ডেস্ক রিপোর্ট, Prabartan | আপডেট: ২২:৫০, ২৯-০৩-১৯
আদিম যুগের মানুষের পাহাড়ের গুহায় কিংবা বনে বাদারে বাস করতো। কিন্তু সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে মানুষ ঘর বাড়ি বানানো শিখল। এভাবে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আজ আমরা এই সুন্দর পৃথিবী পেঁয়েছি। এখন আমরা গুহার ভেতর কিংবা মাটির নিচে বসবাসের কথা ভাবতেও পারি না। অথচ খুব বেশি দূরে নয়, অস্ট্রেলিয়াতেই রয়েছে এমন একটি শহর যেখানে গোটা শহরটি গড়ে উঠেছে মাটির নিচে। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষের বসবাস শহরটিতে। এই মাটির নিচের শহর এর নাম হচ্ছে কুবার প্যাডি, যার অবস্থান অস্ট্রলিয়ার এক মরুভূমিতে।
কুবার প্যাডি এর অবস্থান
কুবার প্যাডি অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড থেকে ৮৪৬ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের মরুভূমিতে অবস্থিত ছোট একটি শহর। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এখন পর্যন্ত অনেক লুকানো শহরের সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু এই শহরটি হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র মাটির নিচের শহর যা এখনও মানুষের বসবাসের উপযোগী রয়েছে। অনেক মানুষ বসবাস করছে এখানে! বসতবাড়ি, হোটেল থেকে শুরু করে বিনোদনকেন্দ্র সবই আছে এখানে।
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে- মাটির নিচে কি করে এত মানুষ থাকতে পারে? হঠাৎ যদি মাটি ধ্বসে পরে বা কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়, তখন কি হবে? হ্যা প্রথম দিকে সেই সম্ভাবনা থাকলেও এখন আর নেই। শহরটি এমন সুন্দর ভাবে কাঠামো করা হয়েছে যে যেকনো প্রাকৃতিক দুর্যোগই আসুক না কেন, শহরের কোন ক্ষতি হবে না।
বাইরে থেকে শহরটি দেখলে চমকে যাবেন। চারিদিক জনমানব শূন্য। মাঝে মধ্যে দুই একটি স্থানে দেখা যাচ্ছে গুহা। সেই গুহাগুলো থেকে নেমে গেছে সুড়ঙ্গের মতো সিঁড়ি। সেই সিঁড়ি চলে গেছে অনেক গভীরে। সিঁড়ি ধরে নীচে নামলেই চমকে যাবেন। আদিম যুগের রুপকথার মতো নয় এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক বাসস্থান। রয়েছে উচ্চপ্রযুক্তির সরঞ্জাম, দামি হোটেল, সুইমিং পুল। মোটকথা একটি শহরে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকে প্রায় সবধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে শহরটিতে। কিন্তু তার সবকিছুই হচ্ছে মাটির নিচে।
তবে মাটির নিচের এই শহরটি আপনা আপনি গড়ে উঠেনি। ১৯১১ সালের আগে এই যায়গায় কেউ বাস করতো না। তখন বাসিন্দা বলতে ছিল মরুভূমির সাপ, বিষাক্ত পোকামাকড়, টিকটিকি আর এমু পাখি। এই জায়গাটার বিশেষত্ব প্রথম আবিষ্কার করে উইল হাচিসন নামের চৌদ্দ বছরের এক কিশোর।
কুবার প্যাডি এর ইতিহাস
তবে এই যায়গাটির রয়েছে আরও একটি পরিচয়। কুবার প্যাডি পৃথিবীর ওপাল রাজধানী নামেও খ্যাত। কারণ এখানে পাওয়া গেছে ওপাল নামক এক বহুমূল্য রত্নের খনি। ১৯১৬ সালের দিকে প্রথম “ওপাল” খনিজ পদার্থের খোঁজ পাওয়া যায় এখানে। তখন থেকেই স্থানটিতে জড়ো হতে থাকে খনি শ্রমিকেরা। ওপাল হচ্ছে একধরনের পানির মতো পদার্থ যা মাটির সঙ্গে মিশে থাকে। পৃথিবীর ৮০ ভাগ ওপালের জোগান আসে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার কুবার প্যাডি শহর থেকে।
প্রতিদিন কুবার প্যাডিতে ওপাল সংগ্রহের জন্য অনেক শ্রমিক আসতো। লোকালয় থেকে অনেক দূরে অবস্থিত হওয়ার কারণে প্রতিদিন এখানে এসে কাজ করা সম্ভব ছিল না। ধূলিঝড়ের উৎপাত তো রয়েছেই তার উপর রাতের বেলা তাপমাত্রা নেমে যেত একেবারে শূন্যের কোঠায়। রাতের বেলা প্রচন্ড শীত আর দিনের বেলায় দেখা যেত সম্পূর্ণ উল্টোটা। দিনের বেলায় এখানে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করত। তারপরও কাজ করতে হবে।
তাই দহন থেকে বাঁচার জন্য শ্রমিকরা মাটির নিচে ঘর বানানো শুরু করে। একজনের দেখাদেখি আরেকজন এভাবে দেখতে দেখতে মাটির নিচে গড়ে ওঠে পুরো একটি শহর। প্রথম দিকে অনেক অসুবিধা হতো। বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধা না থাকলেও সময়ের ব্যবধানে আস্তে আস্তে সেগুলোর ব্যবস্থা হয়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে উন্নত গড়ে ওঠে উন্নত একটি শহর। প্রথমে বাজার, তারপর মার্কেট, গির্জা, বিনোদন কেন্দ্র, ব্যাংক সহ দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই মাটির নিচের স্থাপন করা হয় এই শহরে।
এই শহরের সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হল- এখানে গাছপালা নেই বললেই চলে। সবুজ বলতে এখানে কিছু নেই শুধু আছে তৈলাক্ত বালি।
আরও বিস্তারিত পড়তে পারেন উইকিপিডিয়া থেকেঃ Coober Pedy
কুবার প্যাডির বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে কুবার প্যাডি শুধুমাত্র খনি শ্রমিকদের শহর নয়। এটি পর্যটন স্থান হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটক এই স্থানটি দেখতে আসেন। ঘুরে যান সম্পূর্ণ মাটির নিচে থাকা এক শহর থেকে।