্ড আঘাত হানে। জানা গেছে, জোন অব সাইলেন্সের জমিনের নিচে তেলের অনেক বড় খনি রয়েছে। কিন্তু যখনই মেক্সিকো কিংবা মার্কিন সরকার তাদের মেশিন নিয়ে তেলের খনির খোঁজ করতে আসে তখনই মেশিনসহ যাবতীয় উপকরণ অকেজো হয়ে যায়। শুধু এতোটুকুই নয় সেখানকার আকাশের বুকে ভেসে বেড়ানো মেঘের আকৃতি ও রং অনেকটাই অদ্ভূত। জায়গাটি কেন এতোটা বিচিত্র সে রহস্য আজো ভেদ করা সম্ভব হয়নি।
হেসদালেন লাইট
নরওয়ের হেসদালেন ঘাঁটিতে রাতে জ্বলে ওঠা এই আলোর রহস্য ১৯৩০ সাল থেকে এখানো অজানাই রয়ে গেছে। এই আলো শুধুমাত্র নরওয়ে দেশটির রাতের আকাশে ফুটে ওঠে। ১৯৩০ সালে সর্বপ্রথম এরকম আলো প্রথম আকাশে দেখা যায়। এরপর থেকে একেক সময় একেক রঙের আলো আকাশে ফুটেছে। বছরে ১০ থেকে ১৫ বার এই আলো দেখা যায়। যদিও সেসব আলো আকাশে কয়েক মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে শুরু করে ঘন্টাব্যাপী দেখা যায়। আরেকটি অবাক করা বিষয় হলো, যেদিন রাতেই আকাশে আলো ছড়ায় ঠিক ওই রাতেই আশেপাশের জমিতে ক্রপসার্কেল তৈরি হয়। এটি হলো ফসল কেটে অথবা নষ্ট করে তৈরি করা একটি বিশেষ ডিজাইন। এর থেকেই নরওয়েবাসীর ধারনা, এই আলোগুলো নিশ্চয়ই এলিয়েনদের বাহন থেকে আসে। আর ওই ক্রপসার্কেলগুলো তাদেরই তৈরি।
ড্যান্সিং ফরেস্ট
পোল্যান্ডে অবস্থিত ক্রকড ফরেস্ট সেখানকার অদ্ভুত আকৃতির গাছের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। সেখানকার গাছের আকৃতি দেখে সকলের চোখ মাথায় ওঠার উপক্রম হয়। জঙ্গলটি সিজারনোও গ্রামের পাশে অবস্থিত। জঙ্গলের গাছগুলোর বিশেষত্ব হলো, গাছগুলো নিচ থেকে সমকোণে অর্থ্যাৎ ৯০ ডিগ্রী বেঁকে যায়। কিছু গাছ আবার মাটির একদিকে ঝুঁকে আবার অন্যদিকে ঘুরে সোজাভাবে লম্বা হতে থাকে। আর এ কারণে গাছের গোড়া ধনুকের মতো আকৃতি ধারন করে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো সব গাছগুলো একদিকে ঝুঁকে রয়েছে।
ড্যান্সিং ফরেস্ট
গাছগুলো দেখে মনে হয়ে যেন তারা কোনো নৃত্যের মুদ্রারত অবস্থায় রয়েছে। আর সে কারণেই জঙ্গলটিকে ড্যান্সিং ফরেস্ট বলা হয়। এই জঙ্গলে ১৯৩০ সালে গাছগুলো রোপিত হয়। কিন্তু বর্তমানে সেখানে লাগানো গাছগুলো আবার স্বাভাবিকভাবেই বড় হয়। তবে ১৯৩০ সালে গাছগুলো কীভাবে রোপন করা হয়েছিলো সে তথ্য অবশ্য কারো জানা নেই। রহস্যময় হলেও জঙ্গলটি দেখতে অসাধারণ। এছাড়াও জঙ্গলটিতে রয়েছে বিরল প্রজাতির সব গাছপালা। আর এ কারণেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত জঙ্গলটি। স্থানীদের মতে, মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণেই গাছগুলো বেঁকে গেছে। তবে ঠিক কোন কারণে গাছগুলো এভাবে আছে সে রহস্য আজো ভেদ হয়নি।