ডেস্ক রিপোর্ট : ইউক্রেনে রুশ হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আনা একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে রাশিয়া। পরাশক্তি এই দেশটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং তাদেরই বিরুদ্ধে আনা এই নিন্দা প্রস্তাব আটকাতে মস্কোর ভেটো ক্ষমতার প্রয়োগ অনেকটা প্রত্যাশিতই ছিল। শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইউক্রেনে রুশ হামলার নিন্দা জানাতে খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে উত্থাপিত প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয় ১১ সদস্য দেশ। তবে প্রত্যাশিত ভাবেই বিপক্ষে ভোট দেয় রাশিয়া। অন্যদিকে চীন, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে ভোটদানে বিরত ছিল।
অবশ্য প্রস্তাব উত্থাপনের আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল যে, এ ধরনের প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে পাস হবে না কারণ সংস্থাটির স্থায়ী সদস্যদেশ হিসেবে রাশিয়া ভেটো ক্ষমতার অধিকারী।প্রস্তাবটি নিয়ে ভোটাভুটির আগে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড দাবি করেন, ইউক্রেন বর্তমানে যে ধরনের আগ্রাসন মোকাবিলা করছে তা প্রতিহত করার জন্যই নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন : ইউক্রেনের সমর্থনে তাদের পতাকার রঙে রঙিন জার্মানির স্টেডিয়াম
রাশিয়ার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের পর তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বেপরোয়া, দায়িত্বজ্ঞানহীন একটি স্থায়ী সদস্য দেশ তার প্রতিবেশীকে আক্রমণ করার এবং জাতিসংঘ ও আমাদের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার ক্ষমতার অপব্যবহার করলেও আমরা ইউক্রেন ও এর জনগণের জন্য ঐকবদ্ধ।’উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এ নিয়ে তিনবার জরুরি বৈঠকে বসেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।
আবার ঘটনাক্রমে চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্বপালন করছে রাশিয়া।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই প্রথম ইউরোপের প্রথম দেশ হিসাবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রপথে ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় হামলা শুরু করেছে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টির মতো পড়েছে।
এছাড়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চেরনিহিভ, খারকিভ এবং লুহানস্ক সীমান্ত পেরিয়ে হাজার হাজার রুশ সৈন্য স্থলপথে দেশটিতে ঢুকে পড়েছে।সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের রাস্তায়ও। শনিবার এক বিবৃতিতে কিয়েভের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই মুহূর্তে আমাদের শহরের রাস্তায় রাস্তায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। বিবৃতিতে শহরের বাসিন্দাদের বাড়ির জানালার কাছে বা ব্যালকনিতে না যেতে সতর্ক করা হয়েছে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, রাশিয়ার বাহিনী রাজধানী কিয়েভ পুরোপুরি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এরপর তারা দেশটির নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করবে।রাজধানী কিয়েভের মাইডান স্কয়ারের কাছে একটি বড় ধরণের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং শহরের ত্রয়েশ্চিনা এলাকায় একাধিক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কিয়েভের ওপর গোলা হামলার শব্দ এতোটাই তীব্র ছিল যে শহরের কেন্দ্র থেকে কয়েক মাইল দূর পর্যন্ত শব্দ পেয়েছেন তারা।কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলছে, শহরের চিড়িয়াখানার কাছে এবং শুলিয়াভকা শহরের আশেপাশে ৫০টিরও বেশি বিস্ফোরণ এবং ভারী মেশিনগানে গোলাগুলি হয়েছে।