মায়ের কোল থেকে চুরি হওয়া শিশু ফিরল লাশ হয়ে

ডেস্ক রিপোর্ট, prabartan | প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ১৭- ০৩-১৯

সাতদিনের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির পর অবশেষে লাশ হয়ে মায়ের কোলে ফিরেছে আড়াই মাস বয়সী আব্দুল্লাহ।

সাতদিন আগে সোমবার (১১ মার্চ) ফজরের সময় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ঘুমন্ত মা-বাবার কোল থেকে চুরি করে নেওয়া হয় শিশুটিকে। এরপর চাওয়া হয় ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ। এ সাতদিন কোনোভাবেই মনকে বোঝাতে পারছিলেন না শিশুটির বাবা সোহাগ হাওলাদার ও মা রেশমা আক্তার। ছেলেকে ফিরে পেতে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
অবশেষে রোববার (১৭ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিশারিঘাটা এলাকার আব্দুর রহমান শিকারীর ঘেরের টয়েলেটের ট্যাংকের ভেতর থেকে তাদের ছেলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এর আগে শনিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর একটি টিম শিশু চুরির মূলহোতা হৃদয় চাপরাশিকে আটক করে। হৃদয় মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশান বাড়িয়া এলাকার মোয়াজ্জেম চাপরাশির ছেলে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার অভিযানে মোরেলগঞ্জ সাকের্লের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রিয়াজুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেজবাহ উদ্দিন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আজিজুল ইসলাম ও বাগেরহাট জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ওসি মো. রেজাউল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

আব্দুল্লাহর বাবা সোহাগ হাওলাদার বলেন, আমার মতো আর কেউ যেন এমন পুত্রহারা না হয়।

এদিকে নিজের সন্তানের মরদেহ উদ্ধারের খবর শোনার পর থেকে অচেতন অবস্থায় রয়েছে আব্দুল্লাহর মা রেশমা বেগম।

মোরেলগঞ্জ সাকের্লের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রিয়াজুল ইসলাম জানান, শিশুটি চুরি হওয়ার খবরের পর থেকে পুলিশের একাধিক টিম অভিযান চালিয়ে মোট ছয়জনকে আটক করেছে। এর মধ্যে শিশু চুরির মূলহোতা হৃদয় চাপরাশির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হৃদয়সহ আটক সবাইকে আদালতে পাঠানো হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িত বাকিদেরও আটক করার চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ, সোমবার (১১ মার্চ) ফজরের ঘন্টাখানেক আগে মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিশারীঘাটা গ্রামে নিজেদের ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন সোহাগ ও রেশমা। সঙ্গে ছিল ৭৫ দিন বয়সী ছেলে আব্দুল্লাহ আর ১৯ মাস বয়সী  বড় মেয়ে সুমাইয়া। আব্দুল্লাহ কিছুটা অসুস্থ ছিল। রাত ৩টার দিকে সে কেঁদে উঠলে সোহাগ ও রেশমা তাকে ওষুধ খাইয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েন। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তারা উঠে দেখেন আব্দুল্লাহ বিছানায় নেই। ঘরের দরজা-জানালা খোলা। সেই সঙ্গে সোহাগের মোবাইল ফোন ও চার্জারও নেই। বাড়ির সব জায়গায় খুঁজেও ছেলেকে না পেয়ে থানায় খবর দেন তারা। দুপুর থেকে সোহাগের সেই মোবাইল ফোন থেকে কল দিয়ে দিয়ে তাদের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়।

পরে মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) গভীর রাতে হৃদয়ের বাড়ি থেকে সোহাগের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হৃদয়ের মা নাছিমা বেগম (৫২), বোন আবির আক্তার (১৪), হৃদয়ের চাচাতো ভাই সোবাহান চাপরাশির ছেলে মহিউদ্দিন চাপরাশি (৩৫), রশিদ চাপরাশির ছেলে ফায়জুল চাপরাশি (২৫) ও রুবেলকে (৩০) আটক করে পুলিশ। শনিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে আটক করা হয় হৃদয়কে।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top