বাংলাদেশের সেরা ৫টি ভুতুড়ে স্থান

ডেস্ক রিপোর্ট, Prabartan | আপডেট: ২১:০৭, ০১-০৪-১৯

চলনবিল: জমিদার ও তিন মন্দির রহস্য

চলনবিল বাংলাদেশের ভ্রমনপিপাসু মানুষের কাছে একটি পছন্দের নাম। প্রতি বছর প্রচুর দেশি বিদেশি পর্যটক সেখানে ভ্রমন করতে যান। কিন্তু নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের পাশাপাশি ভৌতিক স্থানের বিচারেও শোনা যায় এই চলনবিলের কথা। এটি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সবচেয়ে বড় বিল। মূলত নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা এই তিন জেলা জুড়ে এটি বিস্তৃত। তবে ভুতুড়ে স্থান বলতে শুধুমাত্র সিরাজগঞ্জের আশে পাশের অঞ্চলকে বোঝানো হয়ে থাকে।

আমাদের এই ভূতুড়ে কাহিনীর মূলবিন্দু হচ্ছে সেই সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াস নামক উপজেলা। শোনা যায়, চলনবিলের এই এলাকায় অনেক আগে একজন নামকরা জমিদারের বসবাস ছিলো। প্রজাদের ধারনা ছিলো জমিদার ছিলেন অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু একদিন রাতে কোণ এক অজ্ঞাত কারণে হঠাৎ করে জমিদার মারা গেলেন। আর সেই রাতের ভেতরেই সেখানে গজিয়ে উঠলো তিন- তিনটি মন্দির! আরও হতবাক করা ব্যাপার হচ্ছে যে- মন্দিরটি পরের দিনই নিজ থেকে ভেঙ্গে পড়ে যায়।

আর সেই থেকেই লোকমুখে এই তিনটি মন্দির ও মধ্যবর্তী বিলের এলাকাটির উপর ভুতুড়ে প্রভাব আছে বলে লোকমুখে শোনা যেতে লাগলো। তবে অনেকেই বলে থাকেন, ভুত প্রেত কিছু নেই কিন্তু চলনবিলের এই অঞ্চলে জ্বীনের প্রভাব আছে। বিশেষ করে রাতের বেলা চলনবিল পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকেই জ্বীনের আছরের শিকার হয়েছেন বলে শোনা যায়। এমনকি অনেক পথিকও অশরীরির উপস্থিতি আঁচ করতে পেরেছেন বলে জনশ্রুতি আছে। তাই রাতের বেলা এইদিকে মানুষের আনাগোনা একদম কম থাকে।

ফয়েস লেক : সাদা শাড়ি ও কালো শাড়ির রহস্য

নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের জন্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে এক দুর্বার আকর্ষণের নাম হচ্ছে ফয়েস লেক। তবে অবাক হওয়ার মতো বিষয় হচ্ছে- সৌন্দর্যের পাশাপাশি নানা ধরণের ভুতুড়ে গল্পের জন্যেও ফয়েস লেকের নামডাক আছে। এইখানে প্রচলিত ভুতুড়ে গল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শোনা যায় সাদা শাড়ি – কালো শাড়ির গল্প। অনেকে বলে থাকেন এখানে নাকি একজন সাদা পোশাক পরিহিত এবং একজন কালো পোশাক পরিহিত রহস্যময় নারীর উপস্থিতি এখানে লক্ষ করা গেছে। স্থানীয় বয়স্ক ব্যক্তিরা বলেন এই দুজন নারীর এই স্থানে মৃত্যু হয়েছিলো, কিন্তু তাদের অতৃপ্ত আত্মা স্থানটি ছেড়ে কখনো যায়নি। কালো পোশাক পরিহিত নারীটি নাকি হুটহাট সন্ধ্যার সময় লেকের পাশে হন্টনরত মানুষের সামনে এসে ভয় দেখায়। কিন্তু সাদা পোশাক পরিহিতা নারীটি ভাল, সে বিপদে পড়া মানুষকে সাহাজ্য করে থাকে। বলা বাহুল্য যে এই সমস্ত তথ্যের নিরেট প্রমান আজ পর্যন্ত কেউই দেখাতে পারেনি। কিন্তু কেন এত ভুতুড়ে গল্প প্রচলিত হয়েছে ঐ পাহাড় ঘেরা এলাকাটি নিয়ে- তা কেউ ই জানে না।

পার্কি বিচ – অতৃপ্ত মাঝিদের গল্প

সৌন্দর্য আর রহস্য কি সব সময় পাশাপাশি অবস্থান করে? তা নাহলে এত সুন্দর পার্কি বিচকে ঘিরে আবার রহস্যময় গল্প শোনা যায় কেন? লম্বায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার; ৩০০-৩৫০ ফিট চওড়া এবং ২০ কিলোমিটার ঝাউবনযুক্ত এই সৈকতটি অত্যন্ত নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অধিকারী। কিন্তু ভৌতিক স্থানের তালিকায় একে রাখতে হচ্ছে কারন অনিন্দ্যসুন্দর এই সমুদ্র সৈকতকে ঘিরেও প্রচলন আছে ভৌতিক কাহিনীর। সবচেয়ে বেশি যে ব্যাপারগুলো শোনা যায় তা হচ্ছে সন্ধ্যার পর এই স্থানে মাঝে মধ্যে অদ্ভুদ পদশব্দ, চিৎকার ও ভুতুড়ে আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। অনেক পর্যটক ও স্থানীয় ব্যক্তি কৌতূহলবশত অনুসরণ করে এসব শব্দের উৎস খুঁজে বের করবার চেষ্টা করলেও প্রকৃতপক্ষে কোনো উৎসই খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেক সময় মনে হয় শব্দগুলো পানির ভেতর থেকে আসছে। আবার কখনো সেটি পার্শ্ববর্তী বন থেকে আসছে বলে মনে হয়। শব্দগুলো যেনো কৌতূহলী মানুষকে পানিতে টেনে নিয়ে যেতে চায়।

