খুলনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় পণ্য ছাড়ের নানা বাহার!

আওয়াল শেখ, Prabartan | আপডেট: ২০:০১, ২৯-০৩-১৯

খুলনা: খুলনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় (কেআইটিএফ) দেশি ও বিদেশি কোম্পানিগুলো নানা ধরনের পণ্যে বিশেষ ছাড় দিচ্ছে। মেলায় হরেক রকম পন্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে শতাধিক স্টল। নানামূখী হাকডাক ও প্যানা ফেষ্টুনে অফারের ছড়াছড়ি দিয়ে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে কৌশলের কমতি নেই বিক্রেতাদের।

শুক্রবার (২৯মার্চ) বিকেলে খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলায় ছিল উপড়ে পড়া ভিড়।

খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি মাস ব্যাপি এ মেলার আয়োজন করেছে। প্রতিদিনই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণামুখোর থাকে মেলা প্রাঙ্গণ। তবে দর্শনার্থীদের তুলনায় ক্রেতা কম। তাই বিকিকিনে জমাতে বিক্রেতারা দিচ্ছেন নগদ মূল্য বা ৭০ শতাংশ প্রর্যন্ত ছাড়।

অফারের ছড়াছড়ি সবথেকে বেশি রয়েছে ফ্যাশান হাউজগুলোতে। মেলা উপলক্ষে দেশি তাঁতের তৈরি এক সেট থ্রি-পিস ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যদিকে, দুই সেট থ্রি-পিস বিক্রি করা হচ্ছে মাত্র ৫০০ টাকায়।

শুধু ফ্যাশান হাউজই নয়, মেলা উপলক্ষে বিশেষ ছাড় দিচ্ছে এমব্রয়ডারির পণ্যেও। সব ধরনের এমব্রয়ডারি কাজ করা এক সেট থ্রি-পিস মাত্র ৪৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যদিকে, তিন সেট থ্রি-পিস বিক্রি করা হচ্ছে মাত্র ১২০০ টাকায়।

বানিজ্য মেলার প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই ডানদিকে দেখা মিলবে বংবেরং টেক্সটাইল নামক স্টলের। এখানে রয়েছে হরেক রকমের লেডিস পোশাক। দেশ বিদেশে শাড়ী, কামিস, সেলোয়ার, ওড়না, ত্রি-পিস, টু-পিসসহ নারী ও শিশু পোশাকের কমতি নেই এ স্টলে। পছন্দের পোশাকে আছে আবার বিশেষ ছাড়।

বংবেরং টেক্সটাইল নামক স্টলের এক কর্মকর্তা প্রবর্তনকে বলেন, মেলা উপলক্ষে আমরা ক্রেতাদের হাতে মাত্র ৩০০ টাকায় থ্রি-পিস সেট তুলে দিচ্ছি। সেক্ষেত্রে দুইসেট থ্রিপিস কিনলে মাত্র ৫০০ টাকা দাম ধরা হচ্ছে। এছাড়া নানা পদের থ্রি-পিচের জন্য বিশেষ অফার রয়েছে। এছাড়াও তাঁতি জামদানি ৮৫০ টাকায় শুধু মাত্র এখানে পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।

আনন্দচিত্তে অনেকগুলো পণ্য নিয়ে স্টলে দাঁড়িয়ে আছেন ক্রেতা সাদিয় ইসলাম। কথা বলে জানা গেল,  ২৪০০ টাকায় ৮ পিস কেনায় আনন্দিত তিনি। কারন মেলার বাইরে থেকে কিনতে গেলে এই ধরনের পণ্যের দাম পড়ত ৫/৬ হাজার টাকা। এছাড়াও দাম কসাকসির কোন ঝামেলা না থাকায় পন্য কিনতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন বলে জানান।

মেলার প্রধান ফটকের বাম পাশে কড়াকড়ি ছাড়ের প্যানা নিয়ে বসেছে ফ্যালাক ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি স্টল। এ স্টলের প্রতিটি পন্যের মূল্য ১৩০ টাকা। ছোট, বড়, মাঝারী নানান আকৃতির গৃহস্থলি, খেলনা ও সাজগোজের পন্যে ভরপুর স্টলটি। দাম কসাকসির ঝামেলা না থাকায় পছন্দের মালামাল তাৎক্ষনিক কিনতে দেরি করছেন না ক্রেতারা।

সুমাইয়া ইসলাম নামের এক ক্রেতা প্রবর্তনকে বলেন, আমার ছোট ভাইয়ের জন্য এখান থেকে একটা খেলনা কিনেছি। বাইরে এটার দাম প্রায় ২০০ টাকার মত। এখানে পছন্দ হওয়া মাত্রই কিনে নিয়েছি।

এছাড়াও মেলায় পাওয়া যাবে ২০০ টাকায় এক জোড়া চামড়ার জুতা, ১৫০ টাকায় স্যান্ডেল, ১৯৯ টাকায় সার্ট, ৯৯ টাকায় টি-শার্ট, ৫৫০ টাকার চায়না ব্যাগ ৩৫০ টাকায়, আকর্ষনীয় নকশার ওড়না ১৫০ টাকায়, সিল্কের ওড়না ১০০ টাকায়, লেডিস ব্যাগ, মানি ব্যাগ, পার্স ব্যাগ ও সাইড ব্যাগ ১৫০ টাকায়, নানা ধরনের কানের দুল, হাতের চুরি, নাকের ফুল, চুলের ব্যান্ড (কাকড়া), চুলের কাটা, মাথার টুপি, চুলের ক্লিপ, নেইল পলিশ, আই লাইনার, আই শ্যাডো, লিপলাইনার, লিপিস্টিক, মাসকারা, মুলতানি মাটি, আইব্রু, ব্রেসলেট, পুথির মালা, চুলের গার্ডার, ফিঙ্গার রিং, বাহারী চুরি, চেইন লকেট, চাবির রিং মাত্র ৩০ টাকায়।

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ গৃহস্থালি পণ্যের প্রতি। প্লাস্টিকের তৈরি গৃহস্থালি পণ্যের পাশাপাশি রয়েছে প্রেসার কুকার, জুস মেকার, জুস ব্লেন্ডার, ওভেন, রাইস কুকারসহ নানা ধরনের তৈজসপত্র ও ইলেক্ট্রনিক পণ্য। এছাড়া ব্লেজার, ঘর সাজানোর বিভিন্ন উপকরণ, খাদ্যপণ্য ও শিশুদের খেলনা সামগ্রী রয়েছে ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে।

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রান্নার কাজ সহজ ও সুন্দরভাবে পরিবেশনের জন্য বাণিজ্য মেলায় মানানসই সব গৃহস্থালি পণ্যের পসরা সাজিয়েছে দেশি-বিদেশি নানা প্রতিষ্ঠান। সৌখিন জিনিসপত্রের পাশাপাশি নিত্য ব্যবহারের তৈজসপত্রও রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের স্টলে। কোম্পানি এবং পণ্যভেদে দেয়া হচ্ছে বিশেষ অফার, ফ্রিসহ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ মূল্যছাড়।

থালা বাসন, গ্লাস, ট্রে, চাঁকনি, চামচসহ হরেক রকমের গৃহস্থলির আবাসপত্রের কমতি নেই ইমরান মেলামাইন নামক একটি স্টলে। পন্যভেদে ছাড় পাওয়া যাবে এ স্টলে। ক্রেতারা তার পছন্দমতো পণ্য পরে পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন বলে জানাগেছে এ স্টল থেকে।

মেলায় তৈজসপত্র বিক্রি করতে এসেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান, সেখানে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির ইটালিয়ান চুলা, ২৮ লিটারের মাইক্রোয়েভ ওভেন, মাল্টি কুকার, কারি কুকার, রাইস কুকার, স্যান্ডউইচ মেকার, পানির ফিল্টার, রান্নার হাঁড়ি, ব্লেন্ডার ও রুটি মেকার। নারী ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন এসব প্রতিষ্ঠানের বিশেষ অফারে।

এদিকে পোশাক হিসেবে তরুণ পছন্দের শীর্ষে ব্লেজার। স্টাইলিশ আউটফিট হিসেবে ব্লেজারের কদরও রয়েছে বেশ। সব ধরনের ক্রেতা-দর্শনার্থীর কথা মাথায় রেখে মেলায় বাহারি স্যুট, কোট-ব্লেজার এনেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

নানা অফারে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ৬ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন রঙ ও সাইজের ব্লেজার। এছাড়া ১০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ মূল্যছাড়ও দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

তবে মেলার পন্যের দাম নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগের কথাই শোনা গেলো বেশি। মেলার শেষের দিকে মূল্যছাড়ও বেশি থাকবে বলে আশা তাদের।

সাইফুর রহমান নামক এক ক্রেতা প্রবর্তনকে বলেন, এখন বিভিন্ন পন্যে যে পরিমানে মূল্য রয়েছে কিছুদিন পরে আরো কমে যাবে। তাই দামি কোন জিনিস এখন কিনতে আমি রাজি নয়।

এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, মেলায় ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীর সংখ্যাই বেশি। তাদের আশা, মেলার শেষ দিকে এসে বাড়বে বেচাকেনা।

হানিফ হোসেন নামক একটি স্টলের কর্মকর্টা বলেন, মেলায় ক্রেতাদের সমাগম ঘটছে প্রচুর। তবে অধিকাংশই না কিনে শুধুই দেখছেন। অনেকে বলছেন, শেষের দিকে যখন বেশি ছাড় দেবেন তখন এসে কিনবো।

তাহলে আপনারা কি মেলার শেষের দিকে মূল্য ছাড় দিয়ে থাকেন? এমন প্রশের জবাবে তিনি বললেন, না। আমাদের পণ্যে মেলার শেষের দিকে ছাড় দেওয়ার তেমন সুযোগ নেই। ক্রেতারা নিজ থেকেই উল্টো ছাড় দেয়ার অফার দিচ্ছেন আমাদের। তাই বাধ্য হয়ে আমাদের নানান কৌশলে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ রাত ৮টার দিকে খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে মাসব্যাপী মেলার আয়োজন করছে খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। আগামী ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ) মেলা সমাপ্ত করা হবে।

মেলা প্রাঙ্গণে শিশুদের জন্য শিশুজোন, পুরুষ এবং নারীদের জন্য পৃথক নামাজের স্থান, অজুখানা, টয়লেট ও ফ্রি ওয়াই-ফাই জোনের ব্যবস্থাসহ সম্পূর্ণ মেলা প্রাঙ্গণ সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top