ডেস্ক রিপোর্ট : দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গত বছরের ১৮ মার্চ। রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যাওয়া ওই পুরুষ রোগীর বয়স ছিল ৭০ বছর। করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে আসা পরিবারের এক সদস্যের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছিলেন তিনি। জানা তথ্য মতে, দেশে করোনাভাইরাসে কারো মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার।
গত এক বছরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে মারা গেছে মোট আট হাজার ৬০৮ জন। এর মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ১১ জন। আর ২৪ ঘণ্টার হিসাবে গত বছরের ৩০ জুন সবচেয়ে বেশি ৬৪ জনের মৃত্যু হয়। মাসের হিসাবে দেশে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু ঘটে গত জুন-জুলাইয়ে এক হাজার ২৩৮ জন। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় জুলাই-আগস্ট মাসে এক হাজার ১৫৯ জন। প্রথম মাসে অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিলে মারা যায় ৮৪ জন।
তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, দেশে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বা প্রায় ৮১ শতাংশের বয়স ছিল ৫১ বছরের ওপরে। আর ষাটোর্ধ্ব ছিলেন ৫৫.৮২ শতাংশ (চার হাজার ৮০৫ জন)। সবচেয়ে কম মৃত্যু ঘটে ১০ বছরের নিচের বয়সী শিশুর, ৩৭ জন বা .৪৩ শতাংশ।এদিকে বয়স্কদের বেশি মৃত্যু সম্পর্কে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, ‘সব দেশেই সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে বয়স্কদের।
বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক কম থাকে। একাধিক রোগের জটিলতাও থাকে। ফলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁদের মধ্যে আগের জটিলতাগুলো বেড়ে যায় এবং নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে। আমাদের দেশেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।’স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘অনেকেই বয়স্কদের ঘরে রেখে নিজেরা বাইরে গিয়ে অসতর্ক থাকছে এবং নিজেদের শরীরে ভাইরাস বহন করে ঘরে নিয়ে আসছে।
আর তা থেকে বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই বয়স্কদের নিজেদের পাশাপাশি স্বজনদেরও সতর্ক থাকতে হবে। এ জন্যই আমরা টিকার ক্ষেত্রে বয়স্কদের অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছি। আবার টিকা দেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বয়স্ক যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে আগে থেকেই ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতা বেশি ছিল বলে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে।
আমাদের ডেথ রিভিউ চলছে। পুরো কাজ শেষ হওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যাবে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসতন্ত্রের রোগ, জটিল হৃদরোগ, কিডনির রোগ, এমনকি ক্যান্সারও ছিল অনেকের।’আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীরও বলেন, মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগেরই ডায়াবেটিস যেন একটি কমন রোগ ছিল। তাই বলব, যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁরা যেন অধিকতর সতর্ক থাকেন।
সার্বিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক বছরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যারা মারা গেছে, তাদের মধ্যে ১১-২০ বছরের ৬৫ জন বা .৭৬ শতাংশ, ২১-৩০ বছরের ১৭৩ জন বা ২.০১ শতাংশ, ৩১-৪০ বছরের ৪২৬ জন বা ৪.৯৫ শতাংশ, ৪১-৫০ বছরের ৯৭২ জন বা ১১.২৯ শতাংশ ও ৫১-৬০ বছরের দুই হাজার ১৩০ জন বা ২৪.৭৪ শতাংশ। এ ছাড়া মোট মৃতদের মধ্যে ৭৫.৬২ শতাংশ বা ছয় হাজার ৫০৯ জন পুরুষ ও ২৪.৩৮ শতাংশ বা দুই হাজার ৯৯ জন নারী রয়েছেন।
মৃতদের মধ্যে সর্বোচ্চ চার হাজার ৮৩২ জন বা ৫৬.১৩ শতাংশ ঢাকার, এক হাজার ৫৮৬ জন বা ১৮.৪২ শতাংশ চট্টগ্রামের, ৪৮৪ জন বা ৫.৬২ শতাংশ রাজশাহীর, ৫৬৭ জন বা ৬.৫৯ শতাংশ খুলনার, ২৬৩ জন বা ৩.০৬ শতাংশ বরিশালের, ৩১৩ জন বা ৩.৬৪ শতাংশ সিলেটের, ৩৬৬ জন বা ৪.২৫ শতাংশ রংপুরের এবং সর্বনিম্ন ১৯৭ জন বা ২.২৯ শতাংশ ময়মনসিংহ বিভাগের।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করোনা শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৮৬৫ জন। সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত পাঁচ লাখ ৬২ হাজার ৭৫২ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে পাঁচ লাখ ১৫ হাজার ৯৮৯ জন এবং মারা গেছে আট হাজার ৬০৮ জন।