সেখানে পর্যটক হিসেবে আগত এক দম্পতির মুখে শোনা গেছে- বিচে সূর্যাস্তের পর সান্ধ্যকালীন ভ্রমণের সময় তাদের দুজনেরই নাকি মনে হচ্ছিলো কোনো অশরীরী তাদের ওপর চোখ রাখছে। মনে হচ্ছে যেন অদৃশ্য কেউ তাদের অনুসরন করে পেছনে পেছনে আসছে। তাদের এই অনুভূতি মোটেলে ফেরার আগ পর্যন্ত হয়েছে। এই একই ঘটনা অনেকেই বলেছেন। তবে কারো কোণ ক্ষতি হয়েছে- এমনটা আজ পর্যন্ত শোনা যায়নি।

এছাড়াও মাঝ ধরার নৌকা নিয়ে সাগরে যাওয়া মাঝিরা অনেকেই বলেছেন যে এদিকের গভীর সাগরে নৌকাসহ এক বুড়ো নাবিকের দেখা মেলে। কখনো একজনকে আবার কখনো বা অনেককে তাদের নৌকা নিয়ে গভীর সাগরে যেতে দেখা যায়। নাবিকেরা ধারণা করেন যে- সাইক্লোনের সময় নৌকা পাড়ে ভেড়াতে ব্যর্থ হওয়া যে সব নাবিক মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তাদেরই আত্মা এখনো নৌকোসমেত মাঝ সাগরে পাড়ি জমায়। যদিও এ সকল ঘটনার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, তবুও অনেক পর্যটক ও স্থানীয় মানুষের দাবী তারা এগুলো চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করেছেন।

সুন্দরবন – ফটোগ্রাফারের মৃত্যু রহস্য

বাংলাদেশের ৫টি ভুতুড়ে স্থান এর তালিকায় সুন্দরবনকে দেখে অনেকেই হয়তো অবাক হচ্ছেন। তবে বিস্ময়কর হলেও সত্যি সুন্দরবনের কুমির ও বাঘের পাশাপাশি অন্য বিপদের কথাও শোনা যায়। কিন্তু কি সেই বিপদ তা স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারে না। বাংলাদেশ ও ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অবস্থিত এই সুন্দরবন হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। ইতিমধ্যে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে সুন্দরবন স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে নব্বই এর দশকে এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল যার কারনেই আজকের এই তালিকায় সুন্দরবনকে স্থান দিয়েছি আমরা। প্রকৃতিকে কাছ থেকে একনজর দেখতে সেখানে গিয়েছিল একটি দল। এ দলেরই একজন আরেকজনকে গহীন বনে তার একটা ছবি তুলে দিতে বলে। কিন্তু হতবাক হওয়ার মত বিষয় হচ্ছে যে- ছবিটি তুলতে গিয়ে লোকটি চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যায়। সেই লোকের এর পর কি হয়েছে তা নিয়ে মতবিরোধ আছে তবে কেউ কেউ বলেছেন এই ঘটনার দুদিন পর একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে লোকটির হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়। তোলা ছবিটি পরবর্তিতে ডেভেলপ করার পর দেখা যায় যে- যার ছবি তোলা হচ্ছে তার পেছনে সাদা রঙের আবছা নারীমূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। যদিও অনেকেই পুরো ঘটনাকে গুজব হিসেবে উড়িয় দিয়েছিলেন সেই সময়ে, কিন্তু ঘটনার পেছনে কি আছে তা কেউ বলতে পারেনি। ঐ ছবিটিকে অনেকেই ফটোশপের কারসাজি বলে অভিহিত করছেন, কিন্তু সেই আমলে অত ভাল কম্পিউটার ছিল না বাংলাদেশে আর ফটোশপ তো এসেছে আরও অনেক পরে। তবে এর পর আর এই ধরণের ঘটনা শোনা যায়নি কখনো।

গদ্রবঙ্গা – এক ভয়ংকর অপদেবতা

বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক অংশে সাঁওতাল নামক এক আদি বাসী গোষ্ঠী বসবাস করে। এই সব উপজাতিরা অনেক ধরণের দেব-দেবীর পুজা করে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এই সব দেব-দেবীর মধ্যে সব গুলো কিন্তু ভাল নয়। এর মধ্যে কিছু মাঝে কিছু আছে যারা অপদেবতা। এমনই এক ধরনের অপদেবতার নাম হচ্ছে “গদ্রবঙ্গা” , অনেক সাঁওতাল যার পুজো  করে থাকে।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top