মোংলা ইপিজেডে এক দশকে রপ্তানি বেড়েছে ১৬ গুণ

ডেস্ক রিপোর্ট, Prabartan | আপডেট: ১৯:৪৭, ২৪-০৩-১৯

নানা সমস্যার মধ্যেও মোংলার রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) গত এক দশকে ১৬ গুণ রপ্তানি বৃদ্ধি হয়েছে। বিনিয়োগ বেড়েছে ১১ গুণ। আর কর্মসংস্থান হয়েছে সাড়ে চার হাজার মানুষের। এ ইপিজেডের বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বিদ্যমান সমস্যাগুলো দূর হলে রপ্তানি আরও বহু গুণ বাড়বে। পাশাপাশি এটি হয়ে উঠতে পারে দেশের অন্যতম শীর্ষ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যোগাযোগব্যবস্থার ঘাটতি, গ্যাস ও মোংলা বন্দরের উন্নত সুযোগ-সুবিধার অভাব ও বিমানবন্দর না থাকা এ ইপিজেডের অন্যতম সমস্যা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে মোংলা বন্দরের পাশে ২৮৯ একর জমির ওপর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলটি গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে এ ইপিজেডে ১৯২টি শিল্প প্লট রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৫টি শিল্প প্লট উদ্যোক্তাদের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া শিল্পকারখানার মধ্য ৩০টি বর্তমানে চালু আছে। ১৩টি কারখানা চালু হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে। চালু কারখানাগুলোর মধ্যে ১৮টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান, ৩টি যৌথ মালিকানা এবং ৯টি দেশীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, ২০০১ সালে একটি সি ফুড কারখানা স্থাপনের মধ্য দিয়ে ইপিজেডটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। চালু হওয়ার প্রথম বছরে কর্মসংস্থান হয় ২০ জনের। এর পরের বছর কর্মসংস্থানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮০। এভাবে ধীরে ধীরে শিল্পকারখানার সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থানের পরিমাণও বাড়তে থাকে। তবে মূলত ২০১০ সাল থেকে ও পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর পর ধারাবাহিকভাবে ইপিজেডটিতে শিল্পকারখানা স্থাপনের হারও বেড়ে যায়। তাতে বর্তমানে মোংলা ইপিজেডে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে মোংলা ইপিজেডে সোয়েটার, রাবার, পরচুলা, টাওয়েল, সুপারি, পেপার এক্সেসরিজ, পলি ব্যাগ ও প্রিন্টিং জুট, লাগেজ ব্যাগ ও ট্রাভেল ব্যাগ, তৈরি পোশাক, স্টিল টিউব, বলপেন ও টুথব্রাশ তৈরির দেশি-বিদেশি কারখানা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চালু হওয়ার পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত মোংলা ইপিজেডে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৫১০ কোটি টাকা। এতে গত ১০ বছরে বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ১১ গুণ। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এ ইপিজেড থেকে ২৯৫ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়। ২০১৮ সাল শেষে রপ্তানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭০৫ কোটি টাকায়। তাতে ১০ বছরে রপ্তানি বেড়েছে ১৬ গুণ। ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছে, সব কারখানায় উৎপাদন শুরু হলে প্রায় ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান ঘটবে।

জানতে চাইলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক ব্যবস্থাপক মো. সোহাগ বলেন, মোংলা ইপিজেড স্থাপন করা হয়েছিল মোংলা বন্দরকে গতিশীল করতে। বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করেই এ ইপিজেডটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কয়েক বছর ধরে এ ইপিজেডে ব্যাপক শিল্পায়ন হচ্ছে। সেখানে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি হচ্ছে মোংলা বন্দর দিয়ে।

উদ্যোক্তারা বলেন, মোংলা ইপিজেডে গ্যাস নেই, সুন্দরবন কাছে হওয়ায় রয়েছে পরিবেশগত ঝুঁকি, বন্দর সুবিধার দিক থেকে চট্টগ্রামের চেয়ে এখনো পিছিয়ে রয়েছে মোংলা বন্দর। নেই বিমানবন্দর সুবিধাও। তাই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সড়ক পথে যাতায়াত করতে হয়। তাতে সময় লাগে বেশি। এ ছাড়া শহর থেকে দূরে হওয়ায় এ ইপিজেডে চাকরিজীবী, বিনিয়োগকারী ও তাঁদের পরিবার নাগরিক সুবিধাদি থেকেও বঞ্চিত হয়।

জানতে চাইলে ইপিজেডের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াইসিএলের ব্যবস্থাপক মোস্তফা কামাল বলেন, রাজধানী ঢাকা থেকে মোংলা বন্দরের দূরত্ব খুব বেশি না হলেও যাতায়াতের সহজ কোনো ব্যবস্থা নেই। তাতে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ ও যাতায়াতে বাড়তি সময় লাগে। তবে পদ্মা সেতু চালু হলে যোগাযোগব্যবস্থা অনেক সহজ হয়ে যাবে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।

ইপিজেডের এসজি অয়েল রিফাইনারির বিপণন নির্বাহী আবু হোসাইন শাহীন বলেন, মোংলা বন্দরে গ্যাসের কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ শিল্পকারখানার জন্য গ্যাসের কোনো বিকল্প নেই। ২০০৭ সালে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এ ছাড়া নাব্যতা–সংকটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে মোংলা বন্দরে জাহাজ আগমন কম। তাতে কনটেইনার পরিবহনে খরচ বেশি পড়ে।

মোংলা ইপিজেডে বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত একাধিক শ্রমিক বলেন, মোংলা শহর থেকে ইপিজেডের দূরত্ব প্রায় ৪ কিলোমিটার। তাতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নানা সমস্যায় পড়তে হয় শ্রমিকদের। এ ছাড়া নাগরিক সুযোগ-সুবিধার দিক থেকেও পিছিয়ে রয়েছে মোংলা ইপিজেড।

এদিকে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক নাজমা বিনতে আলমগীর বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, আদমজী ও কর্ণফুলী ইপিজেডে বর্তমানে কোনো প্লট খালি নেই। তাই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মোংলা ইপিজেডে বিনিয়োগের আগ্রহ বেড়েছে। মোংলা বন্দরের উন্নয়ন, পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস–সংযোগ, বিমানবন্দরের সুবিধাসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান করা গেলে এ ইপিজেডটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইপিজেড হয়ে উঠবে। পাশাপাশি পদ্মা সেতু চালু হলে এ ইপিজেডের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থারও উন্নতি হবে। তাতে এ অঞ্চলে শিল্পকারখানার সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে, এতে কর্মসংস্থানও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।

নাজমা বিনতে আলমগীর আরও বলেন, মোংলা ইপিজেডে টয়োটা গাড়ির হিটিং প্যাড, ভিআইপি লাগেজ ব্যাগ, নর্থ আমেরিকার টাওয়েল, ফ্যাশন উইগ, পাটজাত পণ্য, সুপারি পণ্য, মার্বেল পাথর সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদিত হয়। এসব পণ্য ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেদারল্যান্ডস, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